চট্টগ্রামে দুর্ভোগের শেষ নেই
চলতি মাসের শুরুতে টানা বর্ষণ ও প্রবল পানিতে ভেসে যায় চট্টগ্রাম ও আশপাশের জেলাগুলো। দক্ষিণ চট্টগ্রামের তিনটি উপজেলা তলিয়ে গেছে। ভোগান্তির মুখে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ১০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। তবে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে রোববার প্রথম পরীক্ষা দিতে হয়েছে তাদের। ফলস্বরূপ, অনেকেই অনুপস্থিত ছিলেন, কমপক্ষে ২৯টি কেন্দ্রে বৃষ্টি ও বন্যার কারণে বিলম্বিত হয়েছে। সময়মতো কেন্দ্রে পৌঁছাতে না পেরে কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রার্থীরা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় চট্টগ্রাম যেমন বদলাচ্ছে না, তেমনি দুর্ভোগ নগরবাসীর। শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা।
নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইন্স স্কুল কেন্দ্রের সামনে সোহেল রানা নামে এক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক বলছিলেন, ‘দেশ তথ্য প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়েছে, কিন্তু আবেদন কোথায়? দুর্যোগের আভাস কি আগে থেকে জানা যায় না? ১০ দিন দেরি, একটু দেরি হলে কী হবে? এমন বৃষ্টি আর বন্যার পর কেন আমার ছেলে পরীক্ষা দেবে বুঝতে পারছি না! আশপাশ ছেড়ে দিলাম। প্রধান সড়কেও পানি। এভাবে পরীক্ষা অর্থহীন। কিন্তু আমরা জিম্মি! চট্টগ্রামের সেবা সংস্থাগুলো জাগবে না, ভোগান্তি হবে না! এ অবস্থায় বোর্ড আগে থেকে ব্যবস্থা নিলে পরীক্ষার্থীদের ভোগান্তি কিছুটা হলেও লাঘব হতো।
শনিবার রাত থেকে চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। টানা বৃষ্টিতে গতকাল সকাল থেকে নগরীর অধিকাংশ নিচু এলাকা তলিয়ে গেছে। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ সুমন সাহা জানান, সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১১৫ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। টানা বর্ষণে ষোলশহর এলাকায় পাহাড় ধসে বাবা ও এক মেয়ের মৃত্যু হয়েছে।
এক রাতের বৃষ্টির পর আবার বন্যা
এক রাতের বৃষ্টিতে আবারও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর অধিকাংশ এলাকায়। নগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, চকবাজার, ছোটপোল, বাদুরতলা, শুলকবাহার, ২নং এলাকা, খতিবার হাট, মোহাম্মদপুর, শমসেরপাড়া, ফরিদারপাড়া, পাঠাইনাগোদা, মুন্সিপুকুর পাড়ের অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে। এসব রাস্তার কোনোটি হাঁটু গভীর, কোনোটি কোমর গভীর। ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। মানুষের কষ্টের শেষ ছিল না। শুধু শহর নয়, আশপাশের এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাত হয়।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ উজ্জল পাল জানান, চট্টগ্রাম বিভাগের বেশির ভাগ এলাকায় আরও দুই থেকে তিন দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময় ভূমিধসের আশঙ্কা থাকে। চট্টগ্রাম নদীবন্দরকে ১ নম্বর নৌ সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পরীক্ষার্থীদের
এইচএসসি পরীক্ষার্থী চট্টগ্রামের স্ট্রাথান মাঠ এলাকার বাসিন্দা সুজয় চৌধুরীর কেন্দ্র ছিল চকবাজারে। রোববার সকাল ৮টায় বের হয়ে ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করেও গাড়ি পাননি। আমরা বাধ্য হয়ে হেঁটে এবং রিকশায় কোমর গভীরে কেন্দ্রে পৌঁছানোর জন্য, পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। তিনি কান্নায় ফেটে পড়লেন। পরে এ অবস্থায় পরীক্ষায় বসেন। নগরীর বহদ্দারহাটের প্রার্থীরা। লিমন বলেন, সকাল থেকে ঘরের নিচে হাঁটু পানি। রাস্তায় অবরুদ্ধ গাড়ি। আধা ঘণ্টার জার্নি দুই ঘণ্টায় চলে এলো। এভাবে আসলে পরীক্ষা দেওয়া যায় না।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবার ১১৩টি কেন্দ্রে ২৭৯টি কলেজের ১ লাখ ২ হাজার ৪৬৮ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে। বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ বলেন, ‘বৃষ্টির পূর্বাভাস পেয়েছি। তবে বৃষ্টির পর জলাবদ্ধতা অনুভূত হয়। এর জন্য দায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো। তিনি আরও বলেন, অবিরাম বৃষ্টি বুঝে সব কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হয়েছে। প্রথম দিনে ৯১ হাজার ৯৬৩ জন পরীক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন, ৪৪৫ পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন, যা অন্যান্য বোর্ডের তুলনায় অনেক কম এবং স্বাভাবিক ঘটনা। এমনটা নয় যে তারা পারেননি। বৃষ্টি বা জলাবদ্ধতার কারণে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা।তা ছাড়া বন্যা হলে বোর্ডের করণীয় কী?
এদিকে শনিবার রাতে নগরীর সদরঘাট থানার পোস্ট অফিস লেনে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন এইচএসসি পরীক্ষার্থী রিমঝিম দাস গুপ্তা। সদরঘাট থানার এসআই আক্তার হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার কলেজ থেকে আসার সময় রিমঝিম তার প্রবেশপত্র হারিয়ে ফেলে। পরীক্ষায় অংশ নিতে না পেরে হতাশা থেকে সে আত্মহত্যা করেছে বলে পরিবার জানিয়েছে।
স্থগিত করা হয়েছে ছাবির ২২টি সেকশনের চূড়ান্ত পরীক্ষা
টানা বৃষ্টির কারণে গতকাল সকাল থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি)গামী বাস ও শাটল ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। দুর্ভোগ এড়াতে এদিন ২২টি বিভাগের ২৪টি কোর্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত করে প্রশাসন। উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সারোয়ার পারভেজ জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হবে।
পরিবহণ বিভাগ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বৃষ্টির কারণে শহরের বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা ও তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গামী বাসগুলো নন্দীরহাটে আটকা পড়ে।