জাতীয়

বাধার পাহাড় ঠেলে খুলনায় বিএনপির গণসমাবেশ

কয়েকদিন ধরে বিভিন্নভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, ক্ষমতাসীন দলের হামলা, পুলিশের অভিযান, বাস, লঞ্চ, ট্রলারসহ গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও খুলনায় বিএনপির গণসভায় বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী-সমর্থক উপস্থিত ছিলেন। তারা ট্রাকে, ট্রেনে, প্রাইভেটকারে মাইলের পর মাইল হেঁটে বিভাগীয় সমাবেশে যোগ দেন। কয়েকদিন বিচ্ছিন্ন শহরটি শনিবার মিছিলের শহরে পরিণত হয়।

সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তত্ত্বাবধানে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের কোনো চিহ্ন থাকবে না। তারা ১০টি আসনও পাবে না। আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি বলেন, এখনো সময় আছে, নিরাপদে সরে যান। নইলে পালানোর পথ পাবেন না।

বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, সমাবেশে যাওয়ার পথে পুলিশের বাধা দেওয়া ছাড়াও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা ও মারধর করেছে। ২২ জন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। অনেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে সরকার সমর্থকরা।

দুপুর সোয়া ১২টায় নগরীর ডাকবাংলো মোড়ে এ গণসমাবেশ শুরু হয়। তবে শুক্রবার রাত থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী সেখানে জড়ো হন। সারারাত তারা সেখানেই ছিল। ভোর থেকেই ভিড় বাড়তে থাকে।

জনসভায় বিএনপি নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ঠেকাতে শুক্রবার সকাল থেকে বাস ও লঞ্চ ধর্মঘট শুরু হয়। রাত সাড়ে ৯টার পর থেকে রূপসা ঘাটে ট্রলার ধর্মঘট শুরু হয়। আর শনিবার সকাল থেকে রূপসা ও ভৈরব নদীর জেলখানা ঘাট, কাস্টম ঘাট, কালীবাড়ি ঘাট, বিআইডব্লিউটিএ ঘাটসহ সব ঘাটে ট্রলারে যাত্রীদের যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। সেই সঙ্গে ফেরি, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, মাহিন্দ্রাসহ ছোট ছোট গণপরিবহনও বন্ধ ছিল।

বাস, লঞ্চ, ট্রলার বন্ধ থাকলেও ট্রেন, ভাড়া করা ট্রাক, পিকআপ, মাইক্রোবাস, ইজিবাইক, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকারে নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দেন। সাগরপথে মালামাল ও বালু নিয়ে ট্রলারে করে সমাবেশে এসেছেন অনেকে। সকাল থেকেই নগরীর পাড়া-মহল্লা থেকে মিছিল নিয়ে আসেন নেতাকর্মীরা।

তারা জাতীয় ও দলীয় পতাকা বেঁধে বাঁশের লাঠি নিয়ে সমাবেশে আসেন। নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমানের দেশে ফেরার দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়েছিলেন। এছাড়া আসন্ন নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের ছবি ও নাম লেখা গেঞ্জি, ক্যাপ, মাথায় ব্যান্ড পরে আসেন অনেক নেতাকর্মী। দুপুর ১২টার আগেই খুলনা-যশোর মহাসড়কের ডাকবাংলো মোড় থেকে ফেরিঘাট মোড় পর্যন্ত জমজমাট হয়ে ওঠে।

মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার এ দেশকে নরকে পরিণত করেছে। ধ্বংস করেছে সব অর্জন। সরকার অবৈধ ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে এসব করছে। তারা ২০২৩ সালেও একইভাবে নির্বাচন করার পরিকল্পনা করছে।

সমাবেশে সরকার সহায়তার কথা বলছে বিএনপি মহাসচিব ড. স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কী সাহায্য করেছেন, বিভিন্ন জায়গায় হামলা হয়েছে। আপনি আটকে রাখতে পারবেন না. বিএনপি নতুন সাহস নিয়ে বলছে, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের বয়স হওয়া সত্ত্বেও আমরা লড়াই করছি। লড়াইয়ের মূল দায়িত্ব তরুণদের ওপর, লড়াইয়ে জিততে হবে। আমরা সহিংসতা নয়, শান্তিপূর্ণ কার্যক্রম করছি। আপনি আমাদের আক্রমণ করতে পারবেন না। বিদেশীরা বুঝে গেছে আপনি সন্ত্রাসী দল। হামলা করে ক্ষমতায় থাকা।

ফখরুল বলেন, আন্দোলন ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প নেই। এই সরকারকে পরাজিত করে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সরকার পদত্যাগ করুন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের প্রতীক থাকবে না, ১০টির বেশি আসন পাবে না। এই সরকারকে জনগণের অভ্যুত্থান থেকে বিদায় নিতে হবে। আমরা আমাদের দেশকে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনতে চাই। সিদ্ধান্ত হবে রাজপথে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন। তাহলে তারা কেন বললেন দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ১৯৭৪ সালে দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, সেই দুর্ভিক্ষ ছিল আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা ও লুটপাটের কারণে। তারা সারাদেশ লুটপাট করছে।

তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমাদের ভবিষ্যৎ কী? সরকার কি আপনাকে কিছু দিয়েছে? হ্যাঁ, সরকার যুবকদের ২০-৩০ লাখ টাকায় চাকরি দিচ্ছে। সরকার বলেছিল চালের দাম ১০ টাকা, এখন চাল কিনতে হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। তারা রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ক্ষমতায় থাকতে চায়।

মন্তব্য করুন