• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    ৮ মিনিটে পদ্মা পাড়ি দিল প্রথম পরীক্ষামূলক ট্রেন

    ঢাকার কমলাপুর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুর পর্যন্ত প্রথম বিশেষ ট্রেন ছুটছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ০৭ মিনিটে ট্রেনটি কমলাপুর থেকে ছেড়ে যায়। ঠিক ১১টা ২৬ মিনিটে পদ্মা সেতুতে ট্রেন যাত্রা শুরু করে। ট্রেনে ৬.১৫ কিলোমিটার সেতু পার হতে ৮মিনিট সময় লাগে।

    পদ্মা সেতুর ট্রায়াল রান ট্রেনটি গতকাল বুধবার রাত ৯টা ৪০ মিনিটে ঈশ্বরদী থেকে রাজবাড়ী স্টেশনে পৌঁছায়। আটটি বগি ও একটি ইঞ্জিন নিয়ে ট্রেনটি গতকাল সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনের দিকে ছেড়ে কমলাপুর স্টেশনে থামে।

    এই ট্রেনে রয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।

    রেলমন্ত্রীর সঙ্গে ট্রায়াল ট্রেন যাত্রায় পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরীও উপস্থিত রয়েছেন। রেল ও প্রকল্পের কর্মকর্তারা পরীক্ষা যাত্রার সময় সবকিছু পর্যবেক্ষণ করবেন।

    ৩১ আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতির তথ্যে দেখা যায়, পুরো প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৮২ শতাংশ। এর মধ্যে মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের অগ্রগতি হয়েছে ৯৬ দশমিক ৫০ শতাংশ।

    ঢাকা-মাওয়া সেকশনের অগ্রগতি হয়েছে ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ। এদিকে ভাঙ্গা-যশো সেকশনের অগ্রগতি হয়েছে ৭৮ শতাংশ।

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ অক্টোবর পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। ওইদিন তিনি ট্রেনে পদ্মা সেতু পার হবেন। গত ১৭ আগস্ট রেললাইন স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে।

    দুদিন পর পুরো রুটে ট্র্যাক কার পরীক্ষা করা হয়। আজ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রায়াল রান শুরু হচ্ছে।

    প্রকল্প সূত্র জানায়, ঢাকার কমলাপুর থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চলাচলের বাকি কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় এই ট্রেন চলাচল শুরু হবে। সমস্ত প্রযুক্তিগত কাজ শেষ না হওয়ায় শুরুতে কোনও মধ্যবর্তী স্টেশনে ট্রেন থামার সুযোগ নেই। নতুন স্টেশন ভবন নির্মাণ ও পুরাতন স্টেশন ভবন পুনর্নির্মাণের কাজ প্রায় অর্ধেক বাকি।

    সম্প্রতি আলাপকালে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, উদ্বোধনের পর সব স্টেশনে ট্রেন থামানো সম্ভব হবে না। এখনো অনেক জায়গায় কাজ বাকি আছে। তবে মেট্রো রেলের মতো আমরা ট্রেন চালু করতে চাই। মধ্যম স্টেশনের কাজ চলবে। সেগুলো শেষে সব স্টেশনে ট্রেন থামবে।

    রাজধানীর কমলাপুর, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা, কেরানীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর, লাউহজং, পদ্মা সেতু, শরীয়তপুরের জাজিরা, মাদারীপুরের শিবচর, ফরিদপুরের ভাঙ্গা, নড়াইল, মাগুরা থেকে যশোর পর্যন্ত ২০টি স্টেশন থাকবে এই রেলপথে।

    প্রাথমিকভাবে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত কয়টি ট্রেন চলবে তা এখনো চূড়ান্ত করেনি রেলপথ মন্ত্রণালয়। তবে এই অংশটি চালু হলে এর সঙ্গে যুক্ত হবে আরও ছয়টি রেলপথ। প্রাথমিকভাবে এ রুটে রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা, যশোরের বেনাপোল, খুলনা, রাজশাহীর ট্রেন চালানোর চিন্তাভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে ভারতগামী মৈত্রী ট্রেনও ভবিষ্যতে এই রুট ব্যবহার করবে।

    রেলওয়ের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে ঢাকা থেকে যশোর থেকে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল জেলায় রেল যোগাযোগ করা হবে। একই সঙ্গে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে ভাঙ্গা থেকে পাচুরিয়া-রাজবাড়ী অংশ সরাসরি ঢাকার সঙ্গে যুক্ত হবে।

    রেলওয়ের পরিকল্পনা ছিল প্রকল্পের দ্বিতীয় অংশে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চালানোর। পরে ঢাকা-মাওয়া অংশ যুক্ত হয়। শেষে, ভাঙা-যাশো অংশ যোগ করা হয়। কিন্তু সময়মতো কাজ শেষ করতে না পারায় এবং সময়মতো সেতু না পাওয়ায় পরিকল্পনা পরিবর্তন করে রেল কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে পুরো প্রকল্পের মেয়াদ আগামী বছরের জুন পর্যন্ত রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেলপথ চালু করতে চান সংশ্লিষ্টরা। তবে প্রথম ধাপে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চালানো হবে।

    ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে সরকার দিচ্ছে ১৮ হাজার ২১০ কোটি ১১ লাখ টাকা। বাকি ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে চায়না এক্সিম ব্যাংক। প্রকল্পের সময়কাল ১ জানুয়ারী, ২০১৬ থেকে ৩০ জুন, ২০২৪ পর্যন্ত। ২৭ এপ্রিল ২০১৬-এ, প্রকল্পটি সরকার কর্তৃক প্রথম ট্র্যাক প্রকল্প হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়েছিল।

    এরই মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ দেড় বছর বাড়ানোর আলোচনা চলছে। প্রস্তাবটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। রেলওয়ে তার খসড়া নিয়ে কাজ করছে। খসড়া চূড়ান্ত হলে তা নিয়ে রেল মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে আলোচনা হবে। অনুমোদন পাওয়ার পর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে।