• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    প্রতিষ্ঠানের নামই বদলে ফেলেন ব্যবসায়ীরা।চট্টগ্রামের ঋণখেলাপি

    চট্টগ্রামের কিছু ঋণখেলাপি ব্যবসায়ী ঋণ নিয়ে প্রতিষ্ঠানের নামই বদলে ফেলেন ।বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলছে। কেউ ব্যাংককে না জানিয়ে অন্য কাউকে ভাড়া দিয়েছেন। ঋণের অর্থ অন্য খাতে স্থানান্তর করা; জমি ও বাড়ি কিনেছেন; হাসপাতাল, পার্ক ও আবাসন প্রকল্প করেছেন। তবে এসব শীর্ষ খেলাপিরা জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে শীর্ষ ২০ খেলাপির তালিকা প্রকাশ করা হয়। দেখা যায়, অর্ধেক কোম্পানি বন্দরনগরী চট্টগ্রামের। বুধবার চট্টগ্রামের কয়েকটি খেলাপি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
    এসব অভিযোগের বিষয়ে শীর্ষ খেলাপিদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। তবে এ বিষয়ে কারো বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। এসব প্রতিষ্ঠান সরেজমিন পরিদর্শনের সময় কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে সেখান থেকে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে।
    রাইজিং গ্রুপ: রাইজিং গ্রুপের ১৯টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। শুধু রাইজিং স্টিল লিমিটেডের নামেই খেলাপি ঋণ ১ হাজার ১৪২ কোটি টাকা। এই উঠতি গ্রুপের নেতা বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী। গতকাল সরেজমিনে এসব প্রতিষ্ঠানের অবস্থা দেখেছেন আমাদের সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি এম সেকান্দার হোসেন। তিনি বলেন, আসলাম চৌধুরীর তিনটি শিপইয়ার্ড ভাড়া দেওয়া হয়েছে। তার পেট্রোলিয়াম শোধনাগারের কারখানা দখল করা হয়েছে। সীতাকুণ্ডের বড়উলিয়া রাইজিং শিপইয়ার্ডের মালিকানা বদলেছে। ভাড়াটিয়া এখন ব্যবসা করছে। ইয়ার্ডটি বর্তমানে চালু রয়েছে। কিন্তু এটি পরিচালনা করছেন রুবেল নামের এক শিপইয়ার্ড ব্যবসায়ী। রুবেল বলেন, ‘আসলাম চৌধুরীর এই ইয়ার্ডে ঋণ থাকতে পারে। আমরা তিনজন মিলে আড়াই বছর ধরে ভাড়ায় এই ইয়ার্ড চালাচ্ছি। ব্যাংক নয়, ভাড়ার টাকা আসলাম চৌধুরীর পরিবারকে দিচ্ছি।’ তিনি জানান, রুবেলের সঙ্গে জামাল পাশা ও আমিন নামে আরও দুই ব্যক্তি রয়েছে। নাম পরিবর্তন করে অন্য ইয়ার্ড পরিচালনাকারী বাবুল হাজীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
    তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভাড়ার ভিত্তিতে ইয়ার্ডের মালিকও তিনি। আসলাম চৌধুরী ঋণ নেওয়ার সময় এটিকে সেভেন বি অ্যাসোসিয়েট বলা হয়। কিন্তু জাহিদুল শিপ রিসাইক্লিং নামে এটি চালাচ্ছেন বাবুল হক হাজী। এছাড়া কুমিরায় রাইজিং গ্রুপের আরেকটি শিপইয়ার্ডের নাম পরিবর্তন করে জাহিদুল এন্টারপ্রাইজ শিপইয়ার্ড রিসাইক্লিং করা হয়েছে। রাইজিং গ্রুপ ম্যানেজার। আজম বলেন, ‘সীতাকুণ্ডে কুমিরা মডার্ন জুট মিল নামে একটি কারখানা ছিল। কারখানাটি ২০১৬ সালে সিপি নামে একটি কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়া হয়েছিল। পরে এটি একটি প্রভাবশালী মহল দখল করে নেয়।
    রাইজিং গ্রুপের পরিচালক আমজাদ চৌধুরী বিদেশি ক্রেতাদের মাধ্যমে বাঁশবাড়িয়ায় এ অ্যান্ড এ সুজ নামে জুতা তৈরির কারখানাটি পরিচালনা করছেন। এ কোম্পানিতে ১ হাজার ১০০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। স্থানীয়রা জানান, রাইজিং কোম্পানির তিনটি পেট্রোল পাম্প চালু রয়েছে। এ ছাড়া কালুরঘাট এলাকায় রয়েছে আস্থা লবণ ও পানীয় জলের কারখানা। এতে তিন শতাধিক শ্রমিক কাজ করছেন।
    আসলাম চৌধুরী অল্পদিনেই বিপুল সম্পদের মালিক ও বিএনপির বড় নেতা হয়ে ওঠেন। ২০০৪-০৫ সালে, আসলাম চৌধুরী রয়্যাল সিমেন্টের সিইও (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কয়েক বছরে তিনি এক ডজনেরও বেশি কোম্পানির মালিক হন। তিনি বেনামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী সংসদে বলেন, কিছু ঋণ পুনঃতফসিল করা সত্ত্বেও তার এখনও ১ হাজার ১৪২ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ রয়েছে। রাইজিং স্টিল লিমিটেড নামের একটি কোম্পানিতে তিনি এই টাকা খেলাপি করেছেন।
    রতনপুর গ্রুপ: রতনপুর গ্রুপের ব্যাংক খেলাপি ঋণ ৮৮৮ কোটি টাকা। তবে গ্রুপের শিপইয়ার্ড রিসাইক্লিং শিল্প সীতাকুণ্ডের শীতলপুরে অবস্থিত। তিন বছর ধরে এই ইয়ার্ডটি বন্ধ রয়েছে। চার পোর্টার রোটেশনে ডিউটি করছে। গতকাল কারখানায় গেলে তারা কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি। স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ ইয়াকুব বলেন, ইয়ার্ড বন্ধ হওয়ার পর মালিক পক্ষ থেকে কেউ আসে না। তবে অনেকেই বিভিন্ন সময় উঠানে ঘুরতে আসেন ভাড়া নিতে।’ রতনপুর গ্রুপের বায়েজিদ কারখানায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে ব্যাংক। নিলামে উঠলেও এ কারখানা বিক্রি করতে পারেনি ব্যাংক।
    আরএসআরএম রড ছিল চট্টগ্রামের স্টিল সেক্টরের অন্যতম বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান। বার্ষিক টার্নওভার ছিল প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। এ প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত কাজ করেন ৮০০ শ্রমিক। করোনার সময় এই গ্রুপের দুটি কারখানার উৎপাদন বন্ধ ছিল। প্রায় ৪০ কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। বন্ধ কারখানাটি নিলামে বিক্রি করা যায়নি। কারণ রতনপুর স্টিল একই সম্পদ একাধিক ব্যাংকের কাছে রেখে শত শত কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।
    জানা যায়, ১৯৮৪ সাল থেকে নোয়াখালীর সেনবাগ এলাকার মাকসুদুর রহমান চট্টগ্রামে জাহাজ ভাঙ্গা ও ইস্পাত খাতে ব্যবসা শুরু করেন। ২০০৪-০৫ সালের দিকে, তিনি ব্যবসার পরিধি বাড়াতে বিপুল পরিমাণ ব্যাংক ঋণ নেন। দীর্ঘ ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা এবং বন্ধুত্বের সাথে (আরএসআরএম) সহজেই বড় ঋণ সুবিধা নেয়।

    মন্তব্য করুন