জাতীয়

রোজাদার পণ্য আমদানিতে গতি না এলে বিপদ

রমজানের পণ্য নিয়ে আতঙ্কের মেঘ কেটে যাচ্ছে। আগের চেয়ে লেটার অব ক্রেডিট বা এলসি আমদানিতে গতি এসেছে। এরই মধ্যে দেশে এসেছে রমজানের বেশ কিছু খাদ্যপণ্য। আরও ১২ লাখ ৫৩ হাজার টন পণ্য আসার পথে। আগামী দেড় মাসের মধ্যে দেশে প্রবেশ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে জানুয়ারিতে ঋণ চালু হওয়ায় এসব খাদ্যপণ্য যথাসময়ে বাজার ধরতে পারবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। রমজানের আগে পর্যাপ্ত পণ্য না আসলে বাজারে এর প্রভাব পড়তে পারে।

দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে এখন রমজানের পণ্য বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেশি দামে। ট্যারিফ কমিশন নিজেই ইঙ্গিত দিয়েছে যে সব পণ্য সময়মতো বাজারে না পৌঁছালে রমজানে এই অস্থিতিশীলতা বাড়বে। তবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলছেন, আমদানি স্বাভাবিক থাকায় এখন কোনো আশঙ্কা নেই। পাইপলাইনে থাকা পণ্য যাতে সহজে বাজারে পৌঁছাতে পারে সেজন্য প্রস্তুতিও রয়েছে।

জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘এরই মধ্যে রমজানের জন্য পর্যাপ্ত পণ্য আমদানি করা হয়েছে। ঋণ নিয়ে যে সংকট ছিল, তাও কেটে গেছে জানুয়ারিতে। রমজানের দেড় মাস বাকি। হাতে বেশি সময় না থাকলেও রমজানের আগেই সব পণ্য পৌঁছে যাবে বলে আশা করছি। ভোক্তারা পুরো মাস একবারে পণ্য না কিনলে রমজানে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে।’

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘ডলার ও বন্ডের প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠছে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আরও কঠোর নির্দেশনা প্রয়োজন। ভারসাম্য রেখে পণ্যের অগ্রাধিকার ঠিক করতে পারলে সমস্যার অনেকটাই সমাধান হয়ে যাবে।’

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘এখন যেসব পণ্যর জন্য ঋণ খোলা হয়েছে সেগুলো রমজানের আগে বাজারে আসবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ডলার সংকটের কারণে খালাস প্রক্রিয়া বন্ধ হলে এসব পণ্য বাজার ধরতে পারবে না। তবে মন্ত্রণালয় সক্রিয় থাকলে কোনো সংকট থাকবে না।’

চাহিদা অনুযায়ী পণ্য দেশে এসেছে: দেশে চিনির বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২.৪৫ মিলিয়ন টন। রোজায় তিন লাখ টন চিনির প্রয়োজন হয়। গত তিন মাসে চিনি আমদানি হয়েছে ৬ লাখ ৮২ হাজার টন, যা আগের বছরের তুলনায় ১৫ হাজার টন কম। তবে চিনি যথাসময়ে এলে জানুয়ারিতে খোলা ঋণপত্র গত বছরের আমদানিকে ছাড়িয়ে যাবে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তেল আমদানিও একই পর্যায়ে রয়েছে। গত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসে দেশে ১ লাখ ২৫ হাজার টন সয়াবিন তেল আমদানি করা হয়েছে। একই সময়ে পাম তেলের আমদানি বেড়েছে ৪২ শতাংশ। ইতোমধ্যে দেশে প্রায় ৪ লাখ টন পাম তেল পৌঁছেছে। গত তিন মাসে ৪৩ হাজার টন ছোলা আমদানি হয়েছে। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কম। তবে জানুয়ারিতে চালু হওয়া ঋণগুলো বাজারে এলে ছোলার কোনো অভাব হবে না। রমজানে ছোলার চাহিদা প্রায় ৮০ হাজার টন। গত বছরের তুলনায় এবার মসুর ডালের আমদানি বেড়েছে। গত বছরের শেষ তিন মাসে দেশে ২২ হাজার টন খেজুর এসেছে। জানুয়ারিতে আরও ২৯,০০০ টন ঋণ খোলা হয়েছিল। এসব খেজুর বাজারে এলে আর কোনো সংকট থাকবে না। কারণ রমজানে খেজুরের চাহিদা প্রায় ৫০ হাজার টন।

পাঁচটি পণ্যের লোন খোলার হার বেড়েছে: চিনি, ছোলা, ভোজ্য তেল, পেঁয়াজ এবং খেজুর, রমজান মাসে সবচেয়ে বেশি খাওয়া হয়, জানুয়ারিতে ঋণ খোলার হার বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মাজবাউল হক জানান, গত বছরের জানুয়ারিতে ৫ লাখ ১১ হাজার ৪৯২ টন চিনি আমদানি ঋণ খোলা হয়। চলতি জানুয়ারিতে ৫ লাখ ৬৫ হাজার ৯৪১ টন খোলা হয়েছে। গত বছরের জানুয়ারিতে ৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৫৯ টন ভোজ্যতেলের ক্রেডিট খোলা হয়। চলতি বছরের একই সময়ে তা ছিল ৩ লাখ ৯০ হাজার ৮৫৩ টন। তবে গত বছরের জানুয়ারিতে ২ লাখ ৬৫ হাজার ৫৯৬ টন ছোলা আমদানি ঋণ খোলা হলেও চলতি বছরের একই সময়ে ২ লাখ ২৪ হাজার ৫৬৬ টন ছোলা আমদানি ঋণ খোলা হয়েছে। গত বছরের জানুয়ারিতে ৩৬ হাজার ২২৫ টন পেঁয়াজ আমদানি ঋণ খোলা হয়েছিল; এবার খোলা হয়েছে ৪২ হাজার ৫৬২ টন। এ বছর খেজুর আমদানির ঋণও বেশি খোলা হয়েছে। গত বছরের জানুয়ারিতে ১৬ হাজার ২৯৮ টন খেজুর আমদানি ঋণ খোলা হয়। এবার খোলা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৮১ টন। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় খেজুর আমদানি ঋণের উদ্বোধন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। পাঁচটি পণ্যেই গত বছরের জানুয়ারিতে ঋণ খোলা হয়েছে ১১ লাখ ৮২ হাজার ৭৭৩ টন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তা দাঁড়ায় ১২ লাখ ৫৩ হাজার ৪০৫ টনে।

মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মুজিবুর রহমান মনে করেন, চিনিসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের খুব একটা ঘাটতি হবে না।

মন্তব্য করুন