জীববৈচিত্র্য।সমালোচনামূলকভাবে বিপন্ন হলুদ কাছিমের জন্য সুখবর
চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামীর মাজারে দুর্লভ বায়েজিদ কাছিম। এমতাবস্থায় সুখবর এলো সংকটাপন্ন হলুদ পাহাড়ি কাছিমের জন্য। প্রথমবারের মতো একসঙ্গে তিনটি বাচ্চার জন্ম দিল হলুদ কাছিম। এই ধরনের কচ্ছপ বিশ্বের সবচেয়ে বিপন্ন প্রাণীদের মধ্যে একটি।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর একটি বিশেষ প্রাকৃতিক এলাকা তৈরি করেছেন। শাহাদাত হোসেন কচ্ছপ প্রজননে সফল হয়েছেন। তিনটি শাবকসহ এখন পাঁচটি হলুদ কচ্ছপ রয়েছে।
ড. শাহাদাত জানান, বিপন্ন প্রাণীটিকে টিকিয়ে রাখতে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হলুদ কাছিম প্রজননের জন্য একটি বিশেষ নতুন খাঁচা তৈরি করা হয়েছিল। সেই খাঁচায় একটি প্রাকৃতিক প্রজনন পরিবেশ তৈরি হয়। নতুন খাঁচায় ঢোকার ১৫ মাস পর ৩টি হলুদ পাহাড়ি কাছিমের বাচ্চার জন্ম হয়।
তিনি বলেন, হলুদ পাহাড়ি কাছিম সাধারণত ৩ থেকে ৪টি ডিম পাড়ে। ১২০ থেকে ১৫০ দিনের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা হয়। সমালোচনামূলকভাবে বিপন্ন হলুদ কাছিমের একটি নতুন জাত তৈরি করা দুর্দান্ত। গত বৃহস্পতিবার হলুদ কাছিমটি ফুটেছে।
ডা: শাহাদাত বলেন, ভবিষ্যতে এই কাছিমের আরও প্রজনন করা হবে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের সহযোগিতায় হলুদ কাছিমগুলোকে উপযুক্ত পরিবেশে বনে অবমুক্ত করা হবে। চিড়িয়াখানায় ২০১৩ সাল থেকে কচ্ছপ রয়েছে কিন্তু এর আগে কোনো বাচ্চা ছিল না।
দীর্ঘায়িত কচ্ছপকে প্রকৃতি সংরক্ষণের আন্তর্জাতিক সংস্থা (IUCN) দ্বারা সমালোচনামূলকভাবে বিপন্ন হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। যেসব প্রাণীর ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ বিলুপ্ত হয়ে গেছে তাদের এই তালিকায় রাখা হয়েছে।
এদিকে বায়েজিদ বোস্তামী মাজারের বিরল বায়েজিদ কচ্ছপটি এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। মাজারের পুকুরে এখনও পাঁচ শতাধিক বিপন্ন কচ্ছপ টিকে আছে। পুকুরের পূর্ব পাশের একমাত্র কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্রটি ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে কচ্ছপের প্রজনন বন্ধ হয়ে গেছে। ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্স নামে একটি পরিবেশগত সংস্থা ২০১৯ সালে ৩৪টি এবং ২০২০ সালে ২০৫টি হ্যাচলিং রিপোর্ট করেছে৷ পুকুরের গজার মাছ ডিম খেয়ে ফেলায় এখানে প্রজনন আর হচ্ছে না৷
মাজারের মোতওয়াল্লী অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম বলেন, বায়েজিদ প্রজাতির কাছিম পৃথিবীতে শুধু এখানেই টিকে আছে। তারা শত শত বছর ধরে মাজার পুকুরে বসবাস করে আসছে। যুগ যুগ ধরে কচ্ছপগুলো পুকুরের চারপাশের নরম মাটিতে ডিম পাড়তো। কিন্তু গত কয়েক দশকে পুকুরের মাটি শক্ত হয়ে কাক, কুকুর, শেয়ালসহ বিভিন্ন প্রাণী ডিম খেয়ে ফেলায় এ কচ্ছপের প্রজনন সংকট বাড়ছে। ১৯৮৬ সালের একটি জরিপে দেখা গেছে যে এই পুকুরে ৩২০টি বায়েজিদ কচ্ছপ রয়েছে।