• বাংলা
  • English
  • অর্থনীতি

    ডলার সরবরাহের গতিতে সামান্য উন্নতি।এলসি খোলা বাড়লেও কিছু ক্ষেত্রে সংকট রয়েছে

    রপ্তানি ও রেমিটেন্স ইতিবাচক ধারায় ফিরে এসেছে। তবে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপের কারণে আমদানি কমছে। এর বাইরেও ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব কারণে ডলার সরবরাহ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে ডলার ক্রয়-বিক্রয়ের স্বাভাবিক গতি এখনো ফিরে আসেনি।

    বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে প্রতি মাসে ৩ হাজার ২৪৫ মিলিয়ন ডলার বা গড়ে ৪৬৪ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় হয়েছে। নভেম্বর, ডিসেম্বর এবং জানুয়ারিতে প্রতি মাসে রপ্তানি গড়ে ৫.২ বিলিয়ন। আবার জানুয়ারিতে প্রবাসী আয় বেড়ে ১৯৬ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আগের মাস ডিসেম্বরে যা ছিল ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের নিচে। চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ৬৪ কোটি ডলার। ফলে ফেব্রুয়ারিতেও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আমদানি কমাতে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত এলসি মার্জিনসহ বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্যে তদারকি জোরদার করা হয়েছে, ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে আমদানি ব্যয় ২ দশমিক ১৫ শতাংশ কমে ৩ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা হয়েছে।

    বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অনেক দিন পর সার্বিকভাবে ব্যাংকগুলোর ডলার হোল্ডিংয়ের নেট ওপেন পজিশন লিমিট (এনওপি) ইতিবাচক ধারায় এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার এনওপি দাঁড়িয়েছে ৮ মিলিয়ন ডলারে। সাম্প্রতিক অতীতে, ৩০ নভেম্বর ৫১.৫৪ মিলিয়ন ডলারে NOP নেতিবাচক ছিল। গত সোমবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৩৩ মিলিয়ন ডলার। কিছু দিন আগে এটি ছিল ২০০ মিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। ডলার সরবরাহ কিছুটা উন্নত হওয়ায় এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে গত সোমবার ব্যাংকগুলোতে মোট ২ হাজার ২০০টি এলসি খোলা হয়েছে। এখন দৈনিক গড় এলসি ওপেনিং ১৫০০ থেকে ২০০০ এমনকি দুই মাস আগেও তা ১০০০ ছুঁয়েছে। তবে আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলার লেনদেনের গতি স্বাভাবিক হয়নি। যে কারণে ছোট ব্যাংকের সংকট আগের মতোই রয়ে গেছে।

    বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এলসি খোলার কোনো ঘাটতি নেই, তারপরও কাঙ্ক্ষিত এলসি খুলতে না পারার কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা। গত রোববার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আসন্ন রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনীয় রাখার বিষয়ে মতবিনিময় সভা করে। ওই বৈঠকে দেশের অন্যতম প্রধান ভোগ্যপণ্য সরবরাহকারী সিটি গ্রুপ এবং টিকে গ্রুপের প্রতিনিধিরা জানান, বিভিন্ন পর্যায়ে দৌড়াদৌড়ি করেও তারা ডলারের জন্য আশানুরূপ এলসি খুলতে পারছেন না। এলসি খোলা হয় কিন্তু সময়মত দায় ক্লিয়ার না হওয়ার কারণে পণ্য খালাসে বিলম্ব হয়। তাদের জরিমানা দিতে হবে। যদিও পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে জানান তারা।

    জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, রপ্তানি ও রেমিটেন্স বৃদ্ধি এবং আমদানি কমে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার বাজার পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে আন্তঃব্যাংক লেনদেন এখনো স্বাভাবিক হয়নি। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন আমদানি কম রাখা হলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ধীর হয়ে যাবে, যা কাম্য নয়। ফলে এখন রপ্তানি ও রেমিটেন্স বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে।

    একটি বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান বলেন, বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপের কারণে ছয় মাস ধরে নতুন এলসি কমছে। এতে আমদানি দায় পরিশোধে ব্যাংকগুলোর চাপ কমে। তার মতে, নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা শিথিল করা হলেও ভবিষ্যতে এ ধারা অব্যাহত থাকবে। কারণ পণ্যের দাম বাড়ায় চাহিদা তেমন বাড়বে না।

    ব্যাংকাররা জানান, ডলার সংকট শুরু হওয়ার পরও ক্ষুদ্র আমদানিকারকদের সমস্যা রয়েছে। একসঙ্গে অনেক এলসি আমদানিতেও সমস্যা রয়েছে। বড় আমদানিকারকদের সমস্যার মূল কারণ হলো, তারা ছয় মাস এক বছর পর এলসি খুলতে চায় না। এর প্রধান কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ সুদের হার বৃদ্ধির পর স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এক বছর আগেও এ ধরনের ঋণের সুদের হার ছিল তিন থেকে পাঁচ শতাংশ। অন্যদিকে আমদানি দায় মেটাতে গড়ে ১০৭ থেকে ১০৯ টাকা খরচ হচ্ছে। এক বছরে রুপির বিপরীতে ডলারের দাম ২৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে। সুদের হার বৃদ্ধি এবং ভবিষ্যতে মুদ্রার আরও অবমূল্যায়নের ভয়ে, বড় ব্যবসায়ীরা ‘সাইটে পেমেন্ট’ বা নগদ অর্থ প্রদানের শর্তে এলসি খুলতে চাইছেন।

    বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, রমজান ও দুই ঈদকে সামনে রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি খোলা বেড়েছে। ব্যাংকগুলোর ডলার ধারণ পরিস্থিতি থেকে পরিস্থিতির উন্নতি দেখা যায়। ইতিমধ্যে এনওপি একটি ইতিবাচক প্রবণতায় এসেছে। রপ্তানি ও রেমিটেন্স বৃদ্ধির কারণে বৈদেশিক মুদ্রার বাজার পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে।

    মন্তব্য করুন