• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    যাত্রাপথে  বিগড়ে যাচ্ছে রেলের ‘বুড়ো ইঞ্জিন’।পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে

    ইস্টার্ন রেলওয়ের বেশির ভাগ ইঞ্জিন (লোকোমোটিভ) এবং পুরানো। এ কারণে চলাচলের সময় ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেলে তা যাত্রীদের মেজাজ গরম হয়ে যায়। সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে না পারায় সীমাহীন বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। তথ্য অনুযায়ী, শুধু রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলেই গত তিন মাসে চলাচলের সময় অন্তত ৭০টি ইঞ্জিন বিকল হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মূলত জনবলের অভাবে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের অভাবে রেলের ইঞ্জিনগুলো বারবার এমন বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে।

    সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের মতে, সাধারণত ব্রেক চাপ কমে যাওয়া, ইঞ্জিনের অস্বাভাবিক গরম হওয়া, বৈদ্যুতিক সমস্যা এবং যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ইঞ্জিন ফেইলিউর হয়ে থাকে। চলন্ত অবস্হায় ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেলে লোকোমাস্টার (চালক) মোবাইল ফোনে নির্দেশনা দিয়ে ইঞ্জিন চালু করার চেষ্টা করেন। বড় ধরনের ত্রুটি ধরা পড়লে ট্রেনটিকে অন্য ইঞ্জিন দিয়ে চালানো হয় এবং ত্রুটিপূর্ণ ইঞ্জিন মেরামতের জন্য অন্য ইঞ্জিনের সাহায্যে ওয়ার্কশপে পাঠানো হয়। এসব করতে করতে অনেক সময় চলে যায়। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।

    পূর্বাঞ্চলে চলমান রেলওয়ের ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেলে বা রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হলে তা চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে ডিজেল লোকোমোটিভ ওয়ার্কশপে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই ওয়ার্কশপে প্রতি দেড় বছর পর পর একটি ইঞ্জিন রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। ইঞ্জিনের নিয়মিত যান্ত্রিক ত্রুটিগুলিও সংশোধন করা হয়।

    সূত্র জানায়, রেলওয়ের বহরে ২৬৩টি ইঞ্জিন রয়েছে। এর মধ্যে ১৭৫টি অপ্রচলিত, যা মোট ইঞ্জিনের ৬৭ শতাংশ। এই মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিনগুলির মধ্যে, ৭৮টি ৫০ বছরের বেশি পুরানো। এমনকি ১৯৫৩ সালে কেনা ৯টি লোকোমোটিভ এখনও ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে সাধারণত একটি ইঞ্জিনের পরিষেবা জীবন ২০ বছর বলে মনে করা হয়। ২৬৩টি ইঞ্জিনের মধ্যে ১৫৯টি ইঞ্জিন বর্তমানে পূর্ব রেলওয়েতে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১০২টি চালু রয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণ এবং ডিকমিশনিং অধীনে ৫৭ আছে. এসব ইঞ্জিনের দুই-তৃতীয়াংশই পুরনো। পূর্বাঞ্চলে দৈনিক ১১৬টি ইঞ্জিনের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু নিয়মিত ইঞ্জিন ৯০-৯৫ পাওয়া যায়। ফলে ট্রেন পরিচালনায় হিমশিম খাচ্ছে রেল।

    রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, মে মাসে ২৮ বার, জুন মাসে ২৯ বার এবং জুলাইয়ে ১৩ বার ইঞ্জিন বিকল হয়। এর মধ্যে অন্তত ৪৬ বার ইঞ্জিন বিকল হয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে যাত্রীদের এক থেকে দুই ঘণ্টা অতিরিক্ত সময় লেগেছে। কোনো জায়গায় ইঞ্জিন বিকল হলে অন্যান্য ট্রেন প্রায়ই আটকা পড়ে। যাত্রীবাহী ট্রেনের পাশাপাশি মালবাহী ট্রেনেরও ইঞ্জিন বিকল হয়।

    ২৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় চট্টগ্রামগামী বিরতিহীন সুরবান এক্সপ্রেস ট্রেনটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার ইমামবাড়িতে হঠাৎ থেমে যায়। ওই দিন  ইঞ্জিন মেরামত করতে দেড় ঘণ্টা সময় ব্যয় হয়। ২৮ জুলাই দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা থেকে সিলেটগামী পারাবত ট্রেনটি ফেঞ্চুগঞ্জের মাইজগাঁও স্টেশনে পৌঁছালে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। এতে সারাদেশের সঙ্গে সিলেটের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় পর ট্রেনটি সচল হওয়ায় যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছেছেন।

    রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী বোরহান উদ্দিন বলেন, অপর্যাপ্ত লোকবলের কারণে ইঞ্জিনগুলো নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ বা মেরামত করা যাচ্ছে না।এমন পরিস্থিতিতেও ইঞ্জিনে যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তারপরও বিভিন্ন কারণে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাচ্ছে।ইঞ্জিন বিকল হলে যত দ্রুত সম্ভব মেরামত করে তা চালু করার চেষ্টা করছি।কারণ ইঞ্জিন ফেইলিউরের সঙ্গে যাত্রীদের দুর্ভোগ জড়িত।’

    চট্টগ্রাম রেলওয়ের পাহাড়তলী ডিজেল লোকোমোটিভ ওয়ার্কশপের অপারেশন ম্যানেজার রাজীব দেবনাথ বলেন, ‘ইঞ্জিন রক্ষণাবেক্ষণ সাধারণত ডিজেল লোকোমোটিভ ওয়ার্কশপে করা হয়। কর্মশালায় প্রতি বছর ৩৬টি ইঞ্জিন রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তবে কোনো ইঞ্জিনে বড় ধরনের সমস্যা হলে তা মেরামতের জন্য এই ওয়ার্কশপে আনা হয়। নানা সমস্যার মধ্যেও আমরা কাজ করার চেষ্টা করি। পাহাড়তলী লোকোশেডে নিয়মিত ইঞ্জিনের সমস্যা অর্থাৎ ত্রুটি দেখা দেয়।

    মন্তব্য করুন