• বাংলা
  • English
  • অর্থনীতি

    বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির অনেকেই পালিয়ে গেছেন।ব্যাংকটির ৪৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে  দুদকে অভিযোগপত্র।

    • ৫৯টি চার্জশিটের মধ্যে ৫৮টিতে অভিযুক্ত শেখ আবদুল হাই বাচ্চু

    • বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা

    • রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারির মাস্টারমাইন্ড হিসেবে শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর নাম বারবার পাওয়া গেলেও এতদিন অধরা ছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ৫৯টি চার্জশিটের মধ্যে ৫৮টিতে তাকে আসামি করা হয়েছে। বাচ্চু ছাড়াও মালয়েশিয়ায় পলাতক ব্যাংকটির তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী ফখরুল ইসলামসহ মোট ১৪৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র তৈরি করেছে দুদক। তাদের মধ্যে ৪৬ জন ব্যাংক কর্মকর্তা রয়েছেন।

    • বেসিক ব্যাঙ্কের বিভিন্ন স্তর অনুসারে, অভিযুক্তদের তালিকায় নাম থাকা কেউই এখন চাকরি করেন না। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে ইতিমধ্যে ব্যাংক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, কেউ অবসরে গেছেন। সোমবার চার্জশিট অনুমোদনের পর গ্রেপ্তার আতঙ্কে যারা কর্মরত আছেন তাদের বেশিরভাগই মঙ্গলবার অফিসে যাননি। অনেকেই কভার করেছেন। কেউ কেউ অফিসে এসে সই করে চলে যায়। কেলেঙ্কারির মামলার প্রায় আট বছর পর চার্জশিট অনুমোদন হওয়ায় বাচ্চুসহ অনেক আসামি দেশে নেই বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, অভিযোগপত্রে যাদের নাম রয়েছে তারা সবাই আর্থিক সুবিধাভোগী নয়। শুধু দায়িত্বের কারণে অনেকেই আটকা পড়েন।

    সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খেলাপি ঋণ, মূলধনের পর্যাপ্ততা, মুনাফার দিক থেকে বেসিক ব্যাংকগুলো একসময় এ খাতের ঈর্ষণীয় কাতারে ছিল। এই কোম্পানিতে একটি চাকরি লোভনীয় ছিল। তবে শেখ আবদুল হাই বাচ্চু চেয়ারম্যান হওয়ার পর নানা অনিয়ম করে ব্যাংকটিকে দেশের সবচেয়ে খারাপ ব্যাংকের উদাহরণ তৈরি করেন। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৪ সালের জুলাই পর্যন্ত তিনি চেয়ারম্যান ছিলেন। এ সময় দুদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্যাংক থেকে ২ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। যদিও ঋণ অনিয়মের প্রকৃত পরিমাণ চার হাজার কোটি টাকার বেশি। গত কয়েক বছরে জাতীয় সংসদ, হাইকোর্ট, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন পর্যায়ে কেলেঙ্কারির বিষয়টি বারবার আলোচিত হলেও অজ্ঞাত কারণে বাচ্চুর নাম কখনোই আসামির তালিকায় আসেনি।

    • বর্তমানে ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা বা মোট ঋণের ৫৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। বর্তমানে ৪,৫৭৯ কোটি টাকার নিরাপত্তা সংরক্ষণ বা প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে। মূলধন ঘাটতি দুই হাজার কোটি টাকার ওপরে। লাভ তো দূরের কথা, প্রতি বছরই গুনতে হয় বিশাল লোকসান। গত বছর ১০৯ কোটি টাকা, আগের বছর লোকসান ছিল ৩৮৬ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি অনিয়ম হয়েছে ব্যাংকটির গুলশান, শান্তিনগর, দিলকুশা ও প্রধান শাখায়। দুদকের অভিযোগপত্রে প্রধান কার্যালয়ের বাইরের এই চার শাখার কর্মকর্তাদের নামই বেশি উঠে এসেছে। তৎকালীন চেয়ারম্যান বাচ্চু ছাড়াও তার ঘনিষ্ঠ ও তৎকালীন কোম্পানি সেক্রেটারি (মহাব্যবস্থাপক) শাহ আলম ভূঁইয়াকে নতুন আসামি করা হয়েছে। তবে তার দুই মেয়াদে পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন এমন কাউকে অভিযুক্ত করা হয়নি। অভিযোগপত্রগুলো এখন আদালতে পেশ করা হবে বলে সাংবাদিকদের জানান অভিযুক্ত সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

    • জানা যায় যে জালিয়াতির সময় চেয়ারম্যান, এমডি এবং কোম্পানি সচিব ছাড়াও, ডিএমডি এবং ক্রেডিট কমিটির তৎকালীন প্রধান, ফজলুস সোবহান, ডিএমডি এবং বাণিজ্যিক ক্রেডিট বিভাগের প্রধান, কনক কুমার পুরকায়স্থ, ডিএমডি এবং ক্রেডিট বিতরণ কমিটির প্রধান, উঃ মোনায়েম খান, ডিএমডি এবং কমার্শিয়াল ক্রেডিট বিভাগের প্রধান। সেলিম, সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মঞ্জুর মোরশেদ ও বাচ্চু এমডি হিসেবে দায়িত্ব নেন একেএম সাজেদুর রহমান। এ তালিকায় শাখা কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন শান্তিনগর শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, এ শাখার আরেক সাবেক ব্যবস্থাপক মোজাম্মেল হোসেন, তৎকালীন অপারেশন ম্যানেজার সারোয়ার হোসেন, সাবেক আরেক ব্যবস্থাপক রুমানা আহাদ, শাখা ঋণ কমিটির সদস্য ইদ্রিস ভূঁইয়া, এজিএম মুক্তাদির হোসেন। , শাখা ঋণ কমিটির সদস্য জালাল মো. উদ্দিন ও ডিএমডি মোহাম্মদ সেলিমের স্ত্রী ও শান্তিনগর শাখার ক্রেডিট ইনচার্জ সাদিয়া আক্তার শাহীন (বর্তমানে প্রধান কার্যালয়ে ব্যাংকের কালেকশন বিভাগের এজিএম), গুলশান শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক সিপার আহমেদ, তৎকালীন সম্পর্ক ব্যবস্থাপক এসএম জাহিদ হাসান, আরেক সাবেক ব্যবস্থাপক মফিজুর রহমান। তালুকদার, ডেপুটি ম্যানেজার ইকরামুল বারী, ডেপুটি ম্যানেজার রায়হান আলী এবং তৎকালীন এজিএম ইমরুল ইসলাম (বর্তমানে হেড অফিসের ডিজিএম), মেইন ব্রাঞ্চ ম্যানেজার জয়নাল আবেদীন চৌধুরী (বরখাস্ত), আরেক ব্রাঞ্চ ম্যানেজার উমর ফারুক, ক্রেডিট ইনচার্জ আবদুস সবুর (বর্তমানে অডিট ডিভিশনের ডিজিএম)। ), এই শাখার আরেক ক্রেডিট ইনচার্জ আব্দুস সাত্তার খান (বর্তমানে ডিজিএম হেড অফিস), এজিএম কাজল কান্তি দত্ত এবং শাখা ক্রেডিট কমিটির সদস্য সুমিত রঞ্জন নাথ (সম্প্রতি পদোন্নতি হওয়া জেনারেল ম্যানেজার)।

    দুদকের চার্জশিটে অন্যদের মধ্যে রয়েছে দিলকুশা শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক গোলাম ফারুক খান, তৎকালীন ক্রেডিট ইনচার্জ পলাশ দাশগুপ্ত (বর্তমানে শান্তিনগর শাখার ব্যবস্থাপক), বনানী শাখার ব্যবস্থাপক রাজিয়া খাতুন, ঢাকার ইসলামপুর শাখার তৎকালীন ব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম, এজিএম ইকরামুল বারী।