জাতীয়

সরেজমিন পদ্মা সেতু।ছুটির দিনে পদ্মাপাড়ে।অপেক্ষা এখন স্বপ্নের সেতু দিয়ে পারাপারের

মাদারীপুরের শিবচরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। হারুন-উর-রশিদ। অশান্ত পদ্মার ওপারে তাঁর শৈশব কেটেছে। মাধ্যমিক স্কুল শেষ করে তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য ঢাকায় চলে আসেন। পড়াশোনা শেষ করে তিনি এখন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হিসাবে ঢাকার কোর্ট অব সেটলমেন্টে কর্মরত। জীবনের এত বছর পরে পদ্মার একপাশ থেকে অন্য দিকে যাওয়ার স্বপ্নের সেতু এখন তাঁর সামনে। যে কারণে শুক্রবার তিনি স্ত্রী ও সন্তানের সাথে রাজধানী থেকে পদ্মপাড়ায় ছুটে আসেন। সন্তানের হাতে লাল-সবুজ পতাকা তিনজনই জাতীয় পতাকা বর্ণের পোশাক পরেছেন। নদীর তীরে দাঁড়িয়ে সে পানির বুকে নির্মিত পদ্মা সেতুর দিকে তাকাচ্ছে। আরও কথা বলতে বলতে সে ভুলে গেল। হারুন-উর-রশিদ। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন থেকেই পদ্মা নদীর চারপাশে কষ্টের দীর্ঘশ্বাস ফেলছিলাম। ঘন কুয়াশায় ঘন্টার জন্য ঘাটে আটকে থাকায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। স্বপ্ন, প্রত্যয় এবং সাহসের এক ঝলক তার অতীত সম্পর্কে স্মরণ করায় তাঁর মুখ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি বলেন যে, ঢাকা থেকে বাড়ি যাওয়ার আগে সময় লাগতো -৮-১০ ঘন্টা, তবে পদ্মা সেতুর কারণে রাস্তাটি মাত্র এক ঘন্টার মধ্যে পার করা যায়। এটি লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনকে বদলে দেবে।

বৃহস্পতিবার পদ্মা সেতুতে শেষ স্প্যানটি বসার পর থেকে দেশের মানুষ আবেগে ভাসছেন। অনেক মানুষ এখন সেই দিনগুলি গণনা করছে যখন তারা এই স্বপ্নের সেতুটি দিয়ে পদ্মা নদী পার হবেন।

শুক্রবার পদ্মা সেতু দেখতে হারুন-উর-রশিদের মতো কয়েক হাজার মানুষ নদীর তীরে ছুটে আসেন। মুন্সীগঞ্জের পুরাতন মাওয়া ঘাট ও শিমুলিয়া ঘাট সহ বিভিন্ন পয়েন্টে মানুষের ভিড় ছিল। দর্শনার্থীরা দূর থেকে সেতুটি দেখছেন। অনেকে মোটর চালিত নৌকাগুলিতেও ব্রিজের নীচের চারপাশে ঘুড়ে দেখছেন তাদের কেউ কেউ সেতুর কিনারে গিয়ে সেলফি তোলেন।

ঢাকার দোহারের নবাবগঞ্জ থেকে, ৯ সদস্যের ছাত্রদের একটি দল মাওয়া ঘাটে পদ্মা সেতু দেখতে ৪৭ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়েছে। নদীর তীর ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় তারা ব্রিজটি দেখে ছবি তোলেন। এই দলের কামরুল ইসলাম বলেন, আমি গতকাল আসতে পারিনি, আজ আমি ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে এসেছি। বিজয়ের মাসে এমন জয় আমাদের অভিভূত ও আনন্দিত করে তুলেছে।

বাসচালক আজিজুর রহমান জানান, পদ্মা নদীর কারণে ফরিদপুরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ টি জেলা ঢাকা থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এক্সপ্রেসওয়েটি গত মার্চ মাসে চালু হয়েছে। এবার পদ্মা সেতু চালু হলে সরাসরি বাস সার্ভিস বাড়বে। এতে অনেক কম সময় লাগবে।

একটি বেসরকারী ব্যাংকের কর্মকর্তা আনিসুল হক তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পদ্মার তীরে বেড়াতে যান। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু আমার জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল। এই সেতুটি স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের সর্বাধিক সম্ভাবনার একটি প্রমাণ। এই ব্রিজটি বিশ্ব মানচিত্রে নিজেকে স্বীকৃতি দেওয়ার এক অনন্য উদাহরণ হতে পারে।

এই দিকে, স্থানীয়রা পদ্মা সেতু সংলগ্ন এলাকায় একটি পর্যটন কেন্দ্র বিকাশের সম্ভাবনা দেখছেন। ইতিমধ্যে, পার্শ্ববর্তী অঞ্চলটি বেশ ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ বেড়াতে আসছেন। প্রতিদিন তাদের সংখ্যা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। সেতুর অবকাঠামো, মৃদু বাতাসের স্পর্শ এবং পদ্মার জলে নৌকা বাইচানোর সুযোগ আর মিস হবে না।

Leave a Reply