শিক্ষা

‘লেখতে না পারা’ মেয়েটি জিপিএ-৫ পেলেন

হাঁটতে পারে না। চলাফেরার একমাত্র মাধ্যম হুইল চেয়ার। হাত দিয়েও কাজ করা যায় না। তবে হাল ছাড়েননি জ্যোতি হোসেন। যশোরের ঝিকরগাছার এই অদম্য ছাত্রী শ্রুতি লেখকের সহযোগিতায় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেন। বুধবার প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে জিপিএ-৫ পেয়ে সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন জ্যোতি।

জ্যোতি ঝিকরগাছা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পারবাজারের অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল কাদের ও রেপোনা হোসেনের বড় মেয়ে। কিন্তু হাত বা পা দিয়ে লিখতে পারেন না। ‘শ্রুতি উক্তার’ নিয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। ‘শ্রুতি লেখক’ ছিলেন তার ছোট বোন জেবা হোসেন।

এর আগে এসএসসি, জেএসসি ও পিইসিতে একই ফল পেয়েছিল জ্যোতি। এবার তিনি ঝিকরগাছা সরকারি শহীদ মশিউর রহমান কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। তার স্বপ্ন আবহাওয়াবিদ হওয়ার।

জ্যোতি ২০০২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। জন্ম থেকেই তিনি অন্যান্য শিশুদের মতোই ছিলেন। ২০০৭ সালে একটি দুর্ঘটনা তার জীবনকে উল্টে দেয়। নানাবাড়ি থেকে ভ্যানে করে ফিরছিলেন তিনি। পথে চাকায় ওড়না বেঁধে গলায় ফাঁস দিয়ে গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় সারা শরীর অবশ হয়ে যায়। এরপর দেশে-বিদেশে চিকিৎসা নিলেও জ্যোতিকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারেননি চিকিৎসকরা।

মেয়েটির মা রেপোনা হোসেন জানান, জ্যোতি ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখার প্রতি খুব আগ্রহী ছিল। অসুস্থতা সত্ত্বেও তিনি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। পারবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে পিইসি পরীক্ষা দেন। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির সময় শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে কয়েকটি স্কুল ভর্তি হতে চায়নি। ঝিকরগাছার পাইলট হাইস্কুল ফর গার্লস-এ ভর্তি হন বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে। প্রতিদিন মেয়ের হুইলচেয়ার ঠেলে স্কুলে যাতায়াত করেছেন তিনি। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে জ্যোতি খুব খুশি।

তিনি বলেন, ‘জ্যোতির সাফল্যে আমরা খুশি। এই সুখের আড়ালে আমরা হতাশা আর দুশ্চিন্তায় সময় কাটাই। মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। মেয়েটির স্বপ্ন বিসিএস দিয়ে শিক্ষা শেষ করে উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার। স্বপ্ন বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন রূপনো হোসেন।

জ্যোতি বলেন, ‘দুর্ঘটনা আমার জীবনের সুখ কেড়ে নিয়েছে। তবুও সমাজের বোঝা হতে চাই না। আমি পড়াশুনা করে একজন আবহাওয়াবিদ হতে চাই। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আশায়। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং। সবার কাছে সরকারের সহযোগিতা ও দোয়া চাই।’

মন্তব্য করুন