নতুন অফিস শিডিউলের প্রথম দিনেই সড়কে ভোগান্তি
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে পরিবর্তিত অফিস সূচির প্রথম দিনেই রাজধানীর সড়কে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। বুধবার সকালে প্রায় প্রতিটি বাসেই যাত্রীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। অনেককে দীর্ঘক্ষণ বাসের জন্য অপেক্ষা করতেও দেখা যায়। দেখা গেছে, নতুন সময়ে অফিস ধরতে প্রাইভেটকার, স্টাফ বাস ও মোটরসাইকেলে করে অফিসে যাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর আগে সকাল ৮টার পর সড়কে যানজট দেখা যায়। তবে অফিসের নতুন সময়সূচির প্রথম দিনে আজ সকাল ৭টার দিকে যানজট দেখা গেছে।
মগবাজার মোড়ের কাছে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সহকারী কমিশনার রেফাতুল ইসলাম বলেন, অফিসের সময়সূচি সামনে আনায় এরই মধ্যে যানজট শুরু হয়েছে। অন্যান্য দিনের তুলনায় যানবাহনের চাপ কিছুটা বেশি বলে মনে হচ্ছে। এ অবস্থা মাথায় রেখে ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি নিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। আজ সকাল ৬টা থেকে আধা ঘণ্টা এগিয়ে ট্রাফিক সদস্যরা সড়কে কাজ করছেন। একইভাবে তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারাও সকাল সাড়ে ৭টার পরিবর্তে আধা ঘণ্টা আগে কাজ করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, মগবাজার-সাতরাস্তা মহাসড়কের দুই পাশে তীব্র যানজট রয়েছে। গাড়ি ধীর গতিতে চলছে। সাতরাস্তা থেকে মহাখালীমুখী সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মিন্টো রোড সার্কেল থেকে ডিএমপি সদর দফতরের সামনের রাস্তা দিয়ে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত ভারী যানজট দেখা যায়। সকালে অফিস ও স্কুল খোলার সময় এই যানজট বেইলি রোডসহ আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল মোড়ে কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট জাকির হোসেন জানান, সকাল ৭টা থেকে ক্লাস শুরু হলেও আজ সকাল সাড়ে ৬টা থেকে এ এলাকায় যানবাহনের চাপ ছিল। সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত একই অবস্থা ছিল। এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে প্রথম শিফট শেষে আবার পরের শিফটের শুরুতে চাপ বাড়তে থাকে।
আজ সকালে সড়কে চলাচলকারী প্রায় প্রতিটি বাসেই যাত্রীরা দাঁড়িয়ে ছিলেন। বাসে নারীদেরও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। অফিসগামী যাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। নির্দিষ্ট গন্তব্যে বাস পেতেও সমস্যায় পড়তে হয়েছে অনেককে।
এদিকে আজ থেকে সকাল ৮টায় আদালতও খোলে। ফলে আইন পেশাও সকালে বেরিয়ে পড়ে। আইনজীবী আকাশ সাহা বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। তবে অফিস সময় সামনে আনার আগে সড়কের দুর্ভোগের কথা ভাবা উচিত ছিল কর্তৃপক্ষের। আমি ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছি। বাস নেই।
প্রসঙ্গত, আজ থেকে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস সকাল আটটা থেকে শুরু হয়েছে। নতুন সময়সূচিতে এই অফিস খোলা থাকবে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। সপ্তাহান্তে শুক্র ও শনিবার থাকবে। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে ক্ষমতা বাঁচাতে অফিসের নতুন সময়সূচির সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। বুধবার থেকে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত অফিস খোলা থাকবে বলে জানান তিনি। সব সরকারি অফিসে কোথাও কোনো পর্দা টাঙানো যাবে না বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এয়ার কুলার যতটা সম্ভব কম ব্যবহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে দুটি সুবিধা হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। একটি হলো বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের পাশাপাশি যানজটও কমবে। তিনি বলেন, সারাদেশে আমন সেচ নিশ্চিত করতে মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত ১২ থেকে ১৫ দিন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। যাতে সেচ দিতে কোনো অসুবিধা না হয়। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে বলেও ইঙ্গিত দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।