• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    বীজ কেনার টাকা দিতে নারাজ বিএডিসি।সাড়ে চার মাসেও টাকা পাননি দেড় হাজার কৃষক

    বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের কাছ থেকে ধানের বীজ সংগ্রহ করে। সেসব বীজ আবার প্রণোদনা হিসেবে বিতরণ করা হয়। বীজ কেনার জন্য কৃষক দল গঠন করা হয়। এমন একটি দলের প্রধান চাঁদপুর সদর উপজেলার আশিকাটি ইউনিয়নের রলদিয়া গ্রামের জামাল উদ্দিন। তিনি দক্ষিণ পাইকান্ত বীজ উৎপাদনকারী কৃষক দলের নেতা হিসেবে ২০ জনের কাছ থেকে বোরো ধানের বীজের নমুনা সংগ্রহ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চাঁদপুর কার্যালয়ে জমা দেন। ওই চালের মান যাচাইয়ের পর গত ৩১ জুলাই বিএডিসির কুমিল্লা বীজ প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রের যুগ্ম পরিচালক দেলোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, মান ভালো। বীজ সংগ্রহ করা যেতে পারে। এরপর কৃষক জামাল উদ্দিন চাঁদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কাছে ৪২ টাকা কেজি দরে ৩ হাজার কেজি ব্রি-৮৯ ধানের বীজ জমা দেন। কিন্তু প্রায় সাড়ে চার মাস পার হলেও বীজের দাম পাননি তারা।

    এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন জামাল উদ্দিন। তিনি যাদের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করেছেন তারা তার প্রতিবেশী। টাকা না পেয়ে ওই কৃষকরা এখন প্রায়ই জামাল উদ্দিনের ওপর হামলা চালাচ্ছে। গত শনিবার ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘ওরা (কৃষকরা) অফিস চেনে না, অফিসার জানে না। আমারে জায়নে পায়, ধইরা ধইরা মারারে। ইসহাকের দেড় মাস হয়ে গেল, সে টাকা দেয় না।’

    একই অবস্থা চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার বাগানবাড়ির মান্দারতলী গ্রামের কৃষক আলাউদ্দিন পাটোয়ারীর। তিনি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে ৪২ টাকা কেজি দরে ৪ হাজার কেজি ব্রি-৯২ ধানের বীজ দেন। এখন দ্বারে দ্বারে গিয়েও টাকা পাচ্ছেন না কর্মকর্তারা। গত বৃহস্পতিবার তিনি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সালাউদ্দিনের কাছে ধর্না দেন। তবে বীজের মূল্য পরিশোধের আশ্বাস দিতে পারেননি কর্মকর্তারা। অসহায় আলাউদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এক ইঞ্চি জায়গাও খালি রাখা হবে না। আমরা যদি টাকা না পাই, তাহলে কীভাবে করব? সরকার আমগোরকে দেবে দূর-দূরান্তের লাইন, যা মাথা ধরে রাখা হচ্ছে। জীবনে আর এমন ভুল করবেন না। সম্পন্ন করা হয়েছে।

    শুধু চাঁদপুর নয়, দেশের প্রায় দেড় হাজার কৃষকের কাছ থেকে প্রতি কেজি ৪২ টাকা দরে ১২০০ টন উফশী জাতের ধানের বীজ কেনে বিএডিসি। এর দাম প্রায় ৬ কোটি টাকা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা দায়িত্বে থাকায় তাদের তোপের মুখে পড়তে হয়। কৃষকরা প্রায়ই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করছেন। কর্মকর্তাদের সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক ও মারামারির ঘটনাও ঘটছে।

    কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বেনজীর আলম মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের এমন অসন্তোষের মধ্যে সমাধান না পেয়ে বীজের মূল্য পরিশোধের জন্য গত ২ নভেম্বর বিএডিসি চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন। চিঠিতে বলা হয়, গত জুলাই থেকে আগস্ট মাসে কৃষক পর্যায় থেকে সংগ্রহ করা ১ হাজার ২৪৪ দশমিক ৭৪ টন বোরো বীজ বাকীতে কেনা হয়েছে। বীজের দাম বিলম্বে পরিশোধ করায় কৃষকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। কৃষকরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। কর্মকর্তারা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন। চিঠিতে তিনি দ্রুত বোরো বীজের মূল্য পরিশোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন।

    চাঁদপুর মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষকের টাকা পরিশোধের ব্যাপারে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন। সালাদিন। তিনি জানান, টাকা না পেয়ে হতাশ হয়ে কয়েকবার কৃষক তার কাছে এসেছেন। তারা বারবার ঊর্ধ্বতনদের বিষয়টি জানান। কিন্তু কেউ খেয়াল করছে না। গত বৃহস্পতিবার কৃষকের নাম ঠিকানা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে বিএডিসি। ধান কেনার সময় এ তথ্য জানানো হয়। সে জানে না কেন সে আবার এটা চায়। তিনি বলেন, টাকা না দিলে তারা বিব্রত হবেন। কৃষকরা বিএডিসি জানে না।

    এ বিষয়ে বিএডিসির সদস্য পরিচালক কৃষিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সিদ্ধান্তহীনতার কারণে বিলম্ব হয়েছে। বিএডিসি ভেবেছিল, কৃষি মন্ত্রণালয় আলাদা বাজেটের মাধ্যমে তাদের টাকা দেবে। কিন্তু তা হয়নি। সেই বীজগুলো এখন বীজ প্রণোদনায় যাচ্ছে। তারা কৃষি প্রণোদনার বাজেট পেয়েছে।

    বিএডিসির মহাব্যবস্থাপক (বীজ) প্রদীপ চন্দ্র দে জানান, কৃষকদের অর্থ পরিশোধ শুরু হয়েছে। অনেকে টাকাও পেয়েছেন। তিনি জানান, চাঁদপুর সদর, মতলব উত্তরসহ কয়েকটি উপজেলার কৃষকরা এখনো টাকা পাননি। গত শনিবার সন্ধ্যার ১০ মিনিট পর প্রদীপ চন্দ্র দে জানান, তিনি খবর পেয়েছেন। চাঁদপুরের কৃষকদের চেক প্রস্তুত। দু-একদিনের মধ্যে পেয়ে যাবেন।

    মন্তব্য করুন