শিক্ষা

প্রভোস্টের গাফিলতি প্রক্টরের উদাসীনতা।ইবিতে শিক্ষার্থী নির্যাতন

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ অন্তত ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট শামসুল আলম, হাউজ টিউটর মৌমিতা আক্তার, ইশরাত জাহানসহ অন্যরা এ ঘটনায় চরম অবহেলা করছেন। এ ছাড়া প্রক্টর শাহাদাত হোসেনের কর্মকাণ্ড উদাসীন ও স্বার্থান্বেষী মহলের।

গতকাল বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় গঠিত পৃথক দুটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। রাষ্ট্রপক্ষে এ প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি। রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী গাজী মো. মহসিন প্রাথমিক শুনানি শেষে এ বিষয়ে আদেশের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে। এ ছাড়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইনে প্রণীত বিধি-বিধান সংগ্রহ করে দেখাতে বলা হয়েছে এবং ইবির পক্ষে কোনো আইনজীবী থাকলে তাকে আদালতের শুনানিতে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় কোষাগার শেখ হাসিনা হলের কমনরুমে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ করেন অর্থ বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী মো. ঘটনার বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন যুক্ত করে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রিট করেন ইবির সাবেক এই শিক্ষার্থী। মহসিন রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন, নির্যাতনের শিকার ছাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত থাকায় সানজিদা চৌধুরী ও ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তাবাসসুমকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়। তিন সদস্যের কমিটিতে প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা, জেলা জজ কর্তৃক মনোনীত একজন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী অধ্যাপক থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া একই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত কমিটির প্রতিবেদনও হাইকোর্টে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় সিলমোহর নিয়ে আদালতে পৃথক প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরে তিনি আদালতে প্রতিবেদনের দুটি অংশ পড়ে শোনান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের ছাত্রী সানজিদা চৌধুরী ফুলপরীতে র‌্যাগিং, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশক এবং নৃশংসতার নির্দেশদাতা। অমানবিক ও জঘন্য ঘটনা। হালিমা আক্তার মুন্নি, ইশরাত জাহান মীম, তাবাসসুম ইসলাম, মায়াবিয়া জাহান ওই অমানবিক, নৃশংস, ঘৃণ্য, জঘন্য ঘটনার সাথে জড়িত এবং তাদের দ্বারাই এ ঘটনা ঘটেছে। তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ফুলপরীকে নির্মম নির্যাতন করে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘটনাটি পূর্ব পরিকল্পিত। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, হালমিয়া আক্তার মুন্নি, ইশরাত জাহান মীম, তাবাসসুম ইসলাম ও মায়াবিয়াকে সরাসরি নির্যাতন করা হয়েছে। তাবাসসুমের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলা হয়েছে, ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের ডাইনিং রুমে ফুলপরীকে নির্মম নির্যাতনের সময় ভিডিও ধারণ করেন উর্মি ও মীম। কিন্তু কোনো ভিডিও রেকর্ড পাওয়া যায়নি। এছাড়া কমনরুমে উপস্থিত ছাত্রীদের জবানবন্দির ভিত্তিতে আল-আমিন ফুলপরীকে হুমকি দিয়েছেন বলে জানা গেছে। হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ফুলপরীকে এক এক করে চড় মারার নির্দেশ দেন। আর লিমা ফুলপরীর মোবাইল কেড়ে নেয় এবং সবাই ফুলপরীকে অন্তরার পা ধরে রাখতে বাধ্য করে। এ ছাড়া প্রভোস্ট হলে থাকা অবস্থায় অন্তরা, তাবাসসুম, মীম, ঊর্মি, মায়াবিয়াসহ অন্যরা ফুলপরীকে তার হাত ধরে উত্ত্যক্ত করে। একপর্যায়ে প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলমকে জামিন দিতে বাধ্য করা হয়। গত ২০ ফেব্রুয়ারি ফুলপারীর বাম গালে কালো দাগ নিয়ে জবানবন্দি নেওয়া হয়। শামসুল আলম, সহকারী রেজিস্ট্রার আব্দুর রাজ্জাক, কর্মকর্তা হালিমা খাতুন, একজন আয়া, ডাইনিং ম্যানেজার সোহেল রানা, হাউস টিউটর মমিতা আক্তার, ইসরাত জাহান ফুলপরী ইস্যুতে দায়িত্বে চরম অবহেলা ও চরম অবহেলার শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া প্রক্টর শাহাদাত হোসেন আজাদও উদাসীন। প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর আদালত রাষ্ট্রপক্ষের কাছে জানতে চান, এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এরপর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এ পর্যন্ত পাঁচজনকে হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন