• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্র।জনবল কাঠামো নিয়ে শ্রমিকদের অসন্তোষ

    আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানির (এপিএসসিএল) অনুমোদিত জনবল কাঠামো-২০২১ নিয়ে এবার শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। এপিএসসিএল নিবন্ধিত তিনটি শ্রমিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ জনবল কাঠামো স্থগিত ও সংশোধনের দাবি জানিয়েছে। দাবি আদায়ের জন্য মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ এবং বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। কাউন্সিল নেতারা কাঠামোটিকে ‘বৈষম্যমূলক এবং উচ্চাভিলাষী’ বলে অভিহিত করেছেন।

    সোমবার শ্রমিকরা ইউএনও শ্যামল চন্দ্র বসাকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দেন। জনবল কাঠামো বাস্তবায়িত হলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে আশঙ্কা করছেন। শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠানটি কর্মকর্তাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। শ্রমিকদের অভিযোগ, সংশোধিত জনবল কাঠামোতে কারিগরি কর্মকর্তাদের দাবি উপেক্ষা করেছে কর্তৃপক্ষ।

    দুই বছর আগে প্রস্তাবিত জনবল কাঠামো নিয়ে কারিগরি কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। পরে তাদের চাপে এপিএসসিএল কর্তৃপক্ষ সংশোধিত জনবল কাঠামো অনুমোদন করে।

    অনুসন্ধানে জানা গেছে, এপিএসসিএল কর্তৃপক্ষ নতুন জনবল কাঠামো তৈরির জন্য ‘আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়াং এলএপি’ নামে একটি বেসরকারি পরামর্শদাতা সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়েছে। দীর্ঘ সাত বছর (২০১৪ থেকে ২০২১) এপিএসসিএল কর্তৃপক্ষ এবং বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সাথে পর্যালোচনা করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান জনবল কাঠামো তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। এর জন্য কোম্পানিকে দিতে হয়েছে ৪০ লাখ টাকার বেশি।

    বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সভাপতিত্বে ২০২১ সালের অক্টোবরে প্রস্তাবিত জনবল কাঠামো চূড়ান্ত করা হয়। নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন) এবং মহাব্যবস্থাপক পদসহ ৮১৬টি কারিগরি (৬৪ শতাংশ) এবং ৪৬৬ (৩৬ শতাংশ) নন-টেকনিক্যাল জনবলের প্রস্তাব ছিল। ২০১০ সালে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি কোম্পানিতে রূপান্তরের সময় জনবল কাঠামোতে কারিগরি ও অপ্রযুক্তিগত জনবলের অনুপাত ছিল ৭১ ও ২৯ শতাংশ। কিন্তু প্রস্তাবিত জনবল কাঠামোতে নন-টেকনিক্যাল পদ বেড়ে যাওয়ায় পদোন্নতিসহ নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন কারিগরি কর্মকর্তারা।

    এর পরিপ্রেক্ষিতে পানি ও বিদ্যুৎ প্রকৌশলী সমিতি ও ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইইবি) বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী, সচিবসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করে প্রস্তাবিত জনবল কাঠামো যৌক্তিক করার দাবি জানায়। একই সঙ্গে শ্রমিক-কর্মচারীরা জনবল কাঠামো সংশোধন করে কর্মকর্তা-কর্মচারী অনুপাত ১:৫ করার দাবি জানান। ১০০ জন কর্মকর্তার পদ বাড়ানোর পর, APSCL কর্তৃপক্ষ ২৫ জুন জনবল কাঠামো অনুমোদন করে এবং যাচাই ও পরামর্শের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের পরামর্শক কমিটিতে পাঠায়। এ জনবল কাঠামোতে কর্মকর্তা পদে ৪৮৫টি এবং কর্মচারী পদে ৮৯৮টি নিয়োগ করা হয়েছে। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারী অনুপাত দাঁড়ায় ১:১.৮৫। এটাকে চরম বৈষম্যমূলক আখ্যা দিয়ে তা সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন শ্রমিকরা।

    শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক ইসরাইল মিয়া বলেন, প্রতিষ্ঠান যাতে দেউলিয়া না হয় সেজন্য সুষম জনবল কাঠামো প্রণয়ন করা প্রয়োজন। পরিষদের সদস্য সচিব এনামুল হক বলেন, কর্মকর্তাদের পদমর্যাদা বাড়লেও কর্মীদের পদমর্যাদা বাড়েনি। এ কাঠামো বাস্তবায়িত হলে শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

    অসন্তোষের কথা স্বীকার করে এপিএসসিএলের এমডি এপিএম সাজ্জাদুর রহমান বলেন, দেশের অন্যান্য বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের তুলনায় আমাদের শ্রমিকের সংখ্যা বেশি। তা ছাড়া বর্তমানে প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ জনবলের প্রয়োজন রয়েছে।