• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    চার্জশিটে আসামি হচ্ছেন মামা-ভাগ্নে-ভাতিজা

    রাজধানীর মতিঝিল থানার সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যা মামলার তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই চার্জশিট দাখিল করবে পুলিশ। আলোচিত এই মামলার তদন্তে বেশ কিছু নতুন বিষয় সামনে আসছে। কিলিং মিশন সফল করার আগে দেশে-বিদেশে অবস্থানরত বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দিয়ে ছক চূড়ান্ত করে। সোহেল শাহরিয়ার এই সভার আয়োজন করেন। তিনি প্রথমে বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানকে ফোন করেন। এরপর ভিডিও কনফারেন্সে মুসাকে যুক্ত করেন আরেক পলাতক সন্ত্রাসী স্বাধীনতা মানিক ও সুমন শিকদার। মামলার প্রধান আসামি জিসান ও স্বাধীনতা মানিক। এ ছাড়া মামলার চার্জশিটে আসামির তালিকায় রয়েছেন মামা-ভাগ্নে ও ভাতিজা। এই হত্যাকাণ্ডে সন্ত্রাসী মুসার ভাগ্নে ইয়াসির আরাফাত সৈকত ও ভাগ্নে সেকান্দার সিকদার আকাশও জড়িত ছিল। তারা মুসা হত্যার সাথে জড়িত ছিল। এ ছাড়া আরও অন্তত ২০ জনকে আসামি করা হবে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

    ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মতিঝিল বিভাগের ডিসি রিফাত রহমান শামীম জানান, মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বিদেশে পলাতক দুই সন্ত্রাসী প্রধান আসামি হবে। কেন, কী কারণে, কারা এই কিলিং মিশনে ছিলেন, সব তথ্য পেয়েছেন তাঁরা। সন্ত্রাসীরা টিপুকে দেখাতে চেয়েছিল যে তাদের শক্তি কম নয়।

    ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, তদন্তের শুরুতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধারণা করছে হত্যাকাণ্ডে অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ এই কিলিং মিশনের শুটার ছিল মাত্র একজন। তার নাম মাসুম মোহাম্মদ আকাশ। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, আকাশ একাই দুটি অস্ত্র ব্যবহার করে। মিশনটি সম্পূর্ণ করতে তিনি দুটি অস্ত্র নিয়েছিলেন।

    টিপু হত্যার সাথে কারা জড়িত থাকতে পারে তার প্রথম ক্লু আসে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন থেকে। ঘটনার আগে মুসার ব্যবহৃত একটি মোবাইল নম্বরে বিশ্বস্ত এক ব্যক্তি ১০ হাজার টাকা পাঠিয়েছিলেন। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর ভিত্তিতে পুলিশ ওই ব্যক্তিকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এরপর বন্দুকধারীসহ তিনজনের বিষয়ে প্রাথমিক তথ্য পায় পুলিশ। এর ভিত্তিতে ডিবি তদন্ত শুরু করলে সবকিছু বেরিয়ে আসে।

    তদন্তে জানা যায়, মতিঝিল ও শাহজাহানপুর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে টিপুর খারাপ সম্পর্ক ছিল। তার কারণে সন্ত্রাসীদের অনেক অবৈধ আয়ের ধারা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে জিসান ও স্বাধীনতা মানিক টিপুকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করে। এতে তারা মুসাকে ব্যবহার করে। কারণ টিপুর উপর মুসার রাগ ছিল। ২০১৬ সালে খুন হন রিজভী হাসান ওরফে ‘বোচা বাবু’। ওই মামলার অন্যতম আসামি মুসা। বোচা বাবুর বাবার সাথে দরকষাকষি করে বেশ কয়েকবার মামলা থেকে পালাতে চেয়েছিল মুসা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। তিনি বিশ্বাস করতেন, টিপুর কারণে ওই মামলা থেকে রেহাই নেই। বাবুর বাবার সাথে টিপুরের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব। টিপু মুসাকে ছাড় না দেওয়ার জন্য চাপ দেন। জিসান ও স্বাধীনতা মানিক বাবু হত্যাকে ঘিরে এই দ্বন্দ্বের ভালো ব্যবহার করেন। ঘটনার কয়েক মাস আগে, তারা মুসাকে পুরো বিষয়টি সমন্বয় করার দায়িত্ব দেয়। মুসা তখন এই মিশনকে সফল করার জন্য মোল্লা শামীমকে নিয়োগ দেয়। হত্যা মিশনে ব্যবহার করার জন্য শামীমকে একটি মোটরসাইকেল কিনে দেয় মুসা।

    তদন্তে জানা যায়, হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার পর খুনিরা তিনবার হত্যার প্রস্তুতি নিলেও সফল হয়নি। ঘটনার কয়েকদিন আগে টিপুর চোখে অস্ত্রোপচার করা হয়। এ কারণে কয়েকদিন বাইরে বের হননি তিনি। তাই গুপ্তহত্যা অভিযানের তারিখ পিছিয়ে যেতে থাকে। টিপুকে কিভাবে সরানো যায় তা নিশ্চিত করতে বেশ কয়েকবার দেশ-বিদেশের সন্ত্রাসীরা ভিডিও কনফারেন্স করেছে।

    এ মামলায় এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যাদের গ্রেপ্তার করেছে তাদের মধ্যে মাসুম মোহাম্মদ আকাশও রয়েছেন। তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। সরাসরি শুটিংয়ের কথা স্বীকার করেছেন। তার জবানবন্দিতে জিসান, মানিক, মুসা, শামীমসহ অন্যদের জড়িত থাকার কথা উঠে আসে।

    কাদের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে: নাসির উদ্দিন ওরফে কিলার নাসির, ওমর ফারুক, মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্যা পলাশ, মোঃ আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ, আবুল হোসেন মোহাম্মদ আরফান উল্লাহ ইমাম খান ওরফে দামাল, নাসির উদ্দিন মানিক মারুফ খান, মশিউর রহমান ওরফে মারুফ খান, মো. ইয়াসির আরাফাত সৈকত, সেকান্দার সিকদার আকাশ, হাফিজুল ইসলাম, ইশতিয়াক আহমেদ জিতু, ইমরান হোসেন জিতু, রকিবুর রহমান, মাহবুবুর রহমান, জুবের আলম খান রবিন ওরফে রেলওয়ে রবিন, আরিফুর রহমান সোহেল ওরফে ঘটক সোহেল, খায়রুল ইসলাম, সোহেল শাহরিয়ার, মারুফ রেজা প্রমুখ। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। টিপু হত্যার পর ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের কুখ্যাত সন্ত্রাসী সুমন শিকদার মুসার নাম সামনে আসে। তদন্তে জানা যায়, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র ও খুনি ঠিক করে দিয়েছে। হত্যাকাণ্ডের আগে মুসা ১২ মার্চ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ত্যাগ করে। সেখানে তিনি জিসানের কাছে ছিলেন। দুবাইয়ে থাকার পর তিনি ওমান চলে যান।

    মন্তব্য করুন