বিদ্যুৎ সংকটের কারণে অধিকাংশ সময় কারখানা বন্ধ থাকে।সিএনজি স্টেশন থেকে সিলিন্ডারে গ্যাস চান ব্যবসায়ীরা
গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটে বিপাকে উদ্যোক্তারা। কারখানা দিনের বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকে। উৎপাদন ব্যাহত হয়। রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় কারখানা চালু রাখতে সিএনজি স্টেশন থেকে সিলিন্ডারে গ্যাস নিতে চান শিল্প উদ্যোক্তারা। এ বিষয়ে সহযোগিতা চেয়ে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠন সিএনজি মালিক সমিতির কাছে চিঠি দিয়েছে। সিএনজি স্টেশন মালিকরা বলছেন, সরকার অনুমতি দিলে এবং নিরাপত্তার আশ্বাস দিলে তারা গ্যাস সরবরাহ করতে প্রস্তুত।
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের অভাবে ব্যবসায়ীরা নিজস্ব গ্যাসচালিত জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ (ক্যাপটিভ পাওয়ার) উৎপাদন করে কারখানাগুলো সচল রাখেন। কিন্তু তিতাসসহ বিতরণ কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন ধরে সঠিক চাপে (১৫ পিএসআই) বন্দিদের গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে না। এ কারণে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ অনেক এলাকার শিল্প মালিকরা সিএনজি স্টেশন থেকে সিলিন্ডারে গ্যাস এনে কারখানাগুলো সচল রাখছিলেন। ৬০,৯০ এবং ১৩০ লিটার ক্ষমতার সিলিন্ডার ভ্যানে রাখা হয় এবং গ্যাস সাধারণত বাড়ি এবং খাবার হোটেল থেকে নেওয়া হয়। এছাড়া অনেক সময় কারখানার জন্য কাভার্ড ভ্যানে ৫০ থেকে ১০০ সিলিন্ডার গ্যাস নেওয়া হয়। ১৩ অক্টোবর গাজীপুরে কাভার্ড ভ্যান থেকে গ্যাস নেওয়ার সময় বিস্ফোরণে পাঁচজন দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে একজন পরদিন মারা যান। এরপর সিএনজি স্টেশনগুলো গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি বন্ধ করে দেয়।
সিএনজি মালিকরা বলছেন, এভাবে গ্যাস দেওয়া বেআইনি হলেও কারখানা মালিকদের চাপে ও ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে অনেক স্টেশন থেকে সিলিন্ডারে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এতে আর্থিক লাভ হলেও তাকে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়।
তিতাসের এক কর্মকর্তা জানান, যানবাহন ছাড়া কারখানায় সিলিন্ডারে গ্যাস বিক্রি ও পরিবহন অবৈধ। তিনি বলেন, এসব সিলিন্ডার গ্যাস পরিবহনের জন্য নিরাপদ নয়। এ ছাড়া ভ্যান, ট্রাক, নছিমনে যেভাবে সিলিন্ডার বহন করা হয় তা ঝুঁকিপূর্ণ।
গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) এবং সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমইএ) উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সিলিন্ডারের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
সিএনজি ফিলিং স্টেশন ও কনভার্সন ওয়ার্কশপ মালিক সমিতিকে পৃথক চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্পে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার বিষয়ে গত ১২ সেপ্টেম্বর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ অধিদপ্তর এবং পেট্রোবাংলাকে শিল্প কারখানায় যথাযথ চাপ ও পরিমাণে গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। বিজিএমইএর চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, তৈরি পোশাক শিল্পে গ্যাসের কম চাপ এবং অনিয়মিত গ্যাস সরবরাহের কারণে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সকাল ৮টার পর গ্যাসের চাপ শূন্য সাই (প্রতি বর্গ ইঞ্চি চাপ) এ নেমে আসে। রাত ১১টার পর কিছুটা উন্নতি হয়। গ্যাসের অভাবে অলস সময় কাটাচ্ছেন কারখানার শ্রমিকরা। রপ্তানি আদেশ অনুযায়ী তৈরি পোশাক সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়াসহ একাধিকবার আলোচনা হলেও কার্যকর কোনো সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় বিজিএমইএ রপ্তানি আদেশ ধরে রাখতে সিলিন্ডারের মাধ্যমে কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করতে সিএনজি স্টেশন মালিকদের সহযোগিতা চায়। কারণ, বর্তমানে সিএনজি স্টেশনগুলো সিলিন্ডারের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করতে চায় না।
বিসিএমইএর সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা স্বাক্ষরিত চিঠিতে গ্যাসের ঘাটতির কথা তুলে ধরে বলা হয়, ছয় মাস ধরে সিরামিক কারখানায় সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টা, কখনো কখনো কয়েকদিনও গ্যাস পাচ্ছে না। অনিয়মিত গ্যাস সরবরাহের কারণে পণ্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রপাতি। উদ্যোক্তাদের অনেক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বারবার আলোচনা করে চিঠি দিয়েও কোনো সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় কারখানার চাহিদার ভিত্তিতে সিএনজি স্টেশন থেকে গ্যাস সরবরাহের বিষয়ে সিএনজি মালিক সমিতির সহযোগিতা প্রয়োজন।
জানতে চাইলে সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারহান নূর বলেন, অনেক ব্যবসায়ী সংগঠন তাদের কাছে সিলিন্ডারে গ্যাস চাইছে। নিয়ম অনুযায়ী তারা এভাবে গ্যাস দিতে পারে না। তাই এ বিষয়ে নির্দেশনা পেতে রোববার (আজ) পেট্রোবাংলাকে চিঠি দেবেন তারা। সরকার অনুমতি দিলে কারখানায় সিলিন্ডারে গ্যাস সরবরাহ করা হবে। কিন্তু নিরাপত্তা একটি অগ্রাধিকার হতে হবে. এ জন্য বিজিএমইএ ও বিসিএমইএকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নিরাপত্তা ও আইনি ছাড়পত্র নিতে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।