• বাংলা
  • English
  • বিবিধ

    উঠোনে বাবার লাশ, অবসরের টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বে সন্তানরা। ৩০ ঘণ্টাও দাফন হয়নি

    শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় চট্টগ্রাম নগরীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মনির আহমদ (৬৫) মারা যান। হাসপাতাল থেকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহ আনা হয়। হাসপাতাল থেকে লাশ কর্ণফুলী উপজেলার বাড়িতে নিয়ে আসার পর ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও লাশ দাফন হয়নি। রাতে লাশ বাড়িতে আনা হলে বাবার অবসরের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে সন্তানদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। বৃদ্ধের মৃত্যুর ২৮ ঘণ্টা পরও বিরোধের নিষ্পত্তি হয়নি। কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল মাহমুদ ও কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
    জানা যায়, বৃদ্ধ মনির আহমেদের (৬৫) মরদেহ একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্সে রাস্তায় ফেলে রেখে শনিবার রাত থেকে অবসরের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে তার সন্তানরা। রোববার বেলা ১টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত লাশ দাফন করা হয়নি।
    রোববার দুপুরে কর্ণফুলী উপজেলার বারুথান ইউনিয়নে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘটনাস্থলে কর্ণফুলী থানার সদস্য ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত রয়েছে। শিশুদের এমন কর্মকাণ্ডে হতবাক এলাকাবাসী।
    মৃত মনির আহমদের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৪০) বলেন, আমার বাবা দীর্ঘদিন পদ্মা অয়েল কোম্পানিতে চাকরি করতেন। অবসর নেওয়ার পর তার ক্যান্সার ধরা পড়ে। আমার কাজের মেয়ে বেবী আকতার বাবাকে এবি ব্যাংকে নিয়ে যায়। চিকিৎসা বাবদ ৩০ লাখ টাকা তুলে নিয়েছি।আমার ছোট ভাই সৌদি প্রবাসী আলমগীর দেশে আসার জন্য রওনা হয়েছেন।তিনি আসার পর টাকা মিটিয়ে বাবাকে দাফন করা হবে।
    স্থানীয়রা জানান, মনির আহমদের অবসরের টাকা নিয়ে বিরোধের জের ধরে গৃহকর্মী বেবী আক্তারসহ দুই ভাই-বোনের সঙ্গে দুই ছেলে ও তিন মেয়ের বিরোধ চলে আসছিল। শনিবার তাদের বাবা মারা যাওয়ার পর রোববার সকালে ইউপি সদস্যসহ স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে সামাজিক সভাও অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মারা যাওয়ার পর তারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ এনে বাড়ির পাশের সড়কে ফেলে যায়। সকাল থেকে অবসর পর্যন্ত টাকা ভাগাভাগি নিয়ে ভাইবোনের মধ্যে ঝগড়া চলছে।
    ইউপি সদস্য মো. সাইফুদ্দিন জানান, মনির আহমেদের অবসরের টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলনের অভিযোগে ভাইবোনের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। লাশ এখনো রাস্তায় পড়ে আছে।
    তবে বেবী আক্তার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি আমার বাবার অবসরের কোনো টাকা ব্যাংক থেকে উঠাইনি। তাদের অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।
    মনির আহমেদের ছোট মেয়ে লিপি আক্তার জানান, আমার বাবার ক্যান্সার ধরা পড়ার পর থেকে আমরা তিন বোন মিলে বাবার চিকিৎসার খরচ বহন করছি। এক ভাইও সহযোগিতা করেননি। অবসরের টাকা সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। বাবার মৃত্যুর পর থেকে অবসরের টাকার ইস্যুতে বাবার লাশ দাফন করতে দেওয়া হচ্ছে না।
    কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল মাহমুদ জানান, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। বাবার অবসরের টাকা নিয়ে বিরোধ সামাজিকভাবে মেটানোর চেষ্টা চলছে।
    কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামুনুর রশিদ বলেন, বৃদ্ধের রেখে যাওয়া অবসরের টাকা নিয়ে তার সন্তানদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের মাধ্যমে বৃদ্ধার সন্তানদের মধ্যে বিরোধ মিটে গেছে। আগামীকাল (সোমবার) সকাল নয়টায় দাফনের কথা রয়েছে। লাশ দাফনের পর স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যান বৃদ্ধার সন্তানদের নিয়ে বসবেন এবং ব্যবস্থা করবেন।

    মন্তব্য করুন