জাতীয়

বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ।হাতকড়া ভয়ে নেতাকর্মীরা ঘরছাড়া

বিএনপির চলমান বিক্ষোভ কর্মসূচিকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা ও সংঘর্ষ চলছে। এ কারণে দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করছে পুলিশ। হাজার হাজার নেতাকর্মীর নামে মামলা দেওয়ার পর পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। মামলায় অজ্ঞাত শতাধিক আসামি থাকায় এজাহারনামিয়া ছাড়াও দলের অনেক সক্রিয় নেতা গ্রেফতার আতঙ্কে এখন এলাকার বাইরে।

অভিযানে পুলিশ নেতাকর্মীদের খুঁজে না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটলেও ওই সব ঘটনায় হামলাকারীদের কাউকেই ধরতে পারেনি পুলিশ। এদিকে পুলিশি হয়রানি ছাড়াও নরসিংদীতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মামলা ও গ্রেফতারের হুমকি দিয়ে বিএনপি নেতাদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। তবে পুলিশ হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, কাউকে অহেতুক হয়রানি করা হচ্ছে না।

নোয়াখালীতে ১০টি মামলায় ৩৫০০ নেতাকর্মীকে আসামি করে ৭৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় দেড় হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। এরই মধ্যে ২৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। মানিকগঞ্জে আড়াই হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। ফেনীতে চারটি মামলার আসামি ১ হাজার ১১৮ জন। নেত্রকোনায় পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে। যশোরে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা বিএনপি নেতাদের বাড়িতে হামলা চালালেও পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো বিএনপির ২৮ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

কিছুটা উল্টো চিত্র নারায়ণগঞ্জে। দুই মামলায় ৫ হাজার ৯৭১ জনকে আসামি ও ১০ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলেও এখন পর্যন্ত নেতাকর্মীদের বাড়িতে গিয়ে ব্যাপক তল্লাশি চালাচ্ছে না পুলিশ।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, অসহনীয় লোডশেডিং, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং ভোলায় ছাত্রদল ও স্বচ্ছাসেবক দলের দুই নেতা পুলিশের হাতে নিহতের প্রতিবাদে গত ২২ আগস্ট থেকে বিক্ষোভ করছে বিএনপি।

নোয়াখালীতে বিএনপির সমাবেশ ও প্রতিবাদ সভায় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় ১০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে বিএনপির ৩ হাজার ৫২৮ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৭৪ জনকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে পুলিশ।

গত ২৪ থেকে ২৯ আগস্ট জেলার সদর, চাটখিল, সোনাইমুড়ী ও সেনবাগ উপজেলায় এসব সংঘর্ষ ও মামলার ঘটনা ঘটে। ১০টি মামলায় নাম আসামির সংখ্যা ৯৬৮ এবং অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা ২ হাজার ৫৬০ জন। বাদী হয়েছে পুলিশ। ৫টি মামলা এবং বাকি মামলা আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। মামলার পর গ্রেফতার আতঙ্কে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় বিএনপি, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনায় ১৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়েছে। এ মামলায় অজ্ঞাত আরও ১৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই ২৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এলাকাবাসী জানান, শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থক আত্মগোপনে থাকায় বাড়ির মহিলারা আতঙ্কে রয়েছেন। স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজকর্ম চালাতেও পরিবারগুলোকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

মানিকগঞ্জে সংঘর্ষের ঘটনায় ৩৩ জনের নাম উল্লেখসহ আড়াই হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। রোববার তাদের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক।

বর্তমানে গ্রেফতার আতঙ্কে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে দ্বারে দ্বারে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।

জেলা যুবদলের সদস্য সচিব তুহিনুর রহমান তুহিন বলেন, পুলিশ প্রতিটি নেতাকর্মীর বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে। পুলিশ কয়েকজন নেতাকর্মীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে। তবে মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ সরকারের পক্ষ থেকে অসদাচরণের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ফেনী জেলা শহর, দাগনভূঞা ও সোনাগাজীতে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ৪টি মামলা করেছে। এসব মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ১ হাজার ১১৮ জন। এর মধ্যে ২৫৮ শনাক্ত ও ৮৬০ জন অজ্ঞাত। বিএনপির জেলা কমিটির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার বলেন, পুলিশ অজ্ঞাত আসামিদের নামে গ্রামের লোকজনকে গ্রেফতার করে থানায় আটকে রাখছে। তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। হাজার হাজার নেতাকর্মী ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

গ্রেফতার, পুলিশি হয়রানি ও সরকারি দলের লোকজনের হামলার ভয়ে নেত্রেকোনায় এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। গত বৃহস্পতিবার দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে বিএনপিসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে নেত্রকোনা মডেল থানায় আরও ৫ শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করে।

জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন খান রনিসহ ১৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। রোববার ১৪ জনকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক একজনকে জামিন দিলেও ১৩ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

নরসিংদী: মনোহরদী উপজেলায় বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার মামলায় ৭৩ নেতাকর্মীকে হাইকোর্ট অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিলেও থামেনি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হয়রানি। মনোহরদী বলেন, তারা বিএনপির নেতা-কর্মীদের আটক করে পুলিশে সোপর্দ করার হুমকি দিয়ে বিভিন্নজনের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করছে।

মন্তব্য করুন