জাতীয়

বদলি নীতির উপর নির্ভর করবেন না

ক্যাপিটাল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (রাজউক) টেলিফোন অপারেটর তরিকুল ইসলাম সেবা ব্যবহারকারীদের টেলিফোনের উত্তর দেওয়া এবং কর্মকর্তাদের প্রয়োজনে ইন্টারকমে বিভিন্ন লোকের কাছে ফোন হস্তান্তরের জন্য দায়ী। তিনি বিভিন্ন বিভাগ, শাখা বা আঞ্চলিক অফিসে এই দায়িত্ব পালন করবেন। তবে তরিকুল সাত বছর ধরে রাজউকের জোন-১ এস্টেট (সম্পত্তি) শাখায় অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে এই পদের দায়িত্ব নেন। কারণ, আপনি যদি এস্টেট শাখায় থাকেন, তাহলে প্লটের ফাইল সরিয়ে কিছু অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। এ জন্য তিনি এই শাখা ছাড়তে চান না। ফলে টেলিফোন অপারেটর একই জায়গায় বছরের পর বছর ধরে ম্যানেজ করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

শুধু তরিকুল ইসলাম নন রাজউকে এমন শত শত কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন, যারা বছরের পর বছর এস্টেট শাখার মতো সুবিধাজনক জায়গায় পদায়ন করছেন। মাঝে মধ্যে বদলি হলেও এক-দুই মাসের মধ্যে আবার তদবির করে ‘মধু’ জায়গায় ফিরে যাচ্ছেন। তাদের পছন্দের পোস্টিং এর মধ্যে রয়েছে গুলশান-বনানী, পূর্বাচল এবং উত্তরায় এস্টেট শাখা। প্রত্যেকে ১০ থেকে ২০ বছর ধরে একই জায়গায় কাজ করছে। তবে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য প্রণীত বাংলাদেশ চাকরি বিধিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে বদলিযোগ্য হলে সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি তিন বছর অন্তর বদলি করতে হবে।

সরকারি চাকরিজীবীদের বদলির সাধারণ শর্তাবলীতে এটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। কিন্তু রাজুতে কখনোই এই নিয়ম মানা হয় না। বছরের পর বছর একই জায়গা থেকে এই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেড়ে উঠছে। দুর্নীতির একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গাড়ি-বাড়িসহ কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছে। তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে সাধারণ সেবা ব্যবহারকারীরা। আপনি যদি সেগুলি পরিচালনা করতে না পারেন তবে ফাইলের গতি হারিয়ে যায়। কখনও কখনও ফাইলগুলিও অদৃশ্য হয়ে যায়। এর মধ্যে কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলাও চলছে। অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির লিখিত অভিযোগ আমলে নেয়নি রাজউক।

এ বিষয়ে রাজউক চেয়ারম্যান আনিচুর রহমান মিয়া বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর বিষয়টি তার নজরে এসেছে। কারা একই জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত আছেন- এমন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন। ইতিমধ্যে কয়েকজনের তালিকা হাতে পেয়েছেন। কিন্তু কিছু লোক বদলি হলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে তাই এই ধরনের সকল লোককে একসাথে আন্তঃবদলি করা হবে। তাহলে কেউ প্রশ্ন করতে পারবে না। এক মাসের মধ্যে তা করা হবে। তিনি আরও বলেন, এর আগে এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নেওয়ায় সংকটের স্তূপ তৈরি হয়েছে।

জানা গেছে, কানুনগো আব্দুস সাত্তার প্রায় দশ বছর ধরে পূর্বাচল সেলে দায়িত্ব পালন করছেন। পূর্বাচলে প্লটের সীমানা নির্ধারণসহ বিভিন্ন কাজ হাতে থাকায় তার আয় বেশ ভালো। তবে আবদুস সাত্তার জানান, ২০১৫ সাল থেকে তিনি সেখানে আছেন। কর্তৃপক্ষ তাকে আটকে রেখেছে। এখানে তার কিছু করার নেই।

পূর্বাচলের সহকারী পরিচালক ফারিয়া সুলতানা কর্মজীবনের শুরু থেকেই এই জায়গায় কাজ করছেন। কতদিন পূর্বাচল সেলে কাজ করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রশাসন থেকে জেনেছি। এখন পর্যন্ত আমার পদোন্নতি হয়নি। এখন শুনলাম আমাকে বদলি করা হবে।’ সিনিয়র সহকারী ইউসুফ হোসেন সাত বছর ধরে জোন-১ (গুলশান-বনানী-বারিধারা) কর্মরত আছেন। অবশ্য সে বলল, বেশিদিন হবে না, চার-পাঁচ বছর হয়ে গেছে। এর আগে আমি প্রশাসনে ছিলাম। হিসাব সহকারী রবিন হোসেন, অফিস সহকারী মনোয়ারা, পূর্বাচল এস্টেটের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর গিয়াস উদ্দিন ১৩ বছর ধরে। রবিন হোসেন বলেন, ‘পশ্চাৎপদে, আমি এতদিন থাকব না। এটা চার-পাঁচ বছর হতে পারে।’

অথরাইজড অফিসার নুরুজ্জামান জাহিদও ছয় বছর ধরে জোন-৫ (ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুর এলাকা) দায়িত্ব পালন করছেন। তবে কাছে তিনি দাবি করেন- এখানে চার বছর হতে পারে।

ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হেলাল উদ্দিন উত্তরা (এস্টেট-৩) এস্টেট শাখায় ১৫ বছর ধরে কর্মরত আছেন। অফিস সহকারী কেএম আস্তান তারা বিপ্লব ১০ বছর ধরে উত্তরা এস্টেট শাখায় আছেন। অফিস সহকারী নার্গিস ও রেকর্ড কিপার আলমগীর হোসেন ১১ বছর ধরে উত্তরা এস্টেট শাখায় কর্মরত। সহকারী পরিচালক জুয়েল সেরনিয়াবাত শুরু থেকেই উত্তরা কার্যালয়ের এস্টেট বিভাগে কর্মরত।

মন্তব্য করুন