• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    ব্যবসায়ীদের মত।ভারতের সিদ্ধান্তের বিপাকে পড়বে চাল আমদানিতে

    ভারত চাল রপ্তানিতে শুল্ক আরোপ করায় বাংলাদেশের আমদানি সমস্যায় পড়বে। চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ সিদ্ধান্তের কারণে ভারত থেকে আমদানি ব্যয় বাড়বে। আবার অন্য দেশের বাজারে চালের দাম বাড়বে। ফলে বাংলাদেশ সরকার শুল্ক কমিয়ে বাজারে চালের সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টা করছে এবং তার সফলতা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

    গত বৃহস্পতিবার ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন ধরনের ধান চাল রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। একই সঙ্গে ভাঙা চাল বা খুদ রপ্তানি নিষিদ্ধ; যা গত শুক্রবার কার্যকর হয়েছে। ভারতের প্রধান ধান উৎপাদনকারী রাজ্যগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাতের কারণে এ বছর উৎপাদন কম হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে রপ্তানিকে নিরুৎসাহিত করে রিজার্ভ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।

    ভারতের সিদ্ধান্তের ফলে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশে চালের দাম বেড়েছে বলে ।ভারতের সিদ্ধান্তের একদিন পর মিয়ানমারে চালের দাম টনপ্রতি ৫০ ডলার বেড়েছে। থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামেও দাম বেড়েছে। এমনকি বিশ্ববাজারে গম ও ভুট্টার দামও কিছুটা বেড়েছে। বিশ্ববাজারের চালের ৪০ শতাংশ আসে ভারত থেকে। দেশের মোট রপ্তানিযোগ্য চালের ৬০ শতাংশের জন্য বৃহস্পতিবার ভারত যে ধরনের চালের শুল্ক আরোপ করেছে।

    বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন ও পরিবহন খরচ বেড়েছে। ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের দাম বেড়েছে। আমন উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় দেশের বাজারে চালের সরবরাহ বাড়াতে চার শতাধিক কোম্পানিকে ১০ লাখ টনের বেশি চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে আতপ চাল প্রায় দুই লাখ টন। সরকার খোদ ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে সিদ্ধ চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে।

    ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে চাল আমদানির প্রধান উৎস ভারত। কারণ, সড়কপথে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে দ্রুত দেশে চাল আনা যায়। পরিবহন খরচও কম। বাংলাদেশের বাজারেও ভারতীয় চালের চাহিদা রয়েছে। রপ্তানির ওপর শুল্ক আরোপের ফলে ভারত থেকে চাল আমদানির খরচ বেড়ে যাবে। এছাড়া এশিয়ার শীর্ষস্থানীয় চাল রপ্তানিকারক দেশটির এই সিদ্ধান্তে অন্যান্য দেশেও দাম বাড়বে। যা বাংলাদেশকে সামগ্রিকভাবে চাল আমদানিতে সমস্যায় ফেলবে।

    সরকার ইতিমধ্যে ভারত থেকে জিটুজি ভিত্তিতে আমদানির চুক্তি করেছে। আবার বেসরকারি খাতের অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভারত থেকে ধানের চাল আমদানির এলসি খুলেছে। কিছু ক্ষেত্রে একই এলসি থেকে কিছু চাল দেশে এসেছে, কিছু চাল ভারতীয় বন্দরে খালাসের অপেক্ষায়, কিছু চাল বন্দরে যাওয়ার পথে। এসব চালের ওপর ভারত সরকার ঘোষিত শুল্ক আরোপ হবে কি না তা নিয়ে চিন্তিত ব্যবসায়ীরা। এ প্রসঙ্গে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি পরিষ্কার নয়। বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। সে কারণে এই সিদ্ধান্ত কীভাবে কার্যকর হবে তা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জানা যায়নি। বিষয়টি রোববার জানা যাবে।

    বাংলাদেশ অটো-মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল মালিক সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি শহীদুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, আতপ চালের ওপর ভারত শুল্ক আরোপ করেছে। আতপ চাল আমদানিতে যেমন খরচ বাড়বে, অন্য চালের দামও বাড়বে। অন্যান্য দেশেও দাম বাড়বে। তিনি বলেন, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও সিলেট এলাকায় মোট চাহিদার অর্ধেকের বেশি চাল। অন্যান্য এলাকায়ও আতপ চালের চাহিদা বাড়ছে। কারণ এর দাম কম। তিনি বলেন, সরকার আমদানি শুল্ক ১৫ শতাংশ কমিয়ে আনার পর যে পরিমাণ চাল আমদানি হয়েছে তার বেশির ভাগই আতপ চাল।

    একই সংগঠনের উপদেষ্টা ও ঠাকুরগাঁও চালচলন মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান রাজু বলেন, ভারতের সিদ্ধান্তের নেতিবাচক প্রভাব বাজারে পড়বে। আমদানি নিরুৎসাহিত হবে, দাম বাড়বে।

    বাজারে চাল বিক্রি করে এমন একটি কর্পোরেট সংস্থার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ভারতের এই সিদ্ধান্ত চাল আমদানিকে নিরুৎসাহিত করবে। চালের দামও বাড়বে। কারণ, ভারত আন্তর্জাতিক বাজারে একটি প্রধান সরবরাহকারী।

    মন্তব্য করুন