জাতীয়

একুশে বইমেলা।বইয়ের দাম নিয়ে মন খারাপ পাঠকের

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মিতু সরকার তার দুই সন্তানকে নিয়ে বইমেলা পরিদর্শন করছিলেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাঝখানে একটা স্টলে দাঁড়িয়ে বইটা হাতে নিয়ে আবার নামিয়ে রাখলেন। এ সময় তার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, মেলায় নতুন বইয়ের দাম কিছুটা বাড়বে- সেটা আগে থেকেই জানতাম। কিন্তু মেলায় এসে দেখলাম আগের বইটিও পুনর্মুদ্রিত রয়েছে এবং দাম বাড়ানো হয়েছে। দাম এত বাড়লে বই কেনা যাবে না।

একই স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে বইয়ের দাম নিয়ে মিতুর মতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন সালেহ ফুয়াদ। তিনি বলেন, বেশ কিছু বই কেনার তালিকা নিয়ে মেলায় এসেছি। কিন্তু সে আশায় চূর্ণ। পুরনো বইয়ের দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন প্রকাশকরা। এখন মনে হচ্ছে, তালিকা অনুযায়ী বই কিনতে পারছি না।

মেলার অষ্টম দিনে গতকাল বুধবার ১১৪টি নতুন বই এসেছে। পাঠকরা ধীরে ধীরে তাদের পছন্দের বই কিনতে শুরু করেছেন। বইয়ের দাম বেড়েছে বলেও মনে করতে শুরু করেছে তারা। তবে প্রকাশকরা বলছেন, বইয়ের দাম বাড়ানো ছাড়া তাদের কোনো উপায় নেই।

এদিন সন্ধ্যায় প্রকাশনা সংস্থা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের স্টলে বই দেখছিলেন সরকারি কর্মকর্তা মহসিন আলী। সেখানে একটি বই দেখিয়ে তিনি বলেন, পুনর্মুদ্রিত বই সাধারণত সস্তা হয়। কিন্তু এই বছর রিপ্রিন্টের খরচ আগের চেয়ে বেশি।

অনিন্দ প্রকাশের স্বত্বাধিকারী আফজাল হোসেন জানান, গত বছর দেড় শতাধিক নতুন বই প্রকাশ করেছি। এবার ৪০-৪৫টি বই প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে সব বই মেলায় আনা সম্ভব হবে কিনা জানি না। বৈশ্বিক মন্দার কারণে কাগজ, বই বাঁধাই উপকরণ, ছাপার প্লেট ও কালির দাম বেশি। তাই বইয়ের দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই।

কাগজের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ বছর নতুন বই না প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অনন্যার প্রকাশক মনিরুল হক। তিনি বলেন, বিভিন্ন মানুষের অনুরোধ পূরণে ২৫-৩০টি নতুন বই প্রকাশ করা হচ্ছে। বইয়ের দামও বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে।

বাংলা প্রকাশের সহকারী ব্যবস্থাপক (বিক্রয়) নুরুন নবী বলেন, গত বছর ৬৫টি নতুন বই নিয়ে এসেছি; এবার আসছে মাত্র ২৫ জন। সংশ্লিষ্ট কারণে বইয়ের দাম আগের মতো রাখতে পারছি না। কাগজ থেকে শুরু করে সবকিছুই দামী। নতুন বইয়ের সাথে ৩২টি পুরানো বই পুনর্মুদ্রিত; তাদের দামও কিছুটা বেড়েছে। নতুন ও পুরনো বইয়ের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১০ শতাংশ।

শব্দশৈলীর ব্যবস্থাপক ওবায়দুল্লাহ বলেন, বইয়ের দাম সামান্য বাড়ায় পাঠকরা ক্ষুব্ধ। তিন আকারে একটি বইয়ের দাম যখন দেড়শ টাকার বেশি বলা হবে, তখন পাঠক ক্ষুব্ধ হবেন। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই।

এ প্রসঙ্গে জাফর ইকবাল বলেন, আমি নতুন লেখকদের বিরোধী যারা টাকা দিয়ে বই প্রকাশ করে। নতুন লেখকরা লিখবেন; আমি আশা করি প্রকাশকরা আগ্রহ নিয়ে তাদের বই ছাপবেন।

বাংলা একাডেমি চত্বরে বক্তব্য রাখেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ইমদাদুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, অমর একুশে বইমেলা বাঙালির প্রাণের মেলা। ফেব্রুয়ারি এলেই সারাদেশের বইপ্রেমীরা মেলায় ভিড় করেন। তারা নতুন বই কিনছে। কিন্তু জিনিসপত্রের দামের সঙ্গে বইয়ের দাম বাড়লে তা পাঠকের ওপর প্রভাব ফেলে।

মন্তব্য করুন