• বাংলা
  • English
  • রাজনীতি

    ‘রাষ্ট্র মেরামত’ নিয়ে বিএনপির অভিন্ন রূপরেখা চূড়ান্ত।সমমনাদের নিয়ে টানাপোড়েনের অবসান

    সমমনা দলগুলোর দফার সঙ্গে সমন্বয় করে রাষ্ট্র সংস্কারের ‘অভিন্ন রূপরেখা’র খসড়া চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। বিএনপির ২৭টি ধারায় সমমনা ব্যক্তিদের বেশ কিছু প্রস্তাবের যোগ-বিয়োগ করে ৪টি নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে। রূপরেখা এখন ৩১ পয়েন্টে পরিণত হয়েছে। এতে গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ, কালো আইন বাতিল এবং মুক্তিযুদ্ধে সবার অবদানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব যুক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে সমতা, ন্যায্যতা, পারস্পরিক স্বার্থের স্বীকৃতি এবং স্বীকৃত আন্তর্জাতিক বিধিবিধান অনুযায়ী দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সমস্যা সমাধানের প্রস্তাবও রয়েছে।

    নতুন সংযোজিত ৪টি পয়েন্টের মধ্যে রয়েছে- যোগাযোগ অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তনের সংকট ও ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় উদ্যোগ, সামুদ্রিক সম্পদ জরিপ ও মজুদের ভিত্তিতে উত্তোলন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন, দেশের সব দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য আবাসন নিশ্চিতকরণ। বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নতুন ধারা চূড়ান্ত করে শিগগিরই যৌথ ঘোষণা দেওয়া হবে। দীর্ঘদিন ধরে, উভয় পক্ষই অভিন্ন রূপরেখা প্রণয়নে পূর্বঘোষিত বিষয় থেকে বিচ্যুত হতে চায়নি। তবে নানা হিসাব-নিকাশের পর অভিন্ন রূপরেখা প্রণয়নে সমমনাদের নিয়ে বিএনপির টানাপোড়েনের অবসান ঘটছে।

    পূর্ববর্তী রূপরেখার সাথে তুলনা করে, রাষ্ট্রীয় মেরামতের নতুন খসড়া রূপরেখা প্রায় সমস্ত পূর্বের দাবিগুলিকে অক্ষুণ্ন রেখেছে। এতে বিভিন্ন ধারায় গণতন্ত্র ফোরামের দেওয়া ৩৫ দফা প্রস্তাবের মধ্যে কিছু প্রস্তাব যুক্ত ও অপসারণ করা হয়েছে। বিশেষ করে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ঘোষিত ১৯ দফা কর্মসূচি, খালেদা জিয়া ঘোষিত বিএনপির ভিশন-২০৩০ এবং তারেক রহমান ঘোষিত ২৭ দফা কর্মসূচির আলোকে এই রূপরেখা তৈরি করা হচ্ছে।

    বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, গত ১৫ বছরে রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টর ধ্বংস হয়ে গেছে। আগামীতে জনগণের প্রত্যক্ষ সমর্থনে এবং ভোটের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারা। এর আগে তাদের দেওয়া ২৭ দফা রূপরেখা ঘোষণার সময় বলা হয়েছিল- তাদের মতামত থেকে কোনো ভালো প্রস্তাব এলে তারা স্বাগত জানাবে। এবার সেই প্রক্রিয়ায় কিছু সংযোজন করেছে তারা। কিন্তু আগের রূপরেখা অপরিবর্তিত রয়েছে।

    অভিন্ন রূপরেখা প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির আগের রূপরেখায় আস্থা ভোট ছাড়া অন্য সব বিষয়ে সংসদ সদস্যদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের কথা বলা হয়েছিল ৪ নম্বর অনুচ্ছেদে। অর্থ বিল, সংবিধান সংশোধনী বিল এবং জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত বিষয়। করা হবে নতুন প্রস্তাবে বলা হয়েছে যে অনুচ্ছেদ ৭০ সংশোধন নমনীয়ভাবে ‘বিবেচ্য’ হবে। ডেমোক্রেসি ফোরামের পক্ষ থেকে এই দাবিতে বলা হয়েছে- “৭০ ধারার সংশোধন নিশ্চিত করা হবে।” আউটলাইন ক্লজের ৯ নং ধারায় “আইনি সংস্কার” শব্দটি যুক্ত করা হয়েছে। তবে এসব ক্ষেত্রে ‘আইন প্রণয়নের’ দাবি জানিয়েছে গণতন্ত্র ফোরাম।

    নতুন রূপরেখায় গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করার বিধান রাখা হয়েছে, এজন্য আইসিটি আইন-২০০৬, সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯, বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪-এর প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’ এবং মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী অন্য সব আইন ঘোষণা করা হয়েছে। .

    ‘ধর্ম প্রত্যেকের, রাষ্ট্র সবার’ এই ধারাটি নতুন করে সংযুক্ত করা হয়েছে, আগের সবগুলো অক্ষত রেখে, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, উপাসনালয় ভাংচুর এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংখ্যালঘু কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যৌথ ঘোষণায় জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এই নিবন্ধটি আংশিকভাবে প্রসারিত করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক সমস্যা সমতা, ন্যায্যতা, পারস্পরিক স্বার্থের স্বীকৃতি এবং স্বীকৃত আন্তর্জাতিক বিধি অনুযায়ী সমাধান করা হবে।

    শিক্ষাখাতে নৈরাজ্য দূর করার ঘোষণার সঙ্গে আবার যোগ হয়েছে- মাতৃভাষায় সমমানের শিক্ষা ও শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে শিক্ষা, প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণসহ সংশ্লিষ্ট সব খাতের ব্যবস্থা করা হবে। শিক্ষা, শিল্প, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং উৎপাদন খাতে গবেষণা ও উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। খেলাধুলা ও জাতীয় সংস্কৃতির উন্নয়নে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রতিহত হবে অনৈতিক আকাশ সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন।

    বিএনপির ২৭ দফা রূপরেখার ১৬ ও ২৬ ধারা একত্রিত করে একটি নতুন ধারা গঠন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও গণতান্ত্রিক ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত হবে।