জাতীয়

বাংলাদেশ থেকে আরও পোশাক কেনার প্রতিশ্রুতি।১৮টি দেশের রাষ্ট্রদূত ও ক্রেতা প্রতিনিধিরা সবুজ কারখানা দেখলেন

বাংলাদেশ থেকে আরও পোশাক কেনার ঘোষণা দিয়েছেন কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূত। এ বিষয়ে ওই সব দেশের ক্রেতাদের কাছে ইতিবাচক বার্তা দেওয়ার কথা বলেছেন তারা। পরিবেশ রক্ষা, শ্রমিকদের পরিচর্যাসহ উৎপাদন কার্যক্রমের সব ক্ষেত্রে এদেশের পোশাক খাত এখন অন্য দেশের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছে বলে মন্তব্য করেন তারা।
শনিবার নারায়ণগঞ্জে দুটি পোশাক কারখানা পরিদর্শন শেষে ঢাকায় নিযুক্ত ১৮টি দেশের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিরা এসব কথা বলেন। তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ আয়োজিত এই সফরে কয়েকটি ব্র্যান্ড ক্রয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। পোশাক কারখানায় সবুজ প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ১০০% কমপ্লায়েন্স অনুশীলন সম্পর্কে স্টেকহোল্ডারদের অবহিত করার অংশ হিসাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে সহায়তা দিয়েছে পোশাক খাতের নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ।
সকালে প্রতিনিধি দলটি ৩০টি গাড়ির বিশাল বহর নিয়ে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের দুপাতারা মিথিলা টেক্সটাইল মিলসে পৌঁছায়। এ সময় বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান ও মিথিলা টেক্সটাইলের চেয়ারম্যান আজহার খান প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানান। এরপর তারা কারখানার বিভিন্ন বিভাগের উৎপাদন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। কারখানাটি প্ল্যাটিনাম প্রত্যয়িত, শক্তি এবং পরিবেশ বান্ধব হওয়ার জন্য লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইনের (LEAD) সর্বোচ্চ মান। কারখানা ভবন নির্মাণ থেকে শুরু করে শ্রমিকদের নিরাপত্তা, অধিকার প্রয়োগের সুযোগ- এসব সূচক যাচাই করেই লিড সার্টিফিকেট দেয় যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি)।
পরিদর্শন শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস বলেন, ‘পরিবেশ সুরক্ষা, শ্রমিকদের পরিচর্যাসহ উৎপাদন কার্যক্রমের সব ক্ষেত্রে এমন সহায়ক পরিবেশ আমি আগে দেখিনি। এই উদাহরণ সত্যিই বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য একটি অনুপ্রেরণা. হোহাইতলী বলেন, বাংলাদেশি পোশাকের প্রধান বাজার হতে পেরে ইইউ গর্বিত। তিনি বলেন, ইইউভুক্ত দেশগুলো গত বছর বাংলাদেশ থেকে ১৯ বিলিয়ন ইউরোর পোশাক কিনেছে।
এ সময় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, বাংলাদেশের পোশাক খাতের নিরাপত্তার মান উন্নয়নের বিষয়টি বিশ্ববাসীকে জানানো হবে। এরই অংশ হিসেবে ক্রেতা প্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকে নিয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ কার্যক্রম অব্যাহত রাখার কথা বলেন তিনি।
এ সময় বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, তারা উৎপাদন কার্যক্রমে সবুজ ও বিকল্প জ্বালানির ব্যবহারকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। বাংলাদেশে এখন সারা বিশ্বে পোশাক খাতের শীর্ষস্থানীয় সনদপ্রাপ্ত কারখানার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ পর্যন্ত ১৮৪টি কারখানা লিড সার্টিফিকেট পেয়েছে। আরও ৫০০ কারখানা পাইপলাইনে রয়েছে। মিথিলা টেক্সটাইলের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, গ্যাসের বিকল্প হিসেবে ধানের তুষ ও তুষ ব্যবহার করে বাষ্প উৎপাদনের এই প্রযুক্তিই এর বড় প্রমাণ। তিনি বলেন, টেক্সটাইল ও পোশাক উৎপাদনের জন্য ভবিষ্যতে এ ধরনের আরও বিকল্প জ্বালানি কারখানা গড়ে তোলা হচ্ছে। এ সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুসহ মিথিলা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
মিথিলা টেক্সটাইল পরিদর্শন শেষে প্রতিনিধি দলটি নারায়ণগঞ্জের ফকির ফ্যাশন পরিদর্শন করেন। তারা বিশাল কারখানার বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে জার্মানির রাষ্ট্রদূত আইকেম ট্রস্টার বলেন, বাংলাদেশের পোশাক কারখানার মান নিয়ে তারা খুবই সন্তুষ্ট। তার দেশ এদেশ থেকে আরো কাপড় নেবে। এ বিষয়ে জার্মান ব্র্যান্ড ও ক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে জানান তিনি। এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্পেনে নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত রিখটার ভেন্ডসেন, বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। প্রতিনিধি দলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মানতিটস্কি, সৌদি রাষ্ট্রদূত ইসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান, ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত ফাম ভিয়েত চিয়েন, নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারী, ঢাকায় থাইল্যান্ড দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ফানোম থংপ্রেউন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, চীন, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ডের দূতাবাস এবং এসব দেশের কিছু ক্রেতা ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য করুন