বৃক্ষপদযাত্রা।ফলের গাছেই ভবিষ্যৎ
“যদি কোনও ব্যক্তি একটি ফলের গাছ রোপন করে এবং সেই গাছ থেকে কোনও ব্যক্তি বা পাখি ফলটি খায় তবে তা সেই ব্যক্তির জন্য সদকা হয়ে যায়” ” এটি হাদিসের কথা। জার্মান সংস্কারক ও প্রোটেস্ট্যান্টিজমের প্রচারক মার্টিন লুথার বলেন, “আগামীকাল পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে শুনলে আজ আমি একটি আপেল গাছ লাগিয়ে দেব।” এদেশের গ্রামীণ বাংলায় এক সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরণের ফলের গাছ সজ্জিত হত। লোকেরা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী গাছের ফল খেয়েছে, কেউ তাদের বাধা দেয় না। প্রচুর ফলের গাছের কারণে এই দেশে বিভিন্ন ধরণের পাখির আবাস ছিল। গবেষকরা বলেছেন যে ব্যক্তি যে মাটিতে একজন মানুষ বড় হন, সেই মাটির শস্য এবং ফলগুলি তার দেহের পুষ্টির জন্য বিশেষভাবে উপকারী। একটি সাধারণ বরই তার জন্য ব্যয়বহুল আপেলের চেয়ে বেশি উপকারী। কয়েক দশক ধরে এদেশে নির্বিচারে বিদেশী গাছ লাগানোর ফলে অনেক ফলের গাছ হারিয়ে গেছে। প্রশাসনের স্বল্পদৃষ্টির কারণে পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক , ইউক্যালিপটাস, শিশু, মেহগনি ইত্যাদি ধ্বংস হয়ে গেছে।ফলদ গাছ সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘ফলদ বাংলাদেশ’ এগিয়ে এসেছে।
সংস্থাটি পরিবেশ ও আবাসস্থলে ফলের গাছের গুরুত্ব, সুবিধা এবং প্রভাব সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরির জন্য কাজ করছে। ইতিমধ্যে তারা ৪০০ কিলোমিটার বৃক্ষ ট্রেকের আয়োজন করেছে। মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে ১৬ডিসেম্বর ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হয়েছে। এটি খাগড়াছড়িতে ৩১ডিসেম্বর শেষ হবে। পথে তারা ৭ টি জেলা ও চব্বিশ উপজেলা সহ দেড় শতাধিক বাজারে প্রচার চালাবেন। এই ১৬ দিনের মধ্যে দলটি চট্টগ্রামের গফরগাঁও, কিশোরগঞ্জ, ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কসবা, ব্রাহ্মণপাড়া, কুমিল্লা, চৌদ্দগ্রাম, ফেনী, বারিয়ারহাট, রামগড়, জলিয়াপাড়া, ও খাগড়াছড়িতে
কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার সহকারী অধ্যাপক দ্রাবিদ সৈকত, বিভাগীয় কর্মকর্তা মাহমুদুল আহসান লিমন, নাটক ও পারফরম্যান্স শিক্ষার্থী রাতুল মুন্সী, হুমায়ুন কবির টুটুল, শাহিন আলম, সুজালো চাকমা, স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন শিক্ষার্থী নিউটন চাকমা উপস্হিত ছিলেন। আরো ফোকলোর বিভাগের শিক্ষার্থী রঞ্জিত কুমার এবং চলচ্চিত্র ও মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী আনাম রেজা। প্রচারের সময় এই ৯ স্থানীয় সংগঠনের সাথে সদস্যরা যুক্ত থাকবেন।
গত শুক্রবার ‘ফালাদ বাংলাদেশের’ অভিযাত্রীরা কটিয়াদিতে এলে সমকাল সুহৃদ সমবেশের বন্ধুরা তাদের স্বাগত জানায়। পরে তারা কাটিয়াদি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে ফলের চারা রোপণ করেন। সেখান থেকে তারা কিশোরগঞ্জের ভৈরব যান। এরপর তারা শনিবার রাতে ভৈরব পৌঁছে যায়। এখানে রাত কাটানোর পরে তারা গতকাল সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। রাতে তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ‘ফালাদ বাংলাদেশ’ উর্বর মাটি, জীববৈচিত্র্য এবং দেশের বিভিন্ন গ্রামের মানুষকে নিয়ে দেশের উপযুক্ত অর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়িয়ে তুলছে। ফলের গাছ লাগানোর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে লিফলেট বিতরণ করা। মানুষকে মেহগনি, ইউক্যালিপটাস, বাবলা, রেইনট্রি, বাচ্চাদের পরিবর্তে দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা চিন্তা করে ফলের গাছ লাগানোর আহ্বান জানানো হচ্ছে।