• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    ঋণের টাকা গায়েবের  নকশায় চেয়ারম্যান

    ঋণের নামে উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা লোকসানের নকশায় সরাসরি জড়িত প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান রশিদুল হাসান। তার সঙ্গে কোম্পানির একাধিক পরিচালক ও কর্মকর্তা ছিলেন। জামানত ও ঋণের নথিপত্র জমা না দিয়ে এবং পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ছাড়াই ছয় বছর (২০১৬ থেকে ২০২১) সময়কালে অর্থ জালিয়াতিভাবে অপব্যবহার করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) তদন্তে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে।

    এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর কোম্পানির ৯ কর্মকর্তাকে বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে ইতিমধ্যেই ৩৪ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠিয়েছে বিএফআইইউ। বিএফআইইউর প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই করে তদন্ত করছে দুদকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বীমা শাখা। অর্থ পাচারের সত্যতাও খুঁজে পেয়েছে দুদক।

    বিএফআইইউ প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে দুদক বলছে, ঋণের নামে হারিয়ে যাওয়া অর্থের মধ্যে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা হিসাব পাওয়া গেছে। প্রথম ধাপে ২০টি কোম্পানির নামে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, দ্বিতীয় ধাপে ৩৪টি কোম্পানির নামে ৪৮৩ কোটি টাকা, তৃতীয় ধাপে ১৬টি কোম্পানির নামে ৪৫ কোটি টাকা এবং চতুর্থ দফায় ৪৪৫ কোটি টাকা। ১২টি কোম্পানির নামে।

    এ বিষয়ে কথা বলতে উত্তরার ফাইন্যান্সের এমডি ও সিইও (ভারপ্রাপ্ত) মুন রানী দাসের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তার সংযোগ পাননি। পরে কোম্পানির কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ মহিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এক কোম্পানির নামে অন্য কোম্পানিতে ঋণ স্থানান্তরের তথ্য সঠিক নয়। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকরা কোনো ঋণ নেননি। পরিচালকদের টাকা বরং জমা হয়।’ বিএফআইইউর তদন্তে কোম্পানির মালিকদের ঋণের নামে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেলেও কোম্পানি সচিব তা এড়িয়ে যান।

    এ বিষয়ে উত্তরা ফাইন্যান্সের ল্যান্ডলাইন ফোনে যোগাযোগ করে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান রাশিদুল হাসানের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও একাধিকবার চেষ্টা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, বিএফআইইউর প্রতিবেদনে অর্থ আত্মসাতের সব ধরনের প্রমাণ রয়েছে। সেই তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। যারা দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

    বিএফআইইউ প্রতিবেদনে যা আছে: প্রথম অংশে উল্লেখ করা হয়েছে- পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ছাড়া, কোনো জামানত ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের নামে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। উত্তরা গ্রুপের ২০টি কোম্পানির অনুকূলে ঋণ। ওই ২০টি কোম্পানি উত্তরা ফাইন্যান্সের পরিচালকের সংশ্লিষ্ট কোম্পানি।

    আইন অনুযায়ী, কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মালিক ব্যক্তি তার মালিকানাধীন কোনো কোম্পানির অনুকূলে একই প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে তারা আইন অমান্য করে তাদের মালিকানাধীন কোম্পানির নামে ঋণ আত্মসাৎ করেছে। তারা উত্তরা ফাইন্যান্স থেকে যে প্রতারণামূলক ঋণ নিয়েছিল তা তাদের প্রতিষ্ঠানে জমা রাখা আমানতের দ্বিগুণ।

    দ্বিতীয় অংশে উল্লেখ করা হয়েছে, উত্তরা ফাইন্যান্স যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই আরও ৩৪টি কোম্পানির অনুকূলে ঋণের নামে আরও ৪৮৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। এ ক্ষেত্রেও ঋণের বিপরীতে জামানত ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়নি।

    তৃতীয় অংশে উল্লেখ করা হয়েছে- ১৬টি প্রতিষ্ঠানের নামে ৪৫ কোটি টাকা ঋণ অন্য প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসেবে স্থানান্তর করা হয়েছে। পরে সেই টাকা আত্মসাৎ করা হয়।

    চতুর্থ অংশে বলা হয়েছে- উত্তরা ফাইন্যান্স থেকে ১২টি কোম্পানির নামে ৪৪৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে অন্য কোম্পানির ব্যাংক হিসেবে স্থানান্তর করে আত্মসাৎ করা হয়।

    এর মধ্যে আনোয়ারা পেপার্স মিলের নামে ২৬ কোটি টাকা ঋণ হাবিব স্টিল কোম্পানিতে ব্যাংক হিসেবে স্থানান্তর করা হয়। এইচজি এভিয়েশনের নামে ব্যাংক হিসেবে হাবিব স্টিল, জনতা স্টিল, পদ্মা অয়েলে ৩০ কোটি টাকা ঋণ স্থানান্তর করা হয়। রিজেন্ট স্পিনিংয়ের নামে হাবিব স্টিল, মার্কেন্টাইল ও মিডল্যান্ড ব্যাংকে ৩০ কোটি টাকা ঋণ স্থানান্তর করা হয়। রিজেন্ট ফেব্রিক্সের নামে ৩০ কোটি টাকার ঋণ হজ ফাইন্যান্স অ্যান্ড রিজেন্ট উইভিং-এ ব্যাংক হিসেবে স্থানান্তর করা হয়। এসএ অয়েল রিফাইনারির নামে ৩০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ব্যাংক হিসেবে প্রবেশ করে সামান্নাজ সুপার অয়েল। সামনাজ সুপার অয়েলের নামে ১০ কোটি টাকা ঋণ ব্যাংক হিসেবে এসএ অয়েল কোম্পানিতে স্থানান্তর করা হয়। অয়েল মার্টের নামে ব্যাংক হিসেবে সানজি টেক্সটাইলে ২০ কোটি টাকা ঋণ স্থানান্তর করা হয়। অয়েল ফুডের নামে অয়েল মার্টের ব্যাংক হিসেবে ১০ কোটি টাকা ঋণ স্থানান্তর করা হয়। সাদ মুসা কোম্পানির নামে ২০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে অন্য কোম্পানিতে ব্যাংক হিসেবে স্থানান্তর। রোকেয়া স্পিনিং মিলের নামে রহমান ডাইং-এর ব্যাংক হিসাবে ৪৭ কোটি টাকা ঋণ স্থানান্তর করা হয়েছে। আরামিত ফুটওয়্যারের ব্যাংক হিসেবে আরামিত সিমেন্টের নামে ৩২ কোটি টাকার ঋণ স্থানান্তর করা হয়েছে। নামে ১৬০ কোটি টাকা।

    মন্তব্য করুন