• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    আমিরাতে এক বছরে ৬২০ প্রবাসীর মৃত্যু।অনেক মৃতদেহ ফেরত আসে, কিছু মরুর বালুতে সমাধি হয়

    জীবিকার তাগিদে বিদেশে শ্রম বিক্রি করতে ছুটছে বাংলাদেশিরা। তারা দিনরাত কাজ করে মরুভূমির উত্তপ্ত তাপমাত্রায় আয় রোজগার এবং পরিবারের সুস্থতা ফিরিয়ে আনতে। কেউ কেউ সোনার হরিণ স্পর্শ করতে পারলেও কেউ কেউ অধরা থেকে যায়।

    তাদের কেউ কেউ সফলতা বা ব্যর্থতার গল্প নিয়ে জীবিত ফিরে এসেছেন। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, কেউ কফিনে ফিরে এসেছেন। কারো বা মরুভূমির উত্তপ্ত বালিতে শেষ দাফন হয়। এ কারণেই দুবাইয়ের ঘাসিস, সোনাপুর, আল কোজ বা আবুধাবির বনেস, আল বাতেন বা আল আইনের আল ফোহরের মতো পাবলিক কবরস্থান প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে খুবই পরিচিত জায়গা। জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হওয়ায়, স্থানীয়দের পাশাপাশি অন্যান্য দেশের লোকদের কবর দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। স্থানীয় নিয়ম অনুযায়ী গত এক বছরে এসব কবরস্থানে ৬৯ জন বাংলাদেশিকে দাফন করা হয়েছে।

    জানা গেছে, আগস্টে দেশে ৫ প্রবাসী বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। আজমান প্রবাসী কামাল উদ্দিন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। শারজাহ প্রবাসী আলী হায়দার বাবু, দুবাই প্রবাসী সৈয়দ মুহাম্মদ বেলাল ও আবুধাবি প্রবাসী আলী হোসেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। খায়রুল বাশার রানা নামে আজমানের এক বাসিন্দা আত্মহত্যা করেছেন। যাদের বয়স ৩৬ থেকে ৫২ বছরের মধ্যে। তাদের কয়েকজনের মরদেহ দেশে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।

    অন্যদিকে মৌলভীবাজারের আকুল মিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শাহিনুর আক্তার ও চট্টগ্রামের কুতুব উদ্দিনের মরদেহ আবুধাবিতে শেষ দাফন করা হয়। আর আবুল বশির, লায়লা বেগম ও আরিফুল ইসলামের মরদেহ দুবাইয়ে দাফন করা হয়েছে।

    বিএমইটির পরিসংখ্যান বলছে, গত ৪৬ বছরে ২৪ লাখ ১ হাজার ৮২৯ জন কর্মী সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেছেন। শুধু এ বছর আমিরাতে যাওয়া শ্রমিকের সংখ্যা ৭০ হাজার ২০৩ জন।

    বর্তমানে দেশটির দুটি বাংলাদেশ মিশন বলছে, আমিরাতে বৈধভাবে কর্মরত বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। পরিসংখ্যানে কমবেশি হলেও এ সময়ে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। অন্যদিকে মৃত প্রবাসীদের তালিকাও কম নয়।

    বাংলাদেশ মিশন সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রতি বছর গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ বাংলাদেশি বিভিন্নভাবে মারা যায়। গত দশ বছরে দেশে গড়ে অন্তত পাঁচ হাজার শ্রমিক মারা গেছেন। শুধু গত এক বছরে দেশে বিভিন্নভাবে ৬২০ বাংলাদেশি মারা গেছেন। এর মধ্যে ৫৫১ জনের লাশ দেশে ফিরেছে এবং ৬৯ জন প্রবাসীকে স্থানীয়ভাবে দাফন করা হয়েছে।

    বাংলাদেশ মিশন অনুসারে, আবুধাবি দূতাবাস গত এক বছরে ২০২ মৃত প্রবাসীকে এনওসি (অনাপত্তি পত্র) জারি করেছে। দেশে ফিরেছে ১৮৩টি মৃতদেহ। এর মধ্যে ১৯ জনের মরদেহ সরকারি খরচে দেশে গেছে। স্থানীয়ভাবে ১৯ জনকে দাফন করা হয়েছে। দুবাই ও উত্তর আমিরাত বাংলাদেশ কনস্যুলেট ৪১৮ জনকে এনওসি দিয়েছে। দেশে ফিরেছে ৩৬৮টি লাশ। স্থানীয়ভাবে ৫০ প্রবাসীর লাশ দাফন করা হয়।

    আবুধাবি দূতাবাস ও দুবাই বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কর্মকর্তারা জানান, কোনো প্রবাসী মারা গেলে মিশনের মাধ্যমে মরদেহ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে সরকারি সহায়তার পাশাপাশি সিআইপিসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সহায়তা নেওয়া হয়। পরিবার অনুমতি দিলে কিছু লাশ স্থানীয়ভাবে দাফন করা হয়।

    এছাড়া দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে স্বজনরা মামলা লড়লে ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ মিশন প্রবাসীদের পক্ষে লড়াই করে। প্রাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রবাসীর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। গত এক বছরে প্রায় ২৪ কোটি টাকার মামলা লড়ে ৩৬ জন নিহত প্রবাসীর ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়েছে। দুবাই ও নর্দান এমিরেটস বাংলাদেশ কনস্যুলেট ২২ জনের মামলা নিষ্পত্তি করে ১৫.৫ কোটি টাকা এবং আবুধাবি দূতাবাস ১৪ জনের মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা আদায় করেছে।

    মন্তব্য করুন