আজ জেলা পর্যায়ের পদযাত্রা।বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি
চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে সারাদেশে একযোগে শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। আজ ৬৬টি সাংগঠনিক জেলা সদরে পদযাত্রা করবে দলটি। সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবির অংশ হিসেবে একযোগে এ কর্মসূচি পালন করবেন নেতাকর্মীরা। ১০ দফা দাবি আদায়ে ধারাবাহিক কর্মসূচির মাধ্যমে জেলা পর্যায়ে তাদের সাংগঠনিক সক্ষমতা প্রমাণের চ্যালেঞ্জও রয়েছে তাদের। এ কারণে বিএনপিসহ অঙ্গ সংগঠনগুলো ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। দলের হাইকমান্ডও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। এদিকে জেলায় দায়িত্বশীল নেতারা প্রস্তুতি সভা করছেন। প্রতিটি জেলায় কেন্দ্র থেকে সিনিয়র নেতাদের সমন্বয়ে সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে; কে এই কর্মসূচির নেতৃত্ব দেবেন।
সূত্র জানায়, চলমান আন্দোলনে জনগণকে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করতে দলের হাইকমান্ড বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। বিভাগীয় সদরে সমাবেশের মাধ্যমে বড় শোডাউনের পর জেলা পর্যায়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের শক্তিশালী করতে চায় বিএনপি। এ কর্মসূচি থেকে আগামী ৪ মার্চ একযোগে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তবে কী কর্মসূচি আসবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। নতুন কর্মসূচি হিসেবে মহানগরীর থানা ও ওয়ার্ডে পদযাত্রার বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে। সমমনা দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে শিগগিরই তা ঘোষণা করা হবে।
গত ২৪ ডিসেম্বর নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবি নিয়ে ঢাকার বাইরে জেলা ও শহরে একযোগে আন্দোলন শুরু করে বিএনপি। তবে গত ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় আওয়ামী লীগের সম্মেলনের কারণে কর্মসূচি পালিত হয়। এরপর ১১ জানুয়ারি অবস্থান কর্মসূচি, ১৬ ও ২৫ জানুয়ারি প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ, ৪ ফেব্রুয়ারি বিভাগীয় গণসমাবেশ, ১১ ফেব্রুয়ারি ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা, ১৮ ফেব্রুয়ারি মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি।
ঘোষিত প্রতিটি কর্মসূচি পালনে নেতাকর্মীদের জন্য বিএনপির হাইকমান্ডের কঠোর বার্তা রয়েছে বলে জানা গেছে। যেখানে শিথিল কর্মসূচি পালন করা হবে বা কোনো কারণে কর্মসূচি ব্যর্থ হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি রয়েছে। প্রয়োজনে জেলা নেতাদের শহর ছেড়ে শহরতলিতে যেতে বলা হয়েছে। দলের কেন্দ্র থেকে প্রতিটি কর্মসূচি মনিটরিংয়ের জন্য সেল গঠন করা হয়েছে। এ নিয়ে জেলার নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
ঢাকা জেলায় পদযাত্রায় নেতৃত্ব দেবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, অনির্বাচিত ও জোরপূর্বক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়েছে। তাদের কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শুধু দলীয় নেতা-কর্মীরাই নয়, যুগপৎ আন্দোলনে সামিল হচ্ছেন দেশের সাধারণ মানুষ। তাদের চলমান আন্দোলন কোনো এক পর্যায়ে চূড়ান্ত করা হবে।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিদ্যুৎ, গ্যাস, চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য হ্রাস ও দমন এবং খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তি এবং জনগণের বিরোধিতার জন্য জেলায় ১০ দফা দাবি জানানো হয়। দুর্ভোগ, সরকারের পদত্যাগ, অবৈধ সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। মঞ্চে এই পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। জেলা পর্যায়ের নেতারা জানান, সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মসূচির পর থেকে জেলা পর্যায়ে এ পদযাত্রা সফল করতে নিয়মিত বাড়ি ও উঠান বৈঠকের পাশাপাশি লিফলেট বিতরণের মতো কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন। প্রতিটি ইউনিয়নে বাজারে প্রচারণা চালিয়েছেন। এ কর্মসূচিতে বিপুল সংখ্যক লোকের সমাগম ঘটাতে তারা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ ইমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করবেন। সারাদেশের প্রতিটি জেলায় পদযাত্রা সফল করতে তারা সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে দুই জোটের বৈঠক : যুগপৎ আন্দোলন সমন্বয় করতে গতকাল বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছেন ১২ দলীয় জোট, এলডিপি ও জাতীয়তাবাদী জোটের শীর্ষ নেতারা। সভায় সমমনা দলগুলোর ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী ৪ মার্চ সারাদেশের প্রতিটি মহানগরে থানা থেকে থানা পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আজ এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। . এ ছাড়া আসন্ন অনশনের আগে ১১ ও ১৮ মার্চ আরও দুটি কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়েও নেতারা আলোচনা করেন। এই অনুষ্ঠানগুলি পদযাত্রার মধ্যেও সীমাবদ্ধ থাকতে পারে।