রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।মস্কোর বড় আঘাত
প্রায় দুই মাস শান্ত থাকার পর আবারও ইউক্রেনে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। শুক্রবার ভোর হওয়ার আগে দেশটি রাজধানী কিয়েভ, কেন্দ্রীয় শহর উমান এবং ডিনিপ্রোতে ধারাবাহিক বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এতে অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু উমানেই ১৭ জন মারা গেছেন। এখানে আবাসিক ভবনে হামলার কারণে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে এই ভয়াবহ হামলার জবাব দিতে প্রস্তুত ইউক্রেন। রাশিয়ার ওপর আরো নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য মিত্রদের প্রতি আবারো আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। তবে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, ইউক্রেনের সামরিক রিজার্ভ ইউনিট ধ্বংস করতেই এই হামলা চালানো হয়েছে।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উমানের কেন্দ্রীয় শহরে একটি উচ্চ ভবনে হামলায় শিশুসহ ১৭ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া স্থানীয় মেয়র জানান, ডিনিপ্রো শহরে এক মা ও তার শিশুকন্যাকে হত্যা করা হয়েছে। উমানের আবাসিক এলাকায় প্রায় ৮০ হাজার মানুষ বাস করে। সেখানে উদ্ধার অভিযান চলছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন আরআইএ বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, গতকালের হামলাটি রাশিয়ান রিজার্ভ ইউনিটকে লক্ষ্য করে। রাশিয়ান বাহিনী এমন অস্ত্র ব্যবহার করেছে যা আজ নির্ভুল লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারে।
ভয়াবহ হামলার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, উমানে অন্তত ১০টি আবাসিক ভবনে হামলা হয়েছে। তিনি বলেন, এই হামলাগুলো দেখায় যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ প্রয়োজন। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, রাশিয়াকে রুখতে বৈশ্বিক নিষেধাজ্ঞা বাড়াতে হবে। এ ছাড়া, তিনি আরও দাবি করেছেন যে এই আক্রমণগুলি ব্যর্থ হবে এবং রাশিয়ায় শাস্তির মুখোমুখি হবে।
কিয়েভের সামরিক প্রশাসনের প্রধান বলেছেন যে এটি ৫১ দিনের মধ্যে রাজধানীতে প্রথম রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। তবে এখানে কেউ হতাহত হয়নি।
রুশ বাহিনীর ছোড়া ৩২টি ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে ২১টি এবং দুটি ড্রোন ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনীর দ্বারা গুলি করা হয়েছে, কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তারা বলেছে যে কিয়েভে ৯টি ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করা হয়েছে।
এদিকে ইউক্রেনের বাহিনী এই হামলার জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে। তারা বলেছে যে তারা পশ্চিমা মিত্রদের সরবরাহ করা ট্যাঙ্ক এবং নতুন সরঞ্জাম দিয়ে প্রতিশোধ নেবে।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ শুক্রবার এক অনলাইন ব্রিফিংয়ে বলেছেন, “আল্লাহর ইচ্ছা, আবহাওয়া এবং কমান্ডারদের সিদ্ধান্তের পরই হামলা শুরু হবে।”
রাশিয়া কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর বাখমুতের নিয়ন্ত্রণের জন্য ১০ মাসের দীর্ঘ যুদ্ধ এবং শীতকালীন আক্রমণের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে লড়াই করেছিল। শহরটি ইতিমধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে। রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী মারাত খুশনুলিন গতকাল ওই শহর পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, পরিদর্শনকালে এলাকা পুনর্নির্মাণ করা হবে।
ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে জাতিসংঘ। জাতিগত বৈষম্য দূরীকরণ কমিটি গুম, নির্যাতন, ধর্ষণ এবং বিচারবহির্ভূত মৃত্যুদন্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
এক বিবৃতিতে কিমিতি বলেন, তালিকাভুক্ত অভিযোগের মধ্যে রয়েছে বলপ্রয়োগ, নির্বিচারে আটক, হত্যা এবং ইউক্রেন থেকে শিশুদের জোরপূর্বক রাশিয়ায় স্থানান্তর। তবে শিশুদের রাশিয়ায় স্থানান্তরের কথা অস্বীকার করেছে মস্কো। তাদের দাবি, যুদ্ধ থেকে তাদের নিরাপদ রাখতে মস্কো তাদের সরিয়ে দিয়েছে।