কঠোর শাস্তির মুখে আঠারোটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
সরকার নির্ধারিত সময়সীমা অনুযায়ী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের একাডেমিক প্রোগ্রাম স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করতে ব্যর্থ হওয়া ১৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে একটি ‘কঠোর’ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করা হয়েছে। ঢাকার অন্য দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসেও ভর্তি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাকি ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন মাস ছয় মাস মেয়াদে ‘চূড়ান্ত’ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। যদি সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলি এই সময়ের মধ্যে তাদের স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে স্থানান্তর করতে ব্যর্থ হয় তবে তাদের নতুন ছাত্র ভর্তির জন্যও বন্ধ ঘোষণা করা হবে। সরকারের এসব সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে গত ১ জানুয়ারি সংশ্লিষ্ট ১৮ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারদের কাছে চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট অনুযায়ী, একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সাত বছরের মধ্যে নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে বাধ্য। তবে দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় এ নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দুই দশক পেরিয়ে গেলেও স্থায়ী ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে পারেনি। ভাড়া বাসায় এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবার আবেদন করে সরকারের কাছ থেকে সময় বাড়ানো হচ্ছে।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাস সংক্রান্ত কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া চারটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউজিসি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, আশা ইউনিভার্সিটি এবং ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি। এরই মধ্যে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কয়েক দফা সময় নিলেও স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে অতিরিক্ত তিন বছর সময় চেয়েছিল। কিন্তু সরকার তা প্রত্যাখ্যান করেছে। ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি একটি স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৫ পর্যন্ত সময়ের জন্য আবেদন করলেও তা গ্রহণ করা হয়নি। প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা পূর্বাচলে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য জমি কিনেছে। তবে রাজউকের অনুমতি না পাওয়ায় নির্মাণ কাজ শুরু করা যায়নি।
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বন্ধের সিদ্ধান্ত চলতি জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।
ইউজিসি পরিচালক (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) ওমর ফারুক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়কে তিন মাসের সময়সীমায় স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের চূড়ান্ত নোটিশ দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, রয়্যাল ইউনিভার্সিটি, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, সিটি ইউনিভার্সিটি, দ্য মিলেনিয়াম। বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের ক্যাম্পাস পরিদর্শনের জন্য ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় পাবে।
এর মধ্যে ঢাকার মোহাম্মদপুরের আদাবরে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাস রয়েছে। তবে ইকবাল রোডে অস্থায়ী ক্যাম্পাসেও সীমিত আকারে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপন করলেও সেখানে এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। একই কথা বলেছেন সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটিও। জানা গেছে, মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি নির্ধারিত পরিমাণের কম (শূন্য ও ২৫ একর) জমিতে ভবন নির্মাণ করে চলছে। কবে নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে স্থানান্তর করা হবে তা বলা যাচ্ছে না। ৩১ মার্চের আগে জমি ও ভবন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছে ইউজিসি।
আর ছয় মাস সময় পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, গ্রিন ইউনিভার্সিটি, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি এবং দ্য পিপলস ইউনিভার্সিটি। ইউজিসি বলেছে, ৩০ জুনের মধ্যে এসব বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিজস্ব ক্যাম্পাসে না গেলে স্থায়ী ক্যাম্পাস ছাড়া অন্য ক্যাম্পাস বা ভবনগুলো বেআইনি হবে, সেখানে শিক্ষার্থীদের ভর্তি বন্ধ করে দেওয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, নরসিংদীতে তাদের স্থায়ী ক্যাম্পাস গড়ে তুলেছে দি পিপলস ইউনিভার্সিটি। তবে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সম্প্রসারণের জন্য তাদের জমি অধিগ্রহণ করে ক্যাম্পাস ভেঙে ফেলা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরকারের কাছে ৩ থেকে ৫ বছর সময় চেয়েছিল। তবে ৬ মাসের বেশি সময় বাড়াতে চায়নি ইউজিসি। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইউজিসিকে জানিয়েছে তাদের ক্যাম্পাস প্রায় প্রস্তুত। জুনের মধ্যে তারা প্রবেশ করতে পারবে। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের ফার্মেসি বিভাগের ল্যাবরেটরি স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করতে ৫-৬ মাস সময় লাগবে। ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ (ইউডিএ) কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে আরও দুই বছর সময় লাগবে। কিন্তু ইউজিসি তা উপেক্ষা করে। ধানমন্ডিতে তিনটি অস্থায়ী ভবনের জন্য তাদের সাময়িক অনুমোদনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ৩১ ডিসেম্বর। ইউজিসি জানিয়েছে, ১ জুলাই থেকে এসব ভবনে শিক্ষার্থীদের ভর্তি অবৈধ বলে গণ্য হবে।