রাজনীতি

গোলাপবাগে রাজি নয়।শুক্রবার পল্টনই চায় বিএনপি

দলীয় কার্যালয় ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তা অভিযানে দেড় শতাধিক ব্যক্তিকে আটক

বিএনপি-আওয়ামী লীগের সমাবেশকে ঘিরে উত্তেজনা থাকলেও বুধবার সমাবেশস্থলে হঠাৎ করে নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বৃহস্পতিবার পৃথক পৃথক স্থানে গণসভা ও সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে দল দুটি। তবে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) জনগণের বিড়ম্বনার কথা মাথায় রেখে কাঙ্খিত স্থানে সমাবেশ করতে দুই গ্রুপকে অনুমতি দেয়নি। বিএনপি প্রথমে নয়াপল্টন বা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চিঠি দেয়। বিএনপির পক্ষ থেকে ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের পাশে গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। আর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের তিন ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে ‘শান্তি সমাবেশ’ করার অনুমতি চাইছে। তাদের বিকল্প স্থানের নামও জানাতে বলা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কে কোথায় জমায়েতের অনুমতি পাচ্ছেন তা নিয়ে কৌতূহল ছিল অনেকের।

বৃহস্পতিবার কাঙ্ক্ষিত ভেন্যুতে অনুমতি না পাওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে গতকাল জাতীয় স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক করে বিএনপি। বৈঠক শেষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘোষণা করেন, আগামীকাল শুক্রবার দুপুর ২টায় ঢাকার নয়াপল্টনে সমাবেশ হবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে শুক্রবার পূর্বঘোষিত গণসমাবেশের কথা জানান তিনি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আশা করি, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চলমান গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে কোনো সংগঠন বাধা সৃষ্টি করবে না। শুক্রবারের এই শান্তিপূর্ণ সমাবেশকে সফল করতে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে বিশেষ করে ডিএমপির প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’ বিএনপির ঘোষণার ১৫ মিনিটের মধ্যে যুবলীগ, স্বচ্ছসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ তাদের সমাবেশ একদিনের জন্য স্থগিত ঘোষণা করে। শুক্রবার বিকাল ৩টায় শেরেবাংলা নগরের মেলা মাঠে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তারা।

গত ডিসেম্বর থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করছে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলগুলো। বিএনপিসহ বিরোধীরা কর্মসূচি ঘোষণা করলে সেদিনই রাজপথে কর্মসূচি পালন করে ক্ষমতাসীন দলও। তবে শুক্রবার গণসমাবেশের অনুমতি চেয়ে গতকাল রাতে ডিএমপি কমিশনারকে চিঠি দেয় বিএনপি। রাত ১২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো ‘সবুজ সংকেত’ পায়নি দলটি। আজ বৃহস্পতিবার অনুমতি পাওয়ার আশা করছে বিএনপি। একটি সূত্র জানায়, শুক্রবার বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হতে পারে।

গতকাল রাতে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করে অনুমতি দেওয়া হবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

নয়াপল্টনের চারপাশে নিরাপত্তা

গতকাল বিকেল থেকে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয় ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিএনপি কার্যালয়ের দুই পাশে দুটি জলকামান ও একটি রায়ট কার পার্কিং করা হয়। কার্যালয়ের তিন পাশে দেড় শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিএনপি কার্যালয়ের দক্ষিণ পাশে পল্টন জামে মসজিদের সামনে অবস্থান করছে একদল পুলিশ। জলকামান আছে। অফিসের উত্তর পাশে পুলিশের আরেকটি দল রয়েছে। একটি জলকামান এবং একটি দাঙ্গা গাড়ি আছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ফাঁকা। নেতাকর্মীরা কার্যালয়ের সামনে জড়ো হচ্ছেন। তবে বিএনপি নেতারাই তাদের সমাবেশে নিষেধ করছেন। দলীয় কার্যালয়ের আশপাশের দোকানপাট বন্ধ দেখা যায়। তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশে অলিগলিতে অবস্থান করছিলেন দলের অনেক নেতাকর্মী। পল্টন এলাকায় নতুন সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। গতকাল রাতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেলেও অভিযান চালানো হয়েছে। পল্টনের হোটেল মিডওয়েতে অভিযান চালিয়ে দেড়শ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। তাদের মধ্যে রয়েছেন দিনাজপুর জেলা বিএনপির সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন দুলালও।

গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের আগেও ভেন্যু নিয়ে এমন জটিলতায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। সেই সংঘাতময় পরিস্থিতি এড়াতে বিকল্প পথ খুঁজতে সারাদিন চেষ্টা করেন বিএনপি নেতারা। এ জন্য দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির নেতারা নিয়মিত বৈঠক করেন। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। একইসঙ্গে সমমনা জোট ও ১৪ দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠানস্থল পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন বিএনপি নেতারা। সেখানে জোটের নেতারা বলেন, বিএনপিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় হতাশ নেতাকর্মীরা। বলা হয়, তাদেরকে সজীব রাখার জন্য ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দেন।