বিবিধ

সকালে তোলা  পেয়ারা বিকেলে ঢাকায়

পিরোজপুরের নেছারাবাদের (স্বরূপকাঠি) আরতদার আব্দুল হক ১৩ জুলাই সকালে ঢাকায় পেয়ারা ভর্তি ট্রাক পাঠান। ট্রাকটি দুপুর ১২টার আগে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে পৌঁছায়। ঢাকার আড়তদারদের মাধ্যমে বিকেলে তা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পৌঁছে যায়। সেদিন সেই তাজা পেয়ারার স্বাদ নিতে পেরেছিলেন রাজধানীর বাসিন্দারা।

পদ্মা সেতুর সুবাদে আবদুল হকের মতো বহু বিখ্যাত ব্যক্তির পেয়ারার ট্রাক প্রতিদিন দুপুরের আগেই ঢাকা শহরে পৌঁছে যাচ্ছে। গত মৌসুম পর্যন্ত এখানকার পেয়ারা বাগান থেকে তোলার পরদিন রাজধানীতে পৌঁছেছিল।

পিরোজপুরের নেছারাবাদ ও ঝালকাঠি সদর উপজেলার পেয়ারা চাষীরা পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলে কৃষিপণ্যের প্রথম লাভবান হচ্ছেন। এই দুটি এলাকা পেয়ারার রাজ্য হিসেবে সারা দেশে পরিচিত। এখানকার আঁকাবাঁকা খালের দুই পাশে হাজার হাজার একর পেয়ারার বাগান রয়েছে।

কৃষকরা জানান, এসব বাগান দুই শতাধিক বছরের ঐতিহ্য। তাদের তথ্য অনুযায়ী, সবে পেয়ারার মৌসুম শুরু হয়েছে। পেয়ারা বিক্রি ছাড়াও বরাবরের মতোই দেশ-বিদেশের পর্যটকরা পেয়ারা বাগান পরিদর্শন করতে শুরু করেছেন। ফলে আগামী তিন মাস পেয়ারার মৌসুমে এখানকার অর্থনীতি ব্যাপকভাবে চাঙ্গা হবে।

নেছারাবাদের মাহমুদকাঠি গ্রামের বাসিন্দা ৬৫ বছর বয়সী আব্দুল হক বলেন, স্বাধীনতার পর ১৫-১৬ বছর বয়স থেকে তিনি পেয়ারা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এমনিতেই তার ব্যবসার বয়স অর্ধশতক পেরিয়েছে। তিনি পাইকারি দরে ফল কিনে ঢাকায় পাঠান।

তিনি বলেন, ৬০-৭০ দশকে ঢাকায় পেয়ারা পাঠানো হতো লঞ্চে। আশির দশকে ঝালকাঠি থেকে স্টিমারে পেয়ারা পরিবহন করা হতো। নব্বইয়ের দশকে বানারীপাড়ার জম্বুদ্বীপ থেকে প্রতিদিন দুই থেকে চারটি পিকআপে পেয়ারা ঢাকায় পাঠানো শুরু হয়। পরে ২০১৭ সালে মিনিট্রাক এবং ২০১৯  থেকে বড় ট্রাক ব্যবহার করা শুরু হয়।

এখানকার ব্যবসায়ীরা জানান, লঞ্চ-ট্রাক যে পথেই পাঠানো হোক না কেন একদিন পরেই পেয়ারা পৌঁছে যায় ঢাকার ক্রেতাদের কাছে। পচনশীল পণ্য হওয়ায় এ সময় পেয়ারার রং ও স্বাদ নষ্ট হয়ে যেত। অর্ধেক পেয়ারা পচে গেছে। কৃষকরা ন্যায্য দাম পাননি। পদ্মা সেতুর সুবাদে সকালে গাছ থেকে সংগ্রহ করা পেয়ারা দুপুরের আগেই ঢাকায় পৌঁছে যাচ্ছে। রং ও স্বাদ দুটোই অটুট থাকে।

ভিমরুলীর কৃষক সুদেব হালদার জানান, তিনি ৫০ একর জমিতে পেয়ারা আবাদ করেছেন। পুরো ফলন ঢাকায় পাঠাবে। প্রতি কেজি ২০ টাকা দাম পেলে তিনি খুশি।

আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়নের কাতুরাকাঠি গ্রামের প্রবীণ কৃষক বঙ্কিম চন্দ্র মন্ডল জানান, প্রায় দুইশ বছর আগে ব্রাহ্মণকাঠী গ্রামের কালীচরণ মজুমদার এই এলাকায় প্রথম পেয়ারা চাষ করেন। ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে আটঘর-কুরিয়ানা ও জলবাড়ী ইউনিয়নের ২২টি গ্রামে ৮০০ হেক্টর পেয়ারার বাগান রয়েছে। ঝালকাঠি সদর উপজেলার কীর্তিপাশা ও বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার গাওয়া ইউনিয়নেও পেয়ারার চাষ হয়।

ঝালকাঠি সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুলতানা আফরোজ জানান, তার এলাকায় ১২০ হেক্টর পেয়ারা বাগান রয়েছে। এ বছর ফলনের লক্ষ্যমাত্রা প্রতি হেক্টরে ১০ টন।

আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিঠুন হালদার বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এখন পর্যন্ত বাজারজাতকরণ ভালো ছিল না। ফলে পেয়ারার ন্যায্য দাম পাননি কৃষকরা। পদ্মা সেতু কৃষকদের সেই দুঃখ থেকে মুক্তি দিয়েছে।

মন্তব্য করুন