শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন নয়, কথা পরিষ্কার: ফখরুল
আগের চার ধারার গণসমাবেশের তুলনায় প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বরিশালে বড়সড় সমাবেশ করতে পেরেছে বিএনপি। বিমান ও প্যাডেল চালিত রিকশা ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় ক্ষমতাসীন দলের মহড়া, হামলা ও সংঘর্ষের মধ্যেও সমাবেশস্থলে দলটির নেতা-কর্মীরা আসা-যাওয়ায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। যোগাযোগের. বরিশালের প্রবেশ পথে ব্যক্তিগত গাড়িতেও তল্লাশি চালানো হয়। গণপরিবহন ধর্মঘটের কারণে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন এই বিভাগীয় শহরে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে কলার ভেলা ও ড্রাম নিয়ে নদী পার হচ্ছেন বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা। তবে গতকাল শনিবার সকাল ১১টায় বঙ্গবন্ধু উদ্যানে গণসংযোগ শুরু হওয়ার পরপরই গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়।
সমাবেশে প্রধান অতিথি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হবে না, এটা পরিষ্কার। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। শেখ হাসিনার উচিত পদত্যাগ করে সংসদ ভেঙে দেওয়া। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। তাদের অধীনে ভোটের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
বাসায় ফিরতে দেরি হলে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হতে পারে এমন আশঙ্কায় নির্ধারিত সময়ের তিন ঘণ্টা আগে সমাবেশ শুরু করে বিএনপি। যদিও গত বৃহস্পতিবার থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী বঙ্গবন্ধু উদ্যানে অবস্থান করছিলেন। টানা দুই দিন তারা সমাবেশস্থলে অবস্থান করেন। ফলে তিনদিন ধরেই বরিশালে বিএনপির জনসভার আমেজ ছিল। নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের নিপীড়ন ও দলের প্রতি ভালোবাসার প্রতিবাদে শীতের রাতে দুই দিন ধরে খোলা মাঠে অবস্থান করছেন কর্মীরা। এই ত্যাগ বৃথা যাবে না।
পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের পর জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে সমাবেশ শুরু হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু উদ্যানের ওপারে অলিগলির আশপাশের সড়কে বিএনপি নেতাকর্মীদের জমায়েত হয়। শিশুপার্ক, চাদমারী মোড়, রাজা বাহাদুর খান রোড, ব্যাপটিস্ট মিশন রোড, মুক্তিযোদ্ধা পার্ক, কীর্তনখোলা, সার্কিট হাউস মোড় থেকে। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা আগের দিন মহড়া দিলেও গতকালের সমাবেশে বরিশাল নগরীতে ক্ষমতাসীন দলের তৎপরতা দেখা যায়নি।
বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকলেও বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দেয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জিলা স্কুল ক্রস, ব্যান্ড রোড, বিআইপি কলোনি ও মুক্তিযোদ্ধা পার্কে বঙ্গবন্ধু উদ্যানের প্রবেশ পথের সামনে পুলিশের তল্লাশি চৌকি থাকলেও কাউকে তল্লাশি করতে দেখা যায়নি। পার্কের প্রবেশপথ লেডিস ক্লাব ও কেডিসির সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। হরতাল ডাকা ও গণপরিবহন বন্ধের জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করলেও পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেনি বিএনপি।
বাধা এড়াতে শুক্রবার মধ্যরাতে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী বরিশালে প্রবেশ করেন। সরেজমিনে দেখা যায়- শনিবার সকাল থেকে লঞ্চ, ট্রলার, বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, অটোরিকশাসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় বিএনপির হাজার হাজার ইঞ্জিন নৌকা, বালুবাহী বাল্কহেড, মাছ ধরার ট্রলার, মালামালসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করছে। পটুয়াখী, বরগুনা, ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর জেলার উপজেলা। হাজার হাজার নেতাকর্মী বরিশালে পৌঁছেছেন। তারা কীর্তনখোলার বিভিন্ন ঘাটে নেমে সমাবেশস্থলে যান। তাদের অনেকের হাতে লাঠিতে বাঁধা জাতীয় ও দলীয় পতাকা। অনেকে রিকশা, ভ্যান, বাইসাইকেল, মোটরসাইকেলে করে বিকল্প পথ ধরে বরিশালে আসেন।
সরকারের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার এতদিন উন্নয়নের প্রচার করে আসছে। উন্নয়নের নামে বিদেশে টাকা পাচার হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রকে পিটিয়ে কুইক রেন্টালের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা। এখন কথা হচ্ছে ডলার সংকট, দুর্ভিক্ষ নিয়ে। হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি ও পাচার হয়েছে, এ কথা কি মনে পড়েনি?
আগের বিভাগীয় সমাবেশের মতো স্লোগান দিলেন মির্জা ফখরুল, সিদ্ধান্ত হবে কোথায়? বিএনপি কর্মীরা জবাবে বলেন, রাজপথ, রাজপথ। রাজপথে শাসন করে জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তা ফিরিয়ে আনা হবে বলে দাবি করেন তিনি।
চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশালের মতো বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য চেয়ার ফাঁকা রাখা হয়েছে বিএনপির সমাবেশ মঞ্চে।