কে জিতবে সেটা বিষয় নয়, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ: মার্কিন রাষ্ট্রদূত
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বলেছেন, নির্বাচনে কে জিতছে তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো মাথাব্যথা নেই। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে উদ্বিগ্ন।
মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তিনি বিশেষ কোনো দলের পক্ষ না নেওয়ার কথাও জানান।
পিটার ডি হাস বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের সব প্রতিষ্ঠানকে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে নির্বাচনের দিন আগে থেকেই নির্বাচন শুরু হয়। এসব কথা উল্লেখ করার পাশাপাশি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর গুরুত্বারোপ করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
মতবিনিময়কালে সম্পাদকরা স্বাধীন ও স্বাধীন গণমাধ্যমের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে রাষ্ট্রদূতকে অবহিত করেন। এ প্রসঙ্গে বলা যায়, শুধু কঠোর আইন নয়, গণমাধ্যমের মালিকানাও একটি চ্যালেঞ্জ।
রাষ্ট্রদূত বলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে, অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে স্বচ্ছতা নিয়ে অব্যাহত চাপ এবং বিতর্ক চলছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ বিভিন্ন অর্থনৈতিক চাপের সম্মুখীন হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, যুদ্ধের আগে বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বর্তমানে কেউ সেই অবস্থানে নেই বা তার চেয়ে ভালো নেই। তবে এটা সত্য যে কিছু দেশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাষ্ট্রদূত বলেন, অর্থনৈতিক চাপ মোকাবিলায় বাংলাদেশের কৃষি খাতকে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
এলডিসি উত্তরণের পর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারে তার ওপর রাষ্ট্রদূত জোর দেন। এ ক্ষেত্রে তিনি রপ্তানি বাড়াতে দক্ষতা উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ ও পণ্যের বহুমুখীকরণের ওপরও জোর দেন। পিটার ডি হাস বলেন, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য কীভাবে বাড়ানো যায় তা নিয়ে আলোচনা করা এখন জরুরি। সেজন্য আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হওয়া উচিত তা নিয়ে ভাবতে হবে। এ সময় তিনি বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর পক্ষে মত দেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ইউএস ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কর্পোরেশন অবকাঠামো উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন কার্যক্রমে বিনিয়োগ করে। তবে তাদের কার্যক্রম পরিচালিত হয় জেনারেলাইজড সিস্টেম অফ প্রেফারেন্সের (জিএসপি) নীতির অধীনে। যেখানে বাংলাদেশ প্রবেশাধিকার হারিয়েছে। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের নিরাপত্তায় বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করেছে। যাইহোক, সামগ্রিক শ্রম অধিকার পরিস্থিতি সেই সুবিধাগুলি অ্যাক্সেস করতে বাধা দেয়।
খুব শিগগিরই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন আশা না করে বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দেওয়ার প্রশংসা করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের জান্তার ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে না যুক্তরাষ্ট্র। যদিও তাদের প্রত্যাবাসন করা দরকার। “আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে প্রতিশ্রুতির অভাবের কারণে তারা নিরুৎসাহিত না হয়,” তিনি যোগ করেন।
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের সভাপতিত্বে সভায় সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি ও প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, আজকের পত্রিকার সম্পাদক গোলাম রহমান, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, ইনকিলাব সম্পাদক ড. এ এম এম বাহাউদ্দিন, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন, বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, দেশ পরওয়ারণের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা মামুন ও ঢাকা ট্রিবিউনের সহযোগী সম্পাদক আবু সাঈদ আসিফুল ইসলাম প্রমুখ।