বিএনপির মিছিল।অনেক জায়গায় হামলা, সংঘর্ষ, কর্মসূচি পন্ড
ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী লীগ ও পুলিশ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনেক জায়গায় বড় দুই দলের কর্মীরাও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। আহত হন বহু মানুষ। পুলিশ গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে অনেক বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। সরকারি দল ও পুলিশের হামলা ও বাধার কারণে কোথাও কোথাও বিএনপির কর্মসূচি স্থবির হয়ে পড়েছে। এছাড়াও দলটির নেতাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িতে হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের খবর পাওয়া গেছে। গ্রেফতার আতঙ্কে কর্মসূচি স্থগিত করার ঘটনাও ঘটেছে।
সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে শনিবার প্রথমবারের মতো সারাদেশে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা ও সমাবেশ করেছে বিএনপি। এদিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ করে।
লক্ষ্মীপুরে দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে দুই শতাধিক আহত হয়েছেন। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দিঘলী, মান্দারী, জকসিন, রায়পুরের চরবংশী, কমলনগরের চরকাদিরায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। জামালপুরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষে ২৮ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ৩৪ রাউন্ড গুলি ও ৪ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। নোয়াখালী ও ভোলায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলায় ৫০ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া লালমনিরহাটে ৩০ জন, বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে ২০ জন, নাটোরে সংঘর্ষে ১২ জন, পাথরঘাটায় ৩০ জন, সিরাজগঞ্জে ২০ জন, যশোরে ১৫ জন, ঝালকাঠিতে ১০ নেতাকর্মী এবং আড়াইয়ে পুলিশের গুলিতে ১৫ জন আহত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের হাজার। পাবনায় মিছিলে হামলায় ২০ জন আহত; গ্রেফতার করা হয়েছে পাঁচজনকে।
বগুড়ার শেরপুর, খুলনার তিন উপজেলা, মুন্সীগঞ্জের লাউহজং ও সিরাজদিখান, ঢাকার ধামরাই, নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় থমকে গেছে বিএনপির পদযাত্রা। কর্মসূচিকে ঘিরে বিএনপির অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জে ৩৯ জন, যশোরে ১৪ জন, বগুড়ায় ১৪ জন, জামালপুরে ৬ জন, নেত্রকোনায় ৫ জন, মানিকগঞ্জে ৭ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সারাদেশে কর্মসূচি তুলে ধরে বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। তারা সেই তথ্য সংগ্রহ করছে। রোববার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে। তবে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ৫০টি স্থানে হামলার খবর পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন তিন শতাধিক। তাদের অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গ্রেফতার করা হয় দুই শতাধিক। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে বলে জানান তিনি।
শেরপুরে গ্রেফতার আতঙ্কে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। তবে জেলার ৫২টি ইউনিয়নে ব্যাপক জনসমাগমে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নড়াইলে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ হলেও অধিকাংশ ইউনিয়নে মিছিল করতে পারেনি বিএনপির অভিযোগ।
হামলা, সংঘর্ষ: জামালপুরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে পুলিশসহ উভয়পক্ষের অন্তত ২৮ জন আহত হয়েছে। সদর উপজেলার তিতপল্লা ইউনিয়নের কমলখান বাজারে এ ঘটনা ঘটে। জামালপুর থানার ওসি কাজী শাহনেওয়াজ জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৩৪ রাউন্ড গুলি ও ৪ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করা হয়। এ ঘটনায় ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদকসহ ছয়জনকে আটক করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ৪০ রাউন্ড গুলি ও তিনটি কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সাতগ্রাম ইউনিয়নের পাঁচরুখী এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে তিন পুলিশ সদস্য ও বিএনপি ও ছাত্রদলের ১৩ নেতাকর্মী আহত হন।
ভোলার বিভিন্ন ইউনিয়নে হামলায় অর্ধশতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। শুক্রবার রাত থেকে বরিশালের গৌরনদীর খাঞ্জাপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাতে ইউনিয়নের মাগুরা বাজারে বিএনপি সমর্থকদের একটি বাসা, তিনটি দোকান ও একটি মুদি দোকান ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। অন্যদিকে, মেহেন্দিগঞ্জের উলনিয়ায় পদযাত্রা শেষে দুবার হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ নেতাকর্মী। বিএনপির হামলায় আহত হয়ে তাদের ছয় নেতাকর্মীকে মেহেন্দিগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে দাবি করেছে আওয়ামী লীগ।
লালমনিরহাটে বিএনপির মিছিল ও আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশকে ঘিরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া হাতীবান্ধার ফকিরপাড়া ইউনিয়নে মিছিলের প্রস্তুতিকালে আওয়ামী লীগের কর্মীদের হামলায় বিএনপির পাঁচ সদস্য আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।