অর্থ পাচারকারীদের কোনো তথ্য নেই, হাত গুটিয়ে বসে দুদক
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কবে বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের তালিকা ও তথ্য পাবে, কবে পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনা যাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এখন পর্যন্ত দেশি-বিদেশি কোনো সংস্থার কাছ থেকে অর্থ পাচারকারীদের তথ্য পায়নি সংস্থাটি। ফলে তথ্যের অভাবে বসে থাকতে হচ্ছে দুদককে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে কমিশন বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের তালিকা চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। কারণ ওই সময় অর্থপাচার নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বক্তব্য ছিল। বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, অর্থ পাচারকারীদের নাম ও তথ্য তাদের কাছে রয়েছে। দুই বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ পাচারকারীদের তালিকা পায়নি দুদক। তালিকা আছে কি না, বিদেশ থেকে তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে কি না বা সংশ্লিষ্ট দেশে চিঠি দেওয়া হয়েছে কি না- এ বিষয়ে অনেক দিন ধরেও কিছু জানায়নি মন্ত্রণালয়।
জানা যায়, কানাডা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, দুবাই, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারকারী বাংলাদেশিদের তালিকা ও তথ্য চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে দুদক। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) মাধ্যমে এ তথ্য চাওয়া হয়েছে। অর্থ পাচারকারীদের নাম ও তথ্য জানতে বিভিন্ন দেশে শত শত মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসটেন্স রিকোয়েস্ট (এমএলআর) পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কোনো সাড়া মেলেনি।
সম্প্রতি দুবাইতে ৩১৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের মোট ৯৭২টি বাসভবনের মালিক ৫৪৯ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে দুদকের কাছে অভিযোগ উঠেছে। ফলে সে দেশ থেকে এ তথ্য সংগ্রহ করে দেওয়ার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিএফআইইউকে আবারও চিঠি দিয়েছে দুদক। দুদক কমিশনার (গবেষণা) ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ পাচারকারীদের তালিকা চেয়ে বিএফআইইউ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। এখন পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ,পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মানি লন্ডারিং নিয়ে কাজ করছে।তাদের কাছ থেকেও কার্যকর সহায়তা চাওয়া হয়েছে।মানি লন্ডারিংকারীদের বিরুদ্ধে দুদকের ব্যবস্থা চলছে, চলবে।যথাযথ প্রমাণ পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে পদ্ধতিগত দুর্বলতা ও যথাযথ ফলোআপের অভাবে অর্থ পাচারকারীদের তথ্য সামনে আনতে পারছে না দুদক, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে দুদকের নিজস্ব সক্ষমতা না থাকলে যেকোনো বিশেষজ্ঞ বা প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নিতে পারে। তারা ওইসব দেশে যোগাযোগ করে তথ্য আনবে। আন্তর্জাতিক চুক্তি আইনে বিভিন্ন দেশের কাছে তথ্য চেয়েছে দুদক। সেসব দেশ তথ্য না দিয়ে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে।
দুদক সূত্র জানায়, বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন দেশের অর্থ পাচারকারীদের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। এমএলএআরদের বিদেশে পাঠিয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য একবার ‘অক্টোখান’ নামের একটি সংস্থার সঙ্গে দুদকের চুক্তি হয়েছিল। এরপর নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে চোরাকারবারিদের তথ্য ও অর্থ দুটোই দেশে চলে আসে। এখন আবার পাচারকারীদের চিহ্নিত করে ট্রাফিকের টাকা ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নেওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশের কিছু নাগরিক বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার করে প্রচুর সম্পদ গড়ে তুলছে বলে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর আসছে। বিদেশে তাদের বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, বাড়ি, মার্কেট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিছু পাচারকারী বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্বও নিয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত পানামা পেপারস, প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারি, কানাডার বেগমপাড়া, মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোমসহ বিভিন্ন ঘটনায় কয়েকজন অর্থ পাচারকারীর নামও উঠে এসেছে। কিন্তু দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কাছে চাওয়ার পরও তাদের তালিকা ও প্রমাণ না পাওয়ায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।
দুদক ছাড়াও আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের তথ্য সংগ্রহ ও তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- বিএফআইইউ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।