জাতীয়

পশ্চিমা চাপ মোকাবেলায় সহযোগিতা চাইবে ঢাকা

করোনা-পরবর্তী রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বিশ্ব। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। র‌্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার সরাসরি প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশে। ঢাকা পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাকে এক ধরনের চাপ হিসেবে দেখছে। এই চাপ মোকাবিলায় ভারতের সহযোগিতা চাইবে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় রাষ্ট্রীয় সফরে আজ ভারত যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা ও নয়াদিল্লি সেখানে দ্বিপাক্ষিক, বহুপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও সার্বিক বিষয়ে আলোচনা করবে।

র‌্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, এটি দূর করতে ভারতের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ভারতের কাছে পরামর্শ চেয়েছে বলেও জানান তিনি।

কূটনীতিকদের মতে, প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফরে সম্পর্কের সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে। এতে স্থিতিশীলতা গুরুত্বপূর্ণ হবে, বিশেষ করে রাশিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর অর্থনৈতিক চাপে রয়েছে বাংলাদেশ। আর এই চাপ রাজনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছে সরকার। কারণ বাংলাদেশের সামনে শ্রীলঙ্কা এর বড় উদাহরণ। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আলোচনায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা একটি বড় বিষয়। এই ক্ষেত্রে, একটি দেশ অন্য দেশের সরকারের শাসনকে দীর্ঘায়িত করতে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থন প্রত্যাশা করে। এ প্রসঙ্গে তারা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে ভারতের সাহায্য চাওয়ার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যের কথা উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর উপলক্ষে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখানে শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখতে আসন্ন সফরে ভারতের কাছে সাহায্য চাওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে সরাসরি কোনো উত্তর দেননি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। তিনি বলেন, আমার কাজের অন্যতম অগ্রাধিকার হচ্ছে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা। এ দুটি থাকলে আমাদের অর্জন টেকসই হবে। শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য যা যা করা দরকার আমরা তা করব। এবং আমি ভারতকে বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ হিসাবে এটি অর্জনের জন্য যা করা দরকার তা করার জন্য অনুরোধ করেছি। আসামের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা শান্তি ও স্থিতিশীলতার মূর্ত প্রতীক, একটি অসাম্প্রদায়িক সমাজ ব্যবস্থার মূর্ত প্রতীক।

আগামী নির্বাচন নিয়ে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনা হবে কি না জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখনই অন্য দেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে কথা বলেন, তখন তিনি বেশিরভাগ দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে কথা বলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্তে আলোচনাও করবেন তিনি। আমি জানি না সেখানে কি আলোচনা হবে। নির্বাচনের এখনো কয়েকদিন বাকি। তাই এই বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন নই। তবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বাংলাদেশ অন্য কোনো রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আলোচনা করে না।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও রাষ্ট্রদূত শমসের মবিন চৌধুরী রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশ কিছুটা চাপ ও ভোগান্তির মধ্যে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। বাংলাদেশের জ্বালানি সরবরাহ অনিশ্চিত ও ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে। স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে পশ্চিমা চাপের প্রভাব এই সফরে পড়বে না বলে মনে করেন তিনি।

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম. হুমায়ুন কবির পশ্চিমা চাপ মোকাবেলায় ভারতের সহযোগিতাকে বাস্তবসম্মত বলে মনে করেন না। তিনি বলেন, যেসব বিষয়ে ভারতের সহযোগিতা চাওয়ার কথা সেখানে ভারতের সহযোগিতার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের সমস্যা নিজেদেরই সমাধান করতে হবে। আমরা সমস্যা তৈরি করব, এবং অন্যরা সমাধান করবে, এমন নয়।

সোমবার সকাল ১০টার দিকে একটি বিশেষ বিমানে ভারতের উদ্দেশে রওনা হবেন প্রধানমন্ত্রী। ভারতের রেল ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী দর্শনা বিক্রম জারদোস তাকে দিল্লি বিমানবন্দরে স্বাগত জানাবেন। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে আসতে পারেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর আজ বিকেলে হোটেলে শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এরপর বিকেলে নিজামুদ্দিন আউলিয়া দরগায় যাবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে কিছু সময় কাটিয়ে তিনি হোটেলে ফিরবেন। সন্ধ্যায় শেখ হাসিনা ভারতের অন্যতম বৃহৎ শিল্প গ্রুপ আদানির চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

আগামীকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি ভবনে যাবেন শেখ হাসিনা। সেখানে তাঁকে স্বাগত জানাবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এখানে অনুষ্ঠান শেষে রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর তিনি দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে যোগ দিতে হায়দ্রাবাদ হাউসে যাবেন। সেখানেও তাঁকে স্বাগত জানাবেন মোদি। এরপর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পাশাপাশি রুদ্ধদ্বার বৈঠক করবেন। এই বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে চুক্তিও সই হবে।

একটি যৌথ বিবৃতি হিসাবে। বিকেলে ভারতের উপরাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক শেষে ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা।

বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রী ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নমন্ত্রী কিষাণ রেড্ডির সঙ্গে বৈঠক করবেন। এরপর হোটেল রুমে বাংলাদেশ-ভারত বিজনেস ফোরামে অংশ নেবেন তিনি। এছাড়া বিকেলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় সেনাদের পরিবারের সদস্যদের ‘মুজিব বৃত্তি’ প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি। ৮ সেপ্টেম্বর সকালে প্রধানমন্ত্রী জয়পুর যাবেন। সেখানে তিনি আজমিরের খাজা গরীবে নেওয়াজ দরগাহ শরীফে যাবেন। সারাদিন সেখানে কাটিয়ে বিকেলে জয়পুর থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা। রাত ৮টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

মন্তব্য করুন