রাজশাহীতে বিএনপির সমাবেশ।কঠোর নিষেধাজ্ঞার কারণে বড় জমায়েত জনভোগান্তিও বেশি
বিএনপির রাজশাহীর সমাবেশে অন্যান্য বিভাগের তুলনায় বাধার মাত্রা ছিল সর্বোচ্চ। পরিবহন ধর্মঘট, গ্রেফতার, রাস্তায় তল্লাশি এবং জমায়েতের উপর নিষেধাজ্ঞা সহ সীমাহীন বাধা ছিল। এত কিছুর পর শনিবার রাজশাহীতে বড় সমাবেশ করেছে বিএনপি। কিন্তু টানা তিন দিন উত্তরবঙ্গের প্রধান শহর দেশের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশ শুরু হয়। আগের দিন ঢুকতে না দেওয়া সত্ত্বেও গতকাল সকাল ৬টায় মাঠের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেয় পুলিশ। এরপর তিন দিন ধরে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অবস্থানরত বিএনপির নেতাকর্মীরা মিছিল করে সমাবেশস্থলে যান।
সকাল ১১টায় জনসভার মাঠ ছিল বিএনপি নেতাকর্মীদের ভিড়ে। আশপাশের দেড় কিলোমিটার সড়কেও জড়ো হয়। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার মনে করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হত্যা, গুম, নির্যাতন ও গুম করে বিএনপিকে শেষ করা যাবে।
কিন্তু বিএনপি মাঠে নামছে। ফিনিক্সের মতো ছাই থেকে উঠছে। আওয়ামীলীগের প্রহর গুনছে, ভয়ে, ঘুম হারাম হয়ে গেছে।
সমাবেশে আসা নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের নির্যাতনের হুঁশিয়ারি দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, জনগণের টাকায় বেতন পান। কেন নিরীহ মানুষের উপর জুলুম? খবরদার- জুলুম করবেন না! আপনারা সরকারি কর্মচারী, সহযোগিতা করা উচিত ছিল। আপনি পানির লাইন, বিদ্যুতের লাইন কেটে দিয়েছেন; রান্নার চুলায় পানি দিলেন। তোমরা এত অমানুষ! এভাবে মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া! মানুষ অন্যায় সহ্য করবে না।
রাজশাহীতে বিএনপির নবম বিভাগীয় গণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। নেতাকর্মীদের হত্যা, খালেদা জিয়ার মুক্তি ইত্যাদির প্রতিবাদে ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামে সমাবেশের মধ্য দিয়ে বিএনপির কর্মসূচি শুরু হলেও ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
গতকালের সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ঢাকায় গণসমাবেশকে সরকার ভয় পায়। নয়াপল্টনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চায় বিএনপি। সরকারও এ নিয়ে ভীত। বিএনপি অতীতে নয়াপল্টনে অসংখ্য শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করেছে। এখন সরকার জঙ্গিবাদ ও আগুন সন্ত্রাসের নাটক শুরু করেছে। আওয়ামী লীগ নিজেদের প্রয়োজনে জঙ্গি তৈরি করে। তারা নিজেরাই বাসে আগুন দেয়।
চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ছাড়া অন্য সব সমাবেশে একই ধরনের পরিবহন ধর্মঘট ছিল। মহাসড়কে থ্রি-হুইলার নিষিদ্ধের দাবিতে সরকারপন্থী পরিবহন মালিক সংগঠনগুলো এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। অন্য বিভাগে দুই দিন ধর্মঘট থাকলেও রাজশাহীর আট জেলায় ছিল তিন দিন। রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থা বিআরটিসির বাসও এ দিন চলাচল করেনি। অন্যান্য বিভাগের মতোই সমাবেশ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধর্মঘট শেষ হয়। রাজশাহীতে সমাবেশ চলাকালে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। অনুষ্ঠানস্থলে ব্রডব্যান্ড সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
আগের বিভাগীয় সমাবেশে সমাবেশস্থলে রাত কাটিয়েছেন বিএনপি কর্মীরা। রাজশাহীতে এ সুযোগ না পাওয়ায় হাজার হাজার নেতাকর্মী রাস্তা, মাঠ ও ফুটপাতে তিন রাত কাটান। পদ্মার পাড়ে, গাছের নিচে, তাঁবুতে শীতের রাত কাটে অনেকে। ঈদগাহসহ বিভিন্ন মাঠে রান্না, খাওয়া, ঘুম ও গোসল করা হয়। সমাবেশস্থলে সমাবেশ করতে না পারায় পুরো রাজশাহী জনসভা, মিছিল ও স্লোগানে পরিণত হয়।
সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ: ধর্মঘটের কারণে শুধু বাস নয়, সিএনজি অটোরিকশাও বন্ধ রয়েছে। গতকাল সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টার দিকে শহরের নুদাপাড়া ও শিরোইল বাসস্ট্যান্ডে হাজার হাজার মানুষকে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
কথা হয় শিরোইলে আলমগীর হোসেন নামের এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি জানান, তার বাড়ি নওগাঁর মান্দায়। নারায়ণগঞ্জে গার্মেন্টসে সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করেন। গত বুধবার অসুস্থ মাকে দেখতে বাড়িতে আসেন তিনি। রবিবার কাজে যোগ দিতে হবে। শনিবার ভোর ৫টায় বাড়ি থেকে বের হন। বাস না পেয়ে তিনগুণ ভাড়ায় অটোরিকশায় নওগাঁ থেকে রাজশাহী আসেন তিনি। ৫ ঘন্টা অপেক্ষা করেও বাস পেলাম না।