রাজনীতি

সাঈদীর মৃত্যুতে শোক, কী বার্তা দিচ্ছে বিএনপি? অন্যদের বেলায় ছিল নীরব

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অন্য আসামিদের বিষয়ে নীরব থাকলেও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে বিএনপি। জাতীয় নির্বাচনের আগে জামায়াতে ইসলামীকে ‘খুশি’ করতে নাকি ‘আন্দোলনে ব্যবহার করতে’ বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব এ পথে হাঁটলেন, তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।

বিএনপি শোক প্রকাশের কারণ ব্যাখ্যা করেনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নেতা জানান, রাজনৈতিক কারণ ছাড়াও সাঈদীর প্রতি বিএনপির সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের মনোভাবের কারণে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। তাই বিএনপির শোক বার্তায় সাইদীর দলীয় পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি। ‘জামায়াত’ শব্দটিও নেই। জামায়াত নেতাদের মতে, বিএনপি সৌজন্য দেখিয়েছে। রাজনীতির সঙ্গে কোনো যোগসূত্র নেই।

শোক পত্রে স্বাক্ষরকারী বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা মনে করি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিচারের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান সাক্ষী ছিলেন সুখরঞ্জন বালী। জানাজায় এসে বলেন, সাঈদী তার ভাই হত্যায় জড়িত ছিলেন না।এর মাধ্যমে আবারো প্রমাণিত হলো সাঈদী ন্যায়বিচার পাননি।কারণ তিনি জনসাধারণের চোখে নির্দোষ, লাখ লাখ মানুষ এসেছে। সরকারের সকল বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও যা একজন গণবিরোধী ব্যক্তির ক্ষেত্রে ঘটতে পারে না।তাই সাঈদীর জন্য শোক প্রকাশ করেছে বিএনপি।

বিএনপি নেতাদের মন্তব্য, শোকের সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। রুহুল কবির রিজভী বলেন, “বিএনপি সাঈদীকে একজন ইসলামিক স্কলার হিসেবে সম্মানিত করেছে। বক্তব্যে জামায়াত শব্দের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি রাজনীতির বিষয় নয়।

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অন্য আসামিদের ব্যাপারে প্রায় সব পক্ষই নীরব ছিল। তবে চরমোনাই পীর মুফতি রেজাউল করিম, হেফাজত ইসলামের আমির মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীসহ অধিকাংশ ধর্মীয় দলের নেতারা সাঈদীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন। বিএনপির সঙ্গে একযোগে আন্দোলনরত দলগুলো এবং বিলুপ্ত জোটের সদস্যরাও শোক প্রকাশ করেছেন।

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাঈদীর মতো যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জিয়াউর রহমান সরকারের মন্ত্রী আবদুল আলিম ২০১৪ সালের ৩১ আগস্ট কারাগারে মারা যান। চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত এই নেতার মৃত্যুতে দলটি শোক পালন করেনি। বিএনপির মনোনয়ন। ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর বিএনপির তৎকালীন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এরপরও মাতম করেনি বিএনপি।

বিএনপির জোটের শরিকরাও তখন নীরব ছিলেন। জোট থেকে বেরিয়ে আসা বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত হয়েও সাঈদী সবার থেকে আলাদা। তিনি শুধু জামায়াত নেতা নন, রাজনীতির বাইরেও সাঈদীর ভক্ত ও সমর্থক রয়েছে।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর বলেন, আগে যারা মারা গেছেন তারা তখন জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তাই শোকের প্রসঙ্গ উঠে আসেনি। সবাই মনে করেন, সাঈদী ন্যায়বিচার পাননি। তাই তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছি। সরকারি দমন-পীড়নে কেউ মারা গেলে প্রতিবাদ করা রাজনৈতিক দলগুলোর কর্তব্য। পিপলস রাইটস কাউন্সিল সেটা করেছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল খালেক মণ্ডল গত মাসে কারাগারে মারা যান। তখন বিএনপি বা অন্য কোনো দল আন্দোলন করেনি। তবে সাঈদীর মৃত্যুর পর বিএনপি কর্মী-সমর্থকরা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু করেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এ কারণে সাইদীর জন্য শোক পালনের জন্য দলে চাপ সৃষ্টি হয়। নেতাদের একাংশ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারিক রহমানকে সমবেদনা জানাতে রাজি করান। এ কারণে মৃত্যুর প্রায় চার ঘণ্টা পর বিএনপির পক্ষ থেকে শোকবার্তা আসে। এই অংশের ভাষ্য, আমরা শোক না করলে ভুল বার্তা দিত।

চলতি বছরের শেষ বা আগামী বছরের শুরুতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ‘ওয়ান শট’ আন্দোলন করছে বিএনপি। একই দাবিতে আলাদা কর্মসূচি দিচ্ছে জামায়াত। গতকাল সাঈদীর জানাজায় জামায়াতের আমির মুজিবুর রহমান বলেছেন, নির্দলীয় সরকার ছাড়া তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন না।

জামায়াতের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগের কারণে বিএনপিকে দল ছাড়ার জন্য দেশি-বিদেশি চাপ ছিল। যুদ্ধাপরাধের বিচারে কোণঠাসা জামায়াত ২০১১ সাল থেকে জনরাজনীতিতে না থাকলেও বিএনপির সঙ্গে জোট অব্যাহত রয়েছে। কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হলে ২০১৮ সালে দূরত্ব বেড়ে যায় বিএনপির।

গত বছর ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে জোট ভেঙে ১০ দফা দাবিতে যৌথ আন্দোলন শুরু করে বিএনপি ও জামায়াত। তিন দিন পর গ্রেফতার জামায়াতের আমির ড. শফিকুর রহমান। গ্রেফতারের নিন্দা না করায় বিএনপির ওপর ক্ষুব্ধ জামায়াত। যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীতে জামায়াতের মিছিলে পুলিশ বাধা দিলেও রয়ে গেছে বিএনপি।