• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    একনেকে প্রধানমন্ত্রী।বিদ্যুতের ঘাটতি ও ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি গ্রহণযোগ্য নয়

    সারাদেশে চলমান বিদ্যুৎ সংকট ও ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির চাপ ও বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সরকার তা স্বীকার করে।

    বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে ও মূল্যস্ফীতি রোধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তা জানতে মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কৌশলের মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব এ দুটি সংকট মোকাবেলার পরামর্শও দেন তিনি।

    মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ,রাজধানীর শেরেবাংলানগরে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভা শেষে এক ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রধানমন্ত্রীর এসব নির্দেশনাসহ একনেকের অন্যান্য বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।

    মূল্যস্ফীতি সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন পণ্যের দামে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশের মধ্যে এত পার্থক্য কেন প্রধানমন্ত্রী জানতে চেয়েছেন। কারণ জানতে নির্দেশ দেন। পেঁয়াজ সহ সংবেদনশীল পণ্যের মজুদ বাড়ানো উচিত, যার দাম রাতারাতি বেড়ে যায়। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবিকে শক্তিশালী করতে হবে। টিসিবি একটি সরকারী প্রতিষ্ঠান যা প্রয়োজনীয় দ্রব্যের জরুরী মজুদ এবং প্রয়োজনের সময় বাজারে সরবরাহের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল করে। তিনি রাজধানী ও রাজধানীর বাইরে নিত্য পণ্যের মজুদ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বাজারের ভারসাম্য রক্ষায় নিজস্ব উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন যাতে আবাদি জমি অনাবাদি না থাকে।

    বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়েও কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে মজুদের ওপর চাপ রয়েছে। ডলারের সরবরাহ বাড়াতে বৈদেশিক ঋণ সহায়তা প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দিতে হবে। অন্তত নিজেদের গাফিলতির কারণে যাতে বিদেশি ঋণ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব না হয়।

    সাশ্রয়ের অংশ হিসেবে গাড়ি ব্যবহার এবং অফিসের আকার সাশ্রয়ী করার নির্দেশনাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এসব বিষয়ে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

    ব্রিফিংয়ে এম এ মান্নান বলেন, বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে একনেকের কাছ থেকে দুই সপ্তাহ সময় নিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। কিন্তু দুই সপ্তাহে মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতি অন্তত বাড়বে না। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ডলারের বিনিময় হার বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কমলেও ডলারের দাম এখনও চড়া থাকায় অভ্যন্তরীণ বাজারে লাভ হচ্ছে না। ভবিষ্যতে ডলারের মূল্য আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি বাড়বে কি না জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বাজারে প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হবে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী ১৫ দিন আগে বলেছেন, পেঁয়াজের দাম না কমলে আমদানি করা হবে। গত ১৫ দিনে দাম কমেনি, আমদানিও হয়নি। এখন আমদানির সিদ্ধান্তে পেঁয়াজের দাম কমেছে। এ ধরনের সব ক্ষেত্রে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

    তিনি আরও বলেন, আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৬ শতাংশ, যা প্রশ্নবিদ্ধ।

    একটি রেকর্ড ১৮ প্রকল্প অনুমোদন

    সাধারণত প্রতি বছর ১০ থেকে ১২টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। গতকালের একনে রেকর্ড ১৮টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ৭ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা; বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা। বাকিটা বাস্তবায়নকারী সংস্থার। এর পরিমাণ ৮১ কোটি টাকার মতো।

    অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো- শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ স্মৃতি জাদুঘর সংযোগ সড়কসহ ফরিদপুরে মধুমতি নদীর বাম তীর সংরক্ষণ ও ড্রেজিং, বাগেরহাটে পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, নেত্রকোনায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, ক্রিটিক্যাল নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প। (২য় পর্যায়) (১ম সংশোধনী), নড়াইলে গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন, ৬টি আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে অবস্থানভিত্তিক ধানের জাত ও প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং বিদ্যমান গবেষণাগারের উন্নয়ন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আশারিয়ান-২ (পঞ্চম সংশোধনী) অনুমোদন অফিস, ১০টি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ ১৯টি হোস্টেল ভবন নির্মাণ এবং পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন (প্রথম সংশোধন) প্রকল্প।

    এ ছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ভবন স্থাপন, উচ্চশিক্ষার ত্বরণ ও রূপান্তর, ন্যাশনাল ডেভেলপম্যান প্রতিষ্ঠা।