জাতীয়

বানভাসি মানুষের মধ্যে ঈদের আনন্দ নেই

ঝিনাইগাতী উপজেলার সদর ইউনিয়নের মহর্ষি নদীর তীরবর্তী বানভাসি মানুষের ঈদের আনন্দ নেই। বন্যায় রামেরকুড়া ও খাইলকুড়া গ্রামের শতাধিক পরিবার চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঁধ ভেঙে ২০-২৫টি ঘরবাড়ি ভেসে গেছে।

অনেক বাড়ির অস্তিত্ব নেই। অনেক ব্যবসায়ী মুরগির খামার ও পুকুরে মাছ হারিয়েছে। এখনও অনেকে জমি ছেড়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন। খুঁটি ভেঙ্গে প্রায় এক মাস ধরে এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।

রোববার পবিত্র ঈদুল আজহা। অসহায় মানুষগুলো এবারের ঈদ কীভাবে উদযাপন করবে তা খতিয়ে দেখা হয়েছে দুই গ্রামে। দেখা গেছে শত শত মানুষ অমানবিক জীবন যাপন করছে। কেউ কেউ খোলা জায়গায় বসবাস করছেন।

কেউ আবার প্রতিবেশীর বাড়িতে রাত কাটাচ্ছেন। ঘরে খাবার নেই। ঈদের আনন্দের কথা তারা ভাবতেও পারে না। ঈদে এসব মানুষের জন্য কিছু হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে নীরব প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা। তাদের ভাষ্য, ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। আর কিছু করার নেই।

খৈলকুড়া গ্রামের স্বামীহারা বাতাসী বেগমের (৪০) বাড়ি ধসে পড়েছে। ভাঙ্গা গোলাঘরে বসবাস করছেন তিনি। পাশেই থাকে তার দুই সন্তান। ঈদের আনন্দ তার কাছে অমূল্য। বললেন, ‘আমার মতো হতভাগা এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই। মাটি কাটতাম। কোন কাজ নেই। হাতে ত্বহা (টাকা) নেই। আবার আমগর ঈদ! ‘

বন্যায় রামেরকুড়া গ্রামের আবদুস সুবাহানের (৬৫) বাড়ি ভেঙ্গে গেছে। আজ অন্য বাড়িতে রাত কাটাচ্ছেন। ঈদ নিয়ে তার ভাবনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাড়ি নেই। মন যেখানে চায় সেখানে পড়ে যাই। ঈদে কি করবো। ঈদ বড় মানুষের। ‘

রামেরকুড়ায় জয়নালের বাড়ি বন্যায় ভেসে গেছে। তিনি তার বৃদ্ধা মা জরিনা বেগমকে তার খালার বাড়িতে রেখে ঢাকায় চলে আসেন। চোখ মুছতে মুছতে জরিনা বলেন, আমি অন্যের বাড়িতে থেকে ঈদের আনন্দ করব কী করে।

ঈদ উদযাপনে বানভাসি মানুষের জন্য কিছু করবেন কি না জানতে চাইলে ঝিনাইগাতী সদর ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন বলেন, সরকার ১০ কেজি চাল দিয়েছে। কেউ না পেলে ১০ কেজি চাল দেওয়া হবে।

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আল মাসুদ জানান, বন্যার সময় সবাইকে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে সবাইকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে উচ্ছেদের বিষয়ে তিনি বলেন, পানি কমে যাওয়ায় তাকে আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরে যেতে বলা হয়েছিল। চাপ প্রয়োগ করা হয়নি। ঈদে তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করব।

মন্তব্য করুন