জাতীয়

খরচ বেশি, কোটা পূরণ হচ্ছে না

এ বছর অস্বাভাবিক মূল্যে হজ প্যাকেজ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হলেও সরকার খরচ কমানোর ঘোষণা দেয়নি। এ অবস্থায় ৭ দফা সময় বাড়ানোর পরও হজযাত্রীদের কোটা পূরণ হচ্ছে না। এরই মধ্যে আগামী বছর হজের খরচ আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এদিকে হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানিয়েছে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)।

রোববার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং সৌদি আরবের হারাম শরীফের কাছে বিভিন্ন হোটেল ভেঙে ফেলার কারণে এ বছর হোটেল ভাড়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। ফলে বেশি দামে হোটেল ভাড়া নিতে হচ্ছে। এ বিবেচনায় চলতি বছরের হজ প্যাকেজ কম বেশি বলা চলে। আগামী বছরগুলোতে হজ প্যাকেজের দাম আরও বাড়তে পারে বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ভাঙা বাড়ি বা হোটেল নির্মাণের কাজ শেষ হতে ২ থেকে ৩ বছর সময় লাগবে। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে চলতি বছরের হজ প্যাকেজে হজযাত্রীদের নিবন্ধন করতে অনুরোধ করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

এবার বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজযাত্রী সৌদি আরবে পবিত্র হজ পালনের অনুমতি পেয়েছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন হজ পালনের কথা রয়েছে। কিন্তু হজের খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই প্রাক-নিবন্ধন করে শেষ পর্যন্ত হজে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফলে কোটা বাকি থাকায় হজ নিবন্ধন ৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। রোববার রাত ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হজ কোটা পূরণে আরও প্রায় নয় হাজার লোকের নিবন্ধন প্রয়োজন। গতবারের চেয়ে এবার হজে খরচ হচ্ছে দেড় লাখ টাকা বেশি।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন: এদিকে, হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এইচএবি) বিমান বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি স্বাধীন কারিগরি কমিটি গঠন করে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছে। গতকাল জারি করা এক চিঠিতে সংস্থাটি বলেছে যে ২০২৩ সালে হজ করা বেশিরভাগ হজযাত্রী ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে প্রাক-নিবন্ধিত এবং সেই সময়ে প্রণীত আর্থিক বাজেটে হজের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু হজযাত্রীদের জন্য অতিরিক্ত বিমান ভাড়াসহ হজের খরচ বৃদ্ধি করায় ইতিমধ্যেই হজযাত্রীদের পাশাপাশি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ জানিয়েছে হাব।

একইদিন বিকেলে রিলিজিয়াস রিপোর্টার্স ফোরাম (আরআরএফ) আয়োজিত ‘ঘোষিত হজ প্যাকেজ-২০২৩ ও ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক সেমিনারেও হজ প্যাকেজের অস্বাভাবিক চিত্র তুলে ধরা হয়। হজে খরচ বাড়ার হার বেশি হওয়ার কথা স্বীকার করে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান অনুষ্ঠানে বলেন, ডলার ও রিয়ালের দাম বাড়ায় হজ প্যাকেজের দাম বাড়াতে হয়েছে। সৌদি আরবে হজ সেবার মূল্য বৃদ্ধির কারণে। আগামী বছর বিমান ভাড়া কম রাখা যায় সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানান তিনি।

হাবের সভাপতি এম শাহাদাত হোসেন তসলিম বলেন, হজের খরচ বাড়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে বিমান ভাড়া অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। তিনি বলেন, করোনার কারণে গত কয়েক বছরে যারা হজে যেতে পারেননি তারা এবার যাচ্ছেন। কিন্তু খরচ বেড়ে যাওয়ায় আগামী বছর অর্ধেক হজযাত্রী পাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

আরআরএফ-এর সভাপতি ও দৈনিক আজকের বিশেষ প্রতিনিধি উবায়দুল্লাহ বাদলের সভাপতিত্বে সেমিনার পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও নিউ নেশনের সিনিয়র রিপোর্টার কামরুজ্জামান বাবলু।

ওমরাহ তীর্থযাত্রীদের জন্য অতিরিক্ত নগদ বহন না করার পরামর্শ: সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় পবিত্র ওমরাহ পালনে যাওয়া তীর্থযাত্রীদের খুব বেশি নগদ ও দামী গহনা বহন না করার পরামর্শ দিয়েছে। সৌদি গেজেট জানিয়েছে, হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের টুইটারে এক পোস্টে এসব পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ওমরাহ যাত্রীরা সর্বোচ্চ ৬০,০০০ সৌদি রিয়াল বা ১৬,০০০ ডলার নিতে পারবেন।

মন্তব্য করুন