ভোটের গোপন প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জামায়াত
• ৩০০টি আসনে এমপি প্রার্থীদের প্রাথমিক নির্বাচন
• দেশী ও বিদেশী উৎস থেকে নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহ
• হঠাৎ সমাবেশ করার অনুমতি নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন
• এক দশক পর, জামায়াতকে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন মেরুকরণ, নাকি যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির পরিপ্রেক্ষিতে তারা এই অনুমতি পেয়েছেন, তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন রয়েছে। জামায়াতের দীর্ঘদিনের মিত্র বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যেও সংশয় দেখা দিয়েছে। কোনো পক্ষের সঙ্গে গোপন চুক্তির ভিত্তিতে কর্মসূচি পালনের অনুমতি পেলেন কি না, তাও ভাবছেন তারা। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। জামায়াত প্রকাশ্যে বলে আসছে, বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করে বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। তবে চার সিটিতে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন জামায়াতের অন্তত ৪০ নেতাকর্মী। তারা গোপনে শুধু সিটি নির্বাচন নয় জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সংগঠনকে সাজাতে নানা পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ৩০০ আসনে এমপি প্রার্থী হিসেবে কারা মনোনয়ন পেতে পারেন তার পূর্ব তালিকাও করেছে দলটি। জামায়াতের গোপন নথি ও গোয়েন্দা সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এসব নথির ভিত্তিতে জামায়াতের গোপন নির্বাচনী কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কয়েকটি দপ্তরে পাঠিয়েছে পুলিশ।
• হঠাৎ করে জামায়াতের ইনডোর সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, এই অনুমতি নিয়ে আর কোনো সমস্যা নেই। কোথায় এবং কেন তারা কোন জায়গায় সমাবেশ করার অনুমতি চাচ্ছেন, ভবিষ্যতে অনুমতি না দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে বুধবার জাতীয় সংসদে বাজেট আলোচনায় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, আমরা জানি না ১০ বছর পর জামায়াতকে কী সভা করতে দেওয়া হয়। সাপের মুখে চুমু দিলে সাপ কামড়াবে।
জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, জামায়াত ১০ বছর ধরে রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। এখন তাদের বুদ্ধি ফুটে উঠেছে। আমরা এটাকে স্বাগত জানাই। জামায়াত একটি নির্বাচনমুখী দল। আমরা কেন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি না? তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আমরা অংশগ্রহণ করব। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জামায়াত কোনো প্রার্থী দেয়নি। তিনি আরও বলেন, আমাদের সমাবেশ করতে দেওয়া হয়েছে বলে জোটের অন্যরা হিংসা করবে কেন? প্রতিকূল পরিবেশেও আমাদের অনুসারীর সংখ্যা বাড়ছে।
• গত ডিসেম্বরে শফিকুর রহমানসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জামায়াতের বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয় জামায়াতের আমিরের কাছ থেকে ল্যাপটপ, মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস জব্দ করেছে পুলিশ। এসব ডিভাইসের ফরেনসিক পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া গ্রেফতারকৃত কয়েকজন নেতার কাছ থেকে জামায়াতের কৌশলের গোপন নথি পাওয়া গেছে।
• দীর্ঘদিন ধরে জামায়াত প্রকাশ্যে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নেই। তবে জামায়াতের নথিপত্র বলছে, সংগঠনকে শক্তিশালী করতে গোপনে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে দলটি। তারা মনে করে ২০৪১ সালের মধ্যে তারা ক্ষমতায় আসবে। বিগত সময়ে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা পাঁচ গুণ বেড়েছে। ২০০৮ সালে, রোকন ছিল ২৩ হাজার ৮৬৩ জন। ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩ হাজার ৪৬ জনে। ১০টি সীমান্ত জেলায় সংগঠনটির সদস্য সংখ্যাও বেড়েছে।
• জামায়াতের বিষয়ে পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- তারা ১০টি মন্ত্রণালয় ও ৩০০টি আসনে এমপি পদে প্রার্থী হতে পারেন এমন একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছে। নির্বাচনকালীন প্রচারণা ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের জন্য সংগঠনের সদস্যদের কাছ থেকে এবং দেশি-বিদেশি উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ অব্যাহত রেখেছেন তারা। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের স্বাক্ষরিত একটি চিঠিও জব্দ করেছে গোয়েন্দারা। ওই চিঠিতে তিনি বলেন- “আমি আপনাকে মুহতারাম আমীর জামায়াতের নির্দেশে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করার জন্য অনুরোধ করছি।”
• চিঠিতে ৯টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমে বলা হয়- ‘এই চিঠি কোনো জেলা আমীরকে দেওয়া যাবে না। খুব সাবধানে সংরক্ষণ করতে হবে। জেলা শাখাগুলিতে মৌখিকভাবে বিষয়গুলি জানানো এবং ২০২৩-এর জন্য এককালীন কোটা সম্পর্কে অবহিত করা। ২০২৩ নির্বাচনী অর্থ তহবিলের এককালীন সংগ্রহ। এই সংগ্রহের ১০ শতাংশ এককালীন সামাজিক কল্যাণ কর্মসূচি হিসাবে সেক্টরের সাধারণ নগদ অ্যাকাউন্টে নথিভুক্ত করা উচিত; বাকি ৯০ শতাংশ সরাসরি কেন্দ্রে পাঠাতে হবে। এই বছর অঞ্চলের মাধ্যমে কোন এককালীন সংগ্রহ হবে না। ফলে এখান থেকে খরচ বরাদ্দ করা যাচ্ছে না। নির্বাচন উপলক্ষে এককালীন সংগ্রহের ৯০ শতাংশ আলাদা রসিদ বইয়ে সংগ্রহ করতে হবে। যাইহোক, এটি একটি পৃথক খাতায় লিপিবদ্ধ করা উচিত। এর জন্য কোন সাধারণ অডিট হবে না।