রংপুরে বিএনপির সমাবেশে মির্জা ফখরুল।সর্বভুক সরকার দেশকে শেষ করার পরিকল্পনা করছে
বিএনপির রংপুর বিভাগীয় গণসমাবেশে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান সরকার সর্বভুক হয়ে পড়েছে। সবকিছু খেয়ে তারা ১৫ বছর ধরে ধ্বংস করেছে। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে গোটা দেশ। অর্থনীতি চিবানো শেষ করেছে। এখন তারা আবার দেশকে শেষ করার পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু বিএনপি সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে দেবে না। তিনি বলেন, তাদের একটাই দাবি শেখ হাসিনা ও এই সরকারের পদত্যাগ। এটাই এই গণসমাবেশের দাবি।
তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া শেখ হাসিনার অধীনে দেশে আর কোনো নির্বাচন হবে না। এই সরকার ক্ষমতা ছাড়লে নির্বাচনে জিতে জাতীয় সরকার গঠন করবে। সেই সরকার দেশের অর্থনীতি মেরামতে কাজ করবে।
নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা আগে গতকাল দুপুর ১২টায় নগরীর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে গণসমাবেশ শুরু হয়। মঞ্চে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্য সংরক্ষিত আসন রয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী সমাবেশে জড়ো হন। সারারাত তারা সেখানেই ছিল। ভোর থেকেই ভিড় বাড়তে থাকে। তিনি সাধ্যমতো সমাবেশে যোগ দেন। সমাবেশে নানাভাবে বাধা দিলেও চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনার পর রংপুরেও বিশাল সমাবেশ করতে পেরেছে দলটি।
প্রায় ৯ বছর পর রংপুরে বড় সমাবেশ করেছে বিএনপি। গতকালও স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো শহর। সমাবেশে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে নেতাকর্মীরা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ও ধানের শীষ নিয়ে আসতে থাকেন। সকাল থেকেই নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বিএনপি নেতাকর্মীদের দখলে। নগরীর দলীয় কার্যালয়ে বসে সমাবেশ পর্যবেক্ষণ করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
মির্জা ফখরুল বলেন, শেখ হাসিনা বলছেন দেশে দুর্ভিক্ষ হবে। এমনটা হলে তার সব দায় শেখ হাসিনা ও তার সরকারের ওপর বর্তায়। মির্জা ফখরুল চিলমারীর বাসন্তীর উদাহরণ দিয়ে বলেন, ৭৪ শতকেও দুর্ভিক্ষ ছিল। আপনারা বলছেন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। হয়ে গেছে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া। আর এখন মানুষ খাবার পায় না। ১০ টাকা কেজি চাল কিনতে হচ্ছে ৯০ টাকায়। ডজন ডিম ১৩৫-১৪০ টাকা। চিনির দাম ১৩০ টাকা। মানুষ কি খাবে? শেখ হাসিনা বলেন, ধৈর্য ধরুন। আমরা কিভাবে ধৈর্য ধরতে পারি?
মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা বলছেন দিনের বেলা বিদ্যুৎ দেবেন না। কিন্তু তিনি চিতল মাছ খাচ্ছেন। প্রায়ই বিদেশ যাওয়া। আরামদায়ক. এটাই আওয়ামী লীগের চরিত্র। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জঙ্গিবাদকে নতুন বুলি দিচ্ছে। তাদের দমন করা হবে। আপনারা জঙ্গিবাদের অস্ত্র ভোঁতা হয়ে গেছে।
সমাবেশের আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা অসাধ্য সাধন করেছেন। ৩৬ ঘণ্টা যাবত স্থল ও নৌ পরিবহন বন্ধ রয়েছে। কিন্তু বলপ্রয়োগ ও রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে জনগণকে দমন করা যায়নি।’
রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সমুর সভাপতিত্বে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান, দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা.এজেডএম জাহিদ হোসেন, সংসদ সদস্য ও দলের যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশীদ, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. সেক্রেটারি ব্যারিস্টার নওশাদ জামিল, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রিয়াজুল ইসলাম রিজু, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী, কৃষক পার্টির মহাসচিব শহিদুল ইসলাম (বাবুল), রংপুর। বক্তব্য রাখেন বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, বিএনপি নেত্রী হেলেন জেরিন খান, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মোহাম্মদ জুয়েল প্রমুখ।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশের মানুষের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই। বিএনপির ভিত্তি জনগণ। রংপুর বিভাগের জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা বিপ্লব করেছেন। এই বিপ্লব কেউ আটকাতে পারবে না। আমরা বিপ্লবে শেখ হাসিনাকে উৎখাত করতে চাই। তিনি বলেন, আগামীতে শেখ হাসিনা দুর্ভিক্ষ দেখতে পাবেন। একটা কথা পরিষ্কার করি, দুর্ভিক্ষ আসার আগেই আমি তোমাকে বিদায় করে দেব। আওয়ামী লীগের আমলে এর আগেও দুর্ভিক্ষ হয়েছে। এখন আপনাকে এটি করতে দেওয়া হবে না।