বিমানবন্দরে দায়িত্বের আড়ালে স্বর্ণ পাচার
ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত এক শ্রেণীর কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পেশাগত দায়িত্বের আড়ালে স্বর্ণ পাচারের অভিযোগ উঠেছে। প্রায়শই এই বিমানবন্দরে অবৈধ পণ্যসহ কিছু শ্রমিককে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে চোরাই স্বর্ণ র বার, মদ, বিয়ার, সিগারেটসহ বিভিন্ন পণ্য জব্দ করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করা হচ্ছে অসাধু শ্রমিকরা যারা বছরের পর বছর একই বিমানবন্দরে কর্মরত। তাদের সঙ্গে চোরাকারবারিদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
১২ জুন ইউএস-বাংলার একটি যাত্রীবাহী বিমান কাতার থেকে শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এ সময় বিমানবন্দর শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত দলের সদস্যরা স্বর্ণ চোরাচালানের গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বিমানটির চারপাশে নজরদারি বাড়ায়।
শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যাত্রীদের একটি চোরাচালান চক্রের বহন করা বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ এয়ারলাইন্সের কোনো সদস্যের মাধ্যমে অন্যত্র পাচার করা হবে বলে তথ্য ছিল। যাত্রীরা নামার পর বিমানটিতে তল্লাশি চালানো হয়। এর আগে পরিচ্ছন্নতাকর্মী জামাল ভূঁইয়া বিমান থেকে স্বর্ণের বারগুলোর চালান ডাস্টবিনে লুকিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দেন। পরে পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে শনাক্ত করে ডাস্টবিন থেকে ৬ হাজার ৯৬০ গ্রাম স্বর্ণ, যার বাজার মূল্য প্রায় ৬ কোটি টাকা।
শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি হারুনুর রশিদ নামে একই এয়ারলাইন্সের এক বাস চালককে ১৪ কেজি সোনার বারসহ বিমানবন্দরে আটক করা হয়। এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে।
শুধু ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের কর্মচারীরাই নয়, বিমানবন্দরে কর্মরত বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (ববিচক) এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত।
গত রোববার শাহজালাল বিমানবন্দর এক্সিট টার্মিনালে গণশুনানিতে বেবিচকের চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমান বলেন, বিমানবন্দরের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। তাদের কারণে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের পাশাপাশি বিভাগীয় মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
শাহজালালসহ দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায়ই অবৈধ স্বর্ণ , মুদ্রা, মাদকসহ চোরাই পণ্য ধরা পড়ে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও গাফিলতির অভিযোগ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মানব পাচার, উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি, আদালতের আদেশ জালিয়াতিসহ নানা জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে।
এরই মধ্যে বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে বেবিচককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিভিন্ন অভিযোগের কারণে বেবিচকের বেশ কয়েকজন কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বেবিচকের সদস্য (প্রশাসন) মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, স্বর্ণ চোরাচালানসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত শ্রমিকদের কোনো ছাড় নেই। বিভাগীয় মামলা তদন্তে দোষী সাব্যস্ত বেবিচকের কর্মচারীদের নিয়ম অনুযায়ী বরখাস্ত করা হয়েছে।
বিমানবন্দর থানার ওসি আজিজুল হক বলেন, বিমানবন্দরে দায়িত্বের আড়ালে এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। গ্রেফতারকৃত ইউএস-বাংলাসহ বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তাছাড়া মামলাগুলোর তদন্ত চলছে। পুলিশ মাঠে কাজ করছে।