• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    জাতীয় চার নেতা স্মৃতি জাদুঘর।লোহার শিকে গুলির চিহ্ন

    কারাগারে পৃথক দুটি সেলে জাতীয় চার নেতা। তাদের মধ্যে সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তাজউদ্দীন আহমদ একসঙ্গে। অন্য সেলে  ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামানকেও সেখানে আনা হয়। এরপর ঘটল পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড। কিছু বুঝে উঠার আগেই বিপথগামী সৈন্যদের গুলিতে চার নেতা নিহত হন। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর রাতের এই ঘটনা বাঙালির ইতিহাসে এক অন্ধকার অধ্যায়। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারকে হত্যার পর তার ঘনিষ্ঠ এই চার নেতাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়।

    কলঙ্কিত ইতিহাসের নিদর্শন পুরান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কক্ষের দরজার লোহার দণ্ডে এখনো রয়ে গেছে ঘাতকের বুলেটের চিহ্ন। কারাগারে জাতীয় চার নেতার ব্যবহৃত চেয়ার-টেবিল, খাট, বই ও পবিত্র কোরআন শরিফ রয়েছে। এগুলো সবই রয়েছে জাতীয় চার নেতা স্মৃতি জাদুঘরে। মর্মান্তিক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সেলসহ কারাগার সংশ্লিষ্ট ভবনের চারপাশে নতুন করে সাজানো হচ্ছে জাদুঘর। ইতোমধ্যে কাজ অনেকদূর এগিয়েছে। এ পর্যায়ে বিস্তারিত নকশা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে যাবে। তিনি চূড়ান্ত করার পর সে অনুযায়ী বাকি কাজ করা হবে। প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্তরা আশা করছেন, আগামী বছরের সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরে জাদুঘরের একটি অংশ দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া সম্ভব হবে।

    ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারটি ঐতিহাসিকভাবে সংরক্ষণের ব্যাপক প্রচেষ্টা চলছে। ফরম থ্রি আর্কিটেক্টস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নকশা অনুযায়ী এ কার্যক্রম চলছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান স্থপতি দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের জায়গায় জাতীয় চার নেতা স্মৃতি জাদুঘর ও বঙ্গবন্ধু বন্দি স্মৃতি জাদুঘরসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। এর প্রায় ৪০ শতাংশ কাজ এগিয়েছে।

    প্রকল্পের সঙ্গে জড়িতরা জানান, পুরনো কারাগারের বিভিন্ন অংশে চলছে নানা কাজ। বিশাল এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনী। এর মধ্যে জাতীয় চার নেতার স্মৃতি রক্ষায় ভবনগুলোর পুরনো চেহারা অক্ষুণ্ন রেখে আধুনিক জাদুঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এই জোনে চারটি কারাগার রয়েছে। এগুলো হলো- নীলনদ, জেল সুপারের বাসভবন, সেল ১৫ এবং মৃত্যুঞ্জয়ী। এর মধ্যে মৃত্যুঞ্জয় সেল হবে চার নেতার স্মৃতির অন্যতম স্মারক। সেখানে নেতাদের জীবন ও কর্মের বিভিন্ন নিদর্শন এবং ঐতিহাসিক তথ্যচিত্র প্রদর্শনের জন্য রাখা হবে। তাদের সমস্ত স্মৃতিচিহ্ন আধুনিক উপায়ে অক্ষতভাবে সংরক্ষণ করা হবে, যাতে দর্শনার্থীরা সময় এবং ইতিহাসকে উপলব্ধি করতে পারে।

    প্রকৌশলীরা বলেছেন যে জাদুঘর অঞ্চলের চারটি কক্ষের মধ্যে, সেল ১৫ ব্যতীত, অন্যগুলি ঔপনিবেশিক আমলে (১৮১৫, পরে ১৮১৯) পাগলা আশ্রয় হিসাবে নির্মিত হয়েছিল। এখন চার নেতার আবক্ষ মূর্তিসহ ছোট বাগান ও ফোয়ারা রয়েছে। তবে এই বাগান ও ঝর্ণাটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে নিশ্চিহ্ন করা হবে। চার নেতার আবক্ষ মূর্তিগুলিকে আরও ভাল প্রদর্শনের সুবিধার্থে স্থানান্তর করা হবে। সেল ১৫ আংশিকভাবে ভেঙে ফেলা হবে এবং একটি ভাস্কর্য প্যাভিলিয়ন এবং গ্যালারি হিসাবে পুনর্নির্মাণ করা হবে। কারাগারে নির্মমভাবে হত্যা করা জাতীয় চার নেতার ঐতিহাসিক তথ্য এখানে প্রদর্শিত হবে। জেল সুপারের বাসভবন এই মঞ্চে প্রবেশ ও প্রস্থানের জন্য ‘গেটহাউস’ হিসেবে ব্যবহার করা হবে। এবং নিল্যান্ডকে বিদেশী বন্দীদের সেলের প্রদর্শন গ্যালারি হিসাবে সংরক্ষণ করা হবে। বঙ্গবন্ধু কারা স্মৃতি জাদুঘর ও জাতীয় চার নেতা স্মৃতি জাদুঘরের মধ্যে একটি ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। কারাগারের দেয়াল ঘেরা অংশটিকে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর, জাতীয় চার নেতা স্মৃতি জাদুঘরসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ ‘কয়েদি জাদুঘর’ হিসেবে রাখা হয়েছে।

    মন্তব্য করুন