আলজাজিরার বিশ্লেষণ।ইমরান কি জেলে যাচ্ছেন?
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) চেয়ারম্যান ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় দেশে রাজনৈতিক উত্তেজনার আরেকটি মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। একটি জনসমাবেশে ‘অভিযোগমূলক’ মন্তব্য করার জন্য পুলিশ তাকে সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ আইনে মামলা করেছে।
মামলার কারণে ইমরানের সামনে কী হচ্ছে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। কিন্তু ইমরানকে জেল খাটতে হয় কি না- সেটাই এখন দেখার বিষয়।
সিন্ধু হাইকোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি শেখ উসমানি বলেছেন, ইমরান খানের ছয় মাসের কারাদণ্ড হতে পারে। তিনি আরও বলেন, এই মামলায় ইমরান দোষী সাব্যস্ত হলে আগামী পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অযোগ্য ঘোষণা করা হবে।
ইমরান মামলার বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেননি। সোমবার ইসলামাবাদ হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন আদালত। এদিন রাজধানীর এই আদালতে হাজিরা দিতে পারেন তিনি।
পিটিআই চেয়ারম্যানের চিফ অফ স্টাফ শাহবাজ গিলকে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নির্যাতনের বিরুদ্ধে গত শনিবার সন্ধ্যায় ইসলামাবাদে একটি প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে দলটি। সমাবেশে তার বক্তৃতায়, ইমরান রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের “হুমকি” দেওয়ার অভিযোগ করেছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
সমাবেশে ইমরান বলেন, ‘পুলিশ হেফাজতে গিলকে নির্যাতন করেছে। আমি ইসলামাবাদ পুলিশকে জিজ্ঞেস করেছিলাম বল, তুমি গিলের সঙ্গে কী করেছ? আমাকে বলা হয়েছিল, আমরা কিছুই করিনি।’ আমরা আদেশ মানতে বাধ্য; ইমরান ইসলামাবাদ পুলিশ তার মন্তব্যের নিন্দা করেছে। কেউ পুলিশকে হুমকি দিলে ও মিথ্যা অভিযোগ করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তারা।
গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ বলেছেন, ‘উস্কানিমূলক বক্তব্য’ দেওয়ার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করার বিকল্প খতিয়ে দেখছে সরকার। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাতেই পুলিশ তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দেয়।
ম্যাজিস্ট্রেট আলী জাভেদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে ইমরানের বিরুদ্ধে জবানবন্দি দেয় পুলিশ। শনিবারের ওই সমাবেশে তিনি ছিলেন বলে দাবি করেন। জাভেদ বলেন, তিনি ইমরান খানকে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এবং একজন বিচারকের সমালোচনা করতেও শুনেছেন।
নতুন অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলে ইমরানকে কয়েক বছরের জেল হতে পারে। তার বিরুদ্ধে পুলিশ কর্মকর্তা ও বিচারকদের হুমকি দেওয়ার জন্য দেশদ্রোহ আইনে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আইনের ধারাবাহিকতায় এই আইন প্রণীত হয়েছে।
ইমরান খান গত এপ্রিলে সংসদে অনাস্থা প্রস্তাবে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হন। এরপর থেকে তিনি জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে একের পর এক সমাবেশ করে আসছেন। এসব সমাবেশে ইমরান তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, পুলিশ, বিশেষ করে তথাকথিত ‘নিরপেক্ষ’দের সম্পর্কে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন।
ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ হায়দার রসুলের মতে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির হতে হবে। নিছক যোগ্যতার (আইনি গ্রহণযোগ্যতা) ভিত্তিতে মামলা খারিজ করা যাবে না। তাকে আদালতে হাজির হতে হবে, জামিনের মুচলেকা জমা দিতে হবে। তার আরও কয়েকদিন অতিরিক্ত জামিন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আদালত জামিনের আবেদন নাকচ করলে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেফতার হতে পারে ইমরান। ইমরানের আইনজীবী ফয়সাল ফরিদ চৌধুরী বলেন, অবিলম্বে ওই বক্তব্য খারিজ করা হবে। কারণ, এটা সুপ্রিম কোর্টের আগের নির্দেশ
বিপুল সংখ্যক মানুষ ইমরান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাই তাকে গ্রেফতার করলে দেশে অনিশ্চয়তা ও অস্থিতিশীলতা বাড়বে, যা পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেবে।