জাতীয়

বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমলেও দেশে চড়া

মহামারি করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে গত এক বছরে বিশ্ববাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশে প্রায় সব পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে অধিকাংশ পণ্যের দাম ধীরে ধীরে কমলেও দাম বাড়ার পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। দেশের বাজারে বাড়তি দাম তো কমেনি, উল্টো আগের চেয়ে বেড়েছে কিছু পণ্যের দাম। এতে করে সংসারের চাকা ঘুরিয়ে খাবার খাচ্ছেন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।

বিশ্ববাজারে কিছু পণ্যের দাম ৬ থেকে ১৯ শতাংশ বাড়লেও দেশে বেড়েছে ১০ থেকে ৬৭ শতাংশ। সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ নিত্যপণ্যের বাজারে দামের এত বড় পার্থক্য প্রকাশ পেয়েছে। প্রতিবেদনে বিভিন্ন পণ্যের বর্তমান চাহিদা, উৎপাদন ও আমদানির বিস্তারিত তথ্য রয়েছে।

চাল, আটা, মসুর, পেঁয়াজ, চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। নির্মাণ সামগ্রীর মধ্যে রড ও সিমেন্টের তুলনামূলক মূল্য চিত্র দেখানো হয়েছে। এছাড়া বৈশ্বিক বাজার ও দেশের জ্বালানি তেলের দামের মধ্যে ব্যবধান রয়েছে।

এদিকে উৎপাদক ও আমদানিকারকরা বলছেন, বিশ্ববাজারে দাম কমলেও ডলারের দাম বাড়ায় কিছু খাতের ব্যবসায় লোকসান হচ্ছে। এ ছাড়া কিছু সিন্ডিকেট ও মজুদদারের কারণে পণ্যের দাম বেড়েছে। কিন্তু এখন বিশ্ববাজারে দাম কমতে থাকায় আরও দেড় থেকে দুই মাস পর সুবিধা পাবেন ভোক্তারা।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) এ কে এম আলী আহাদ খান  বলেন, বৈশ্বিক বাজার পরিস্থিতির সঙ্গে দেশের বাজারে নিত্যপণ্য ও অন্যান্য পণ্যের দাম সমন্বয়ের দায়িত্ব ট্যারিফ কমিশনকে দেওয়া হয়েছে। তিন-চার দিন আগে তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়। বিশ্ববাজার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতে তাদের ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর তা বিশ্লেষণ করে দেশের বাজারে পণ্যের মূল্য পুনরায় নির্ধারণ করা হবে।

বিশ্ববাজারে চালের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ, আটার দাম ৮ গুণ : প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ববাজারে গত এক বছরে সরু চালের দাম প্রায় ৭ শতাংশ বাড়লেও তা বেড়েছে। দেশে ১৩ শতাংশ। আন্তর্জাতিক বাজারে মাঝারি চালের দাম ৭ শতাংশ বাড়লেও দেশে তা বেড়েছে ১০ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মোটা চালের দাম। বিশ্ববাজারে এ মানের চালের দাম বেড়েছে ৭ শতাংশের একটু বেশি। বিপরীতে বাংলাদেশে তা বেড়েছে ১৯ শতাংশ। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিশ্ববাজারে এক বছরে গড়ে ৭ শতাংশ কমেছে। তবে দেশে বৃদ্ধি দ্বিগুণ হয়েছে, অর্থাৎ ১৪ শতাংশ।

একইভাবে আটার দামেও বড় উল্লম্ফন দেখা গেছে। এক বছরে বিশ্ববাজারে আটার দাম আট শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে তা বেড়েছে ৮ গুণের বেশি, অর্থাৎ ৬৭ শতাংশ।

চালের দাম বাড়ার পেছনে কিছু সিন্ডিকেট ও মজুতদারের হাত রয়েছে বলে জানান উৎপাদকরা। বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এইচআর খান পাঠান সাকি বলেন, মিল মালিকরা আড়তদারদের কাছে ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজি দরে মোটা চাল সরবরাহ করে। সেই চাল পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের মাধ্যমে ভোক্তার কাছে যায়। ফলে দাম বেড়ে যায়। তবে এত দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই।

বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খোরশেদ আলম খান বলেন, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের বিপুল বিনিয়োগের কারণে অনেক রাইস মিল বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে কিছু সিন্ডিকেট ও মজুতদারের হাতে চলে গেছে চালের বাজার। এ কারণে দাম বেড়ে যায়। তাদের চিহ্নিত করে তাদের মোকাবেলা করতে হবে। এছাড়া বন্ধ থাকা মিলগুলোকে ঋণ সহায়তায় পুনরায় চালু করতে হবে। তাহলে চালের বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়বে।

মসুর ডাল, পেঁয়াজ ও চিনির দামে উল্টো প্রবণতা: আন্তর্জাতিক বাজারে মসুর ডাল, পেঁয়াজ ও চিনির দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। তবে বাংলাদেশে দাম কমেনি, বরং অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বিশ্ববাজারে ডালের দাম গড়ে ১৪ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে, দেশে বড় দানার মসুর ডালের দাম বেড়েছে ৩৯ শতাংশ এবং মাঝারি ও ছোট দানার দাম প্রায় ২৯ শতাংশ বেড়েছে। গত এক বছরে দেশে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৯ শতাংশ, যা বিশ্ববাজারে কমেছে প্রায় ২৮ শতাংশ। অর্থাৎ দেশে গড় দাম বেড়েছে ৩২ শতাংশ।

মন্তব্য করুন