ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব।বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদনে ধস, চরম দুর্ভোগে মানুষ
ঘূর্ণিঝড় মওকার প্রভাবে বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদনে ধস নেমেছে। এতে উপকূলীয় এলাকাসহ সারাদেশের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। রাজধানী ঢাকায় বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহের অবস্থা ভয়াবহ। আশঙ্কা করা হচ্ছে এই পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে উঠতে পারে। মওকার কারণে সৃষ্ট বিদ্যুৎ ও গ্যাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে কয়েকদিন সময় লাগতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় মওকার প্রভাব যে মারাত্মক হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ক্ষয়ক্ষতি না দেখে বলা মুশকিল মেরামত করতে কতদিন লাগবে। তবে দুর্যোগ মোকাবেলায় সক্ষমতা দেখিয়ে আসছে বাংলাদেশ। সেখানেও যতটা সম্ভব প্রস্তুতি রয়েছে। ফলে যত দ্রুত সম্ভব সবকিছু স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হবে বলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এই সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে গণমাধ্যমকে বলেন, খুব শিগগিরই গ্যাস ও বিদ্যুতের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। সূত্র জানায়, গত শুক্রবার রাত থেকে আমদানিকৃত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
তবে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে গ্যাসের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। শুক্রবার থেকে আরও ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ কমেছে। ফলে গ্যাসচালিত অধিকাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়েছে। দেশের মোট বিদ্যুতের অর্ধেকই গ্যাস দিয়ে উৎপাদিত হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে ৫ হাজার মেগাওয়াট। বর্তমানে সারা দেশে প্রমাণিত চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াট। সেখানে উৎপাদন নেমে এসেছে ৯ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটে। অর্থাৎ ঘাটতি কমবেশি ৭ হাজার মেগাওয়াট। রাজধানী ঢাকায় গতকাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় কয়েক ঘণ্টা লোডশেডিং চলছে। গ্রামাঞ্চলের অবস্থা আরও খারাপ। শিল্প, গৃহস্থালি ও সিএনজি স্টেশনে গ্যাসের ঘাটতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কক্সবাজার জেলার মহেশখালীতে আমদানি করা এলএনজি প্রক্রিয়াজাত করা হয়। সমুদ্র উপকূলে একটি এলএনজি টার্মিনাল রয়েছে। মওকার প্রধান টার্গেট বাংলাদেশের কক্সবাজার, উখিয়া, টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন ও আশপাশের এলাকা। ফলে এলএনজি টার্মিনালের মওকার কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে রোববার জানা যাবে। কত দ্রুত টার্মিনাল মেরামত করা যাবে তা নির্ভর করবে এই ক্ষতির উপর। শুক্রবার থেকে দৈনিক গ্যাসের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুটে। গত বৃহস্পতিবার পেট্রোবাংলা ২৮ কোটি ঘনফুট সরবরাহ করেছিল শনিবার তা নেমে আসে ২২০ মিলিয়ন ঘনফুটে। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, শুধু অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্র থেকে গ্যাস দিয়েই চাহিদা মেটানো হচ্ছে।
শনিবার রাজধানীর বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ছিল নাজুক। রাজধানী ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) এবং ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)। ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান জানান, শনিবার তার এলাকায় সর্বোচ্চ ৪৮০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে। ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাউসার আমীর আলী জানান, তার এলাকায় ৩৫০ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং হয়েছে। গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংগঠন পল্লী বিদ্যুত সমিতি জানায়, তাদের এলাকায় বিদ্যুতের ঘাটতি সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে।
রাজধানীর দক্ষিণ বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা জান্নাতুন নূর মেঘলা ফোনে বলেন, গতকাল অন্তত চারবার বিদ্যুৎ চলে যায়। প্রতিবার অন্তত এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। সারাদিন প্রচন্ড গরমে হাপাচ্ছে জীবন। কবে কষ্ট থেকে মুক্তি পাবেন জানতে চান তিনি।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তায় অবস্থিত অল ইন ওয়ান সিএনজি স্টেশনের টেকনিশিয়ান ওয়ালিউর রহমান বলেন, ঘাটতির কারণে গ্যাস সরবরাহ না হওয়ার কোনো নোটিশ আমরা পাইনি। কিন্তু আমাদের স্টেশনে গ্যাস নেই। অন্যদিকে দিনভর বেশ কিছু বিদ্যুৎ বিভ্রাট ছিল।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটির বিপরীতে অবস্থিত সিএনজি স্টেশনের ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, লাইনে গ্যাস থাকলে আমরা দিতে পারি, না থাকলে দিতে পারি না। তবে আমাদের যথেষ্ট তেলের মজুদ রয়েছে। অন্যদিকে আজ প্রায় সাত-আটবার বিদ্যুৎ চলে গেছে।