• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    চট্টগ্রামে এক লাফে গৃহ কর বেড়েছে ৩২৫ শতাংশ।গৃহকর নিয়ে মুখোমুখি নগরবাসী-মেয়র

    চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁওয়ের দর্জিপাড়ায় একতলার একটি ফ্ল্যাটে দুই সন্তান নিয়ে থাকেন বিধবা লায়লা বেগম। ভাইদের দেওয়া আর্থিক সহায়তায় পারিবারিক খরচ মেটানো হয়। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এই ফ্ল্যাটের ভাড়ার ভিত্তিতে ২০ হাজার টাকা হাউস ট্যাক্স নির্ধারণ করেছে। অথচ আগে ফ্ল্যাটের আয়তন ও অবস্থান অনুযায়ী বাড়ি কর দিতেন মাত্র ২ হাজার ৪০ টাকা। নতুন নিয়মে তার গৃহ কর ৯০০ শতাংশ বেড়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন চলতি অর্থবছর থেকে ভাড়ার ভিত্তিতে বাড়ি কর আদায় শুরু করেছে। গৃহ কর ৩০০ থেকে এক হাজার শতাংশে উন্নীত হয়েছে। নগরবাসীর মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
    আগের নিয়ম অনুযায়ী বাড়ি কর আদায়ের দাবিতে আন্দোলন করছে চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ। অন্যদিকে, ভাড়ার ভিত্তিতে বাড়ি কর আদায়ে অনড় মেয়র। দুই পক্ষের সংঘর্ষের কারণে চট্টগ্রামের জনজীবনে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছে সরকারের বিশেষ গোয়েন্দা শাখা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে একটি যৌক্তিক সমাধানে পৌঁছাতে অনুরোধ করা হয়েছে। সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। কিন্তু চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন তা আমলে না নিয়ে নতুন নিয়ম অনুযায়ী গৃহ কর আদায় অব্যাহত রেখেছে।
    বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, এরশাদ সরকারের আমলে বাড়ি ভাড়ার ভিত্তিতে বাড়ি কর নির্ধারণের আইন করা হয়। এ আইন অনুযায়ী দেশের ১১টি সিটি করপোরেশনের মধ্যে চট্টগ্রাম ছাড়া বাড়ি ভাড়ার ভিত্তিতে বাড়ি কর আদায় হয় না। এদিকে বর্ধিত হাউস ট্যাক্স সহনীয় পর্যায়ে আনতে আপিল বোর্ড গঠন করেছে সিটি করপোরেশন। কিন্তু এই আপিলেও ঘুষের মাধ্যমে হাউস ট্যাক্স কমানো হচ্ছে বলে গোপন পুলিশের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
    প্রতিবেদনে আটটি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে। জানা গেছে, ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে সিটি করপোরেশন প্রতি বর্গফুট থেকে সর্বনিম্ন দেড় টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১২ টাকা পর্যন্ত বাড়ি কর আদায় করে আসছে। বিভিন্ন এলাকায় জমি ও ভবনের মূল্যের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন ধরনের গৃহ কর হার নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেই হার অনুযায়ী নাসিরাবাদ শহরে ১০ হাজার বর্গফুট আয়তনের ছয়তলা ভবনের বাসা ভাড়া ছিল বছরে ৬০ হাজার টাকা। নতুন নিয়মে যা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাড়িভাড়া বেড়েছে ৩২৫ শতাংশ।
    বর্ধিত হাউস ট্যাক্সের চাপ সামলাতে ভবন মালিকরা বাড়ি ভাড়া বাড়াতে বাধ্য হবেন বলে জানা গেছে। ফলে চট্টগ্রাম নগরীর মানুষের জীবনযাত্রার মান ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতির সময়ে, বর্ধিত দেশীয় কর অর্থনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
    প্রত্যেক বিল্ডিং মালিক নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বছর ভাড়া আয়ের উপর আয়কর প্রদান করে। একই বাড়ির ভাড়ার আয়ের ভিত্তিতে সিটি করপোরেশন হাউস ট্যাক্স প্রদান করা হলে তা দ্বিগুণ কর হিসেবে বিবেচিত হয়, যার যৌক্তিকতা পুনর্বিবেচনা করা হয়েছে, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
    এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গৃহ কর পুনর্মূল্যায়নে ভুয়া বাড়ি কর বসিয়ে, নির্দিষ্ট এলাকায় অনৈতিক সুবিধা প্রদান, উচ্চ ভাড়া দেখিয়ে অবৈধ অর্থ আদায় করছে। আপিলের সময় অবৈধ আর্থিক লেনদেনেরও অভিযোগ ওঠে।
    প্রতিবেদনে বলা হয়, গৃহ কর নিয়ে আন্দোলনকারী চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের বিষয়ে বলা হয়, চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে বাড়িঘর রয়েছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত ও বাম দলের সদস্যরা। ফলে সরকারবিরোধী স্বার্থান্বেষী মহল গৃহস্থালির বর্ধিত করকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডকে বিভিন্ন খাতে সরিয়ে দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
    প্রতিবেদনে পাঁচটি সুপারিশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, গৃহ কর বৃদ্ধি করায় চট্টগ্রাম নগরবাসীর মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভ রয়েছে। এ কারণে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জনসমর্থনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
    চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, গৃহ কর পুনর্নির্ধারণের সময় আমি দায়িত্বে ছিলাম না। কার্যভার গ্রহণের দেড় বছর পরে, সরকার গৃহকরের উপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে। গৃহ কর পুনর্মূল্যায়নের সময় যে অসঙ্গতি পাওয়া গেছে তা দূর করতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
    করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি নুরুল আবছার বলেন, চট্টগ্রামের মানুষ এসব আপিল প্রত্যাখ্যান করেছে। বাড়ি ভাড়ার ওপর কর বাতিল করে এলাকাভিত্তিক বাড়ি কর আদায় করতে হবে। তা না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করা হবে।

    মন্তব্য করুন